চিকিৎসার জন্য মানুষের দ্বারে ঘুরছে অসুস্থ বন্য হাতিটি!

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনে দীর্ঘদিন থেকে চিকিৎসার জন্য মানুষের দ্বারপ্রান্তে ঘুরছে একটি অসুস্থ বন্যহাতি। অসুস্থ হাতিটি বার বার মানুষের কাছে এসে জানান দিচ্ছে তাঁর চিকিৎসার খুব প্রয়োজন। তবে চিকিৎসা না পেয়ে হাতিটি আবার চলে যায় বনের কিছুটা গভীরে। এমনটাই ধারণা করছে স্থানীয়রা।

বনের পাশে বসবাসরত স্থানীয় একজন জানান, এই হাতিটি দীর্ঘ প্রায় ৪/৫ মাস থেকে অসুস্থ। হাতিটির শরীর রোগা হয়ে হাঁড় বেরিয়ে গেছে। এটা দেখে কিছুটা অনুভব করা যাচ্ছে সে মারাত্মক অসুস্থ। হাতিটির যা খায় তাই পায়খানা করে। আমরা প্রায় ২ মাস আগে হাতিটির অসুস্থতার খবর বন বিভাগ কে জানিয়েছি। বন বিভাগ হাতিটির বিষয়ে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কি-না জানি না।

জানা যায়, সিলেট বিভাগে একমাত্র বন লাঠিটিলা। যেখানে এখনও প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে জীবনের সাথে সংগ্রাম করে টিকে আছে চারটি মা বন্য হাতি। চিকিৎসা না পেলে মারা যাবে শেষ চার হাতির আরেকটি। এভাবেই লাঠিটিলা থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে হাতিগুলো।

বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বনে এমনিতেই পুরুষ হাতি নেই। ফলে হাতির বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে না। আর বংশ বৃদ্ধি না হলে এই বন থেকে হাতি এমনিতেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এই অসুস্থ মা হাতিটির দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা না করা গেলে নিশ্চয় হাতিটি মারা যাবে। আবাসস্থল সংকট সহ বিভিন্ন কারণে দিন দিন হাতি এমনিতেই কমে যাচ্ছে। হাতি রক্ষায় আমাদের আরো সোচ্চার হতে হবে। পাথারিয়া বনের লাঠিটিলা বিটের সুরমা বাঁশ মহাল অংশে বেশি সময় পার করতো এই হাতিগুলো। পাথারিয়ায় কয়েকটি বিট থাকা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত খাবার থাকায় লাঠিটিলায় বিচরণ করে সবচেয়ে বেশি। বনে হাতিগুলোর প্রধান খাদ্য মুলিবাঁশ।

লাঠিটিলা বন এলাকাটি ৫ হাজার ৬ শত ৩১ দশমিক ৩০ একর জায়গা নিয়ে বিস্তৃত এই অঞ্চল। এটি ইন্দো-বার্মা জীববৈচিত্র্য হটস্পটের একটি অংশ। এ বনটি রক্ষায় বন্যহাতি গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই হাতিগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেলে বনের বড় একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা তাহিদ রহমান জানান, হাতিটি দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ। হাতিটির শরীরে বেশ কয়েকটি ক্ষত দেখা গেছে, তাঁর শরীর শুকিয়ে হাড্ডি বের হয়ে গেছে। তাঁকে তাড়িয়ে বনে ফিরিয়ে দিলেও বার বার লোকালয়ে চলে আসে, হয়ত বনে খাদ্যের অভাব থাকায় বন ত্যাগ করে। এখন মানুষের বসত ঘরের কাছাকাছি এসে কলা গাছ খায় হাতিটি অসুস্থ থাকায় কেউ কিছু বলে না। বাড়ি ছোট শিশু ও মহিলা থাকায় তাঁরা ভয় পায় সেজন্য তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় বনে।

জুড়ী রেঞ্জ কর্মকর্তা নাজমুল হুসাইন বলেন, হাতিটি অসুস্থ আমরা জেনেছি। এটার চিকিৎসা দিতে হলে বন্যপ্রাণী বিভাগের সহায়তা প্রয়োজন। ট্রাংকুলায়জারের মাধ্যমে হাতিটির শরীরে ঔষধ পোষ করতে হবে, এই ব্যবস্থা আমাদের নেই। বন্যপ্রাণী বিভাগ চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো।

সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল সদর দপ্তর (মৌলভীবাজার) ড. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হাতি অসুস্থ আমরা খবর পেয়েছি। ইতি মধ্যে হাতিটিকে চিকিৎসার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাবস্থা হচ্ছে। এটাকে ট্রাংকুলায়জারের মাধ্যমে চিকিৎসা করতে হবে।

আরও সংবাদ