খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে: ফখরুল

 

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ‘আশঙ্কাজনক’ বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। আজকে বিনা চিকিৎসায় বন্দি অবস্থায় তিনি মৃত্যুশয্যায়।

রোববার (২৩ জুন) সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় এক দোয়া মাহফিলে ফখরুল এসব কথা বলেন।

বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনায় বিএনপির উদ্যোগে এ দোয়া মাহফিল হয়।

তিনি বলেন, আপনারা প্রাণখুলে বেগম জিয়ার জন্য দোয়া করুন। শুধু দোয়াই না, আমাদের পক্ষে যা কিছু করা সম্ভব তার সুচিকিৎসা করার জন্য, সেই চেষ্টাই আমাদের করতে হবে। বেগম জিয়ার জন্য যা করার দরকার সেটাই আমাদের করতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড বারবার বলেছেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) যে অসুখ, সেই অসুখের চিকিৎসা এখানে (বাংলাদেশে) করা সম্ভব নয়। তার যে মাল্টি ভ্যারিয়াস ডিজিজেস আছে তার চিকিৎসা করতে হলে উন্নত দেশের মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি হসপিটাল প্রয়োজন। চিকিৎসকরা বারবার এ কথাগুলো বিভিন্নভাবে বলেছেন। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সুশীল সমাজ বলেছে, এমনকি বিদেশি মিশনগুলো যারা এখানে (বাংলাদেশে) আছে তারাও বারবার বলেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বাইরে থেকে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা সবাই বলেছে। কিন্তু শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়াকে হত্যা করার উদ্দেশে, তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশে, তাকে কোনোভাবে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, হঠাৎ অসুস্থতার কারণে গত শুক্রবার গভীর রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অ্যাম্বুলেন্সে করে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিসাধীন। ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া ডায়াবেটিস, আর্থারাইটিস ছাড়াও হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনিসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়া দীর্ঘকাল ধরে কারারুদ্ধ রয়েছেন, আপনারা সবাই জানেন। শুধু এইটুকু বলতে চাই, সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় তাকে সাজা দিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য তাকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। তাকে বাসায় থাকার সুযোগ দেওয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি পুরোপুরি অবরুদ্ধ হয়ে আছেন, বন্দি আছেন। আমরা এও জানি যে, তিনি অবরুদ্ধ অবস্থায় কারাগার থেকেই অসুস্থ হয়েছেন। তার সেখানে কোনো চিকিৎসা হয়নি। তিনি বারবার কমপ্লেইন করেছেন কিন্তু সরকার তা শুনেনি, তার চিকিৎসাও দেয়নি। পরবর্তীকালে তাকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেখানেও তার কোনো সুচিকিৎসা হয়নি। বাসায় (গুলশানের ফিরোজা) আসার পরে তাকে শর্ত দেওয়া হয়েছে তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না, দেশেই চিকিৎসা নিতে হবে।

মির্জা ফখরুল আবেগ-আপ্লুতকণ্ঠে খালেদা জিয়ার জন্য নেতা-কর্মীদের দোয়া করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আসুন আমরা আজকে কায়মনোবাক্যে দোয়া করি, আল্লাহতায়ালা যেন আমাদের দোয়া শুনেন, আল্লাহতালা যেন তাকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন। আমরা যেন তার নেতৃত্বে আবার জেগে উঠতে পারি এবং এই যে দানব যারা আমাদের রাষ্ট্রের সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে তাকে যেন আমরা পরাজিত করতে পারি। আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের সেই শক্তি দেন- যাতে আমরা নিজের পায়ে নিজেরা দাঁড়াতে পারি।

দলের চেয়ারপারসনের আশু আরোগ্য কামনায় বিএনপি আজ ঢাকাসহ সকল মহানগর ও জেলায় দোয়া মাহফিল করছে।

দোয়া মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, জলবায়ু বিষয়ক সহ-সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদ্য সাবেক সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের সদ্য সাবেক সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, যুবদল নেতা মামুন হাসান, নুরুল ইসলাম নয়ন, গোলাম মাওলা শাহীন, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজীব আহসান, নাজমুল হাসান, জহির উদ্দিন তুহিন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

আরও সংবাদ