বিশ্বকাপ ফাইনালে মুখোমুখি আজ ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসর শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছে। ফাইনাল ম্যাচ দিয়ে মাসব্যাপী চলমান এই টুর্নামেন্টের পর্দা নামতে যাচ্ছে আজ। শিরোপা নির্ধারণী লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ভারত।

শনিবার (২৯ জুন) বার্বাডোজের ব্রিজটাউনে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে ম্যাচটি।

প্রথমবারের মতো আইসিসি বিশ্বকাপ ইভেন্টের ফাইনালে উঠেছে প্রোটিয়ারা। ফলে প্রথম বিশ্বকাপ ট্রফি জয়ের লক্ষ্য দক্ষিণ আফ্রিকার। অন্যদিকে, ২০০৭ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন দল ভারত। এবার দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তুলতে চায় ভারত।

এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে ২৬ বার মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এরমধ্যে ভারতের ১৪ ও দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ১১ ম্যাচে। ১টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মোট ৬বার মুখোমুখি হয়েছে দু’দল। এই মঞ্চেও জয়ের ক্ষেত্রে এগিয়ে ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকার ২ জয়ের বিপরীতে ভারতের জয় ৪টিতে। মুখোমুখি লড়াইয়ের ২০০৭, ২০১০, ২০১২ ও ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে ভারত এবং ২০০৯ ও ২০২২ সালের আসরে জিতেছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা।

এবারের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে ৪ ও সুপার এইটে ৩ ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু সেমিতে উঠলেও ঠিকই টেনশন ছিল প্রোটিয়াদের। কারণ ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে মোট সাতবার বিশ্বকাপের সেমি থেকে বিদায় নিতে হয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকাকে। এবার সেমির খড়া কাটিয়ে উঠতে পারে দলটি।

টুর্নামেন্টের প্রথম সেমিফাইনালে বোলারদের অসাধারন নৈপুণ্যে আফগানিস্তানকে ৯ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে প্রোটিয়ারা। দক্ষিণ আফ্রিকার তিন পেসার ও এক স্পিনারের তোপে প্রথমে ব্যাট হাতে নেমে মাত্র ৫৬ রানে গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান। ৫৭ রানের টার্গেট স্পর্শ করতে মাত্র ৮ দশমিক ৫ ওভার খরচ হয় প্রোটিয়াদের। গ্রুপ পর্ব ও সুপার এইটে প্রায় বেশিরভাগ ম্যাচে জয় পেতে কঠিন লড়াই করতে হয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকাকে। কিন্তু সেমিফাইনালে তেমনটা করতে হয় নি তাদের। সেমিফাইনালের এমন সহজ জয় ফাইনালের আগে বাড়তি আত্মবিশ্বাস যোগাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে।

কিন্তু সেমিফাইনালে তেমনটা করতে হয় নি তাদের। সেমিফাইনালের এমন সহজ জয় ফাইনালের আগে বাড়তি আত্মবিশ্বাস যোগাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ফাইনাল নিয়ে দলের অধিনায়ক আইডেন মার্করাম বলেন, ‘ফাইনালে খেলার সুযোগ পাওয়া বিশাল অর্জন। আমরা যখন বিশ্বকাপের জন্য আসি, শুধুমাত্র ফাইনালে খেলতে আসি নি। আমরা অন্য সব দলের মতো ফাইনাল জিততে এসেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাদা বলের দুই ফরম্যাটে দীর্ঘদিন ধরেই একসাথে খেলছে এই দলটি। ফাইনালে উঠতে পারাটা দারুণ। আমরা বিশ্বের যেকোন দলের সাথেই লড়াই করতে পারি ও শিরোপা জিততে পারি বলে আমরা বিশ্বাস করি। সেই সুযোগ এখন সামনে আসায় ভালো লাগছে।’ দক্ষিণ আফ্রিকার মতো এবারের বিশ্বকাপে অপরাজিত দল ভারতও। তবে গ্রুপ ও সুপার এইট পর্বে একটি জয় কম পেয়েছে টিম ইন্ডিয়া। কারন গ্রুপ পর্বে কানাডার বিপক্ষে ভারতের ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেস্তে যায়। তাই এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা ৮টি ও ভারত ৭টি ম্যাচে জিতেছে। যা এই দু’দলের বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ ম্যাচ জয়ের রেকর্ড। গ্রুপ পর্ব ও সুপার এইট মিলিয়ে দারুণ ক্রিকেট খেলেছে ভারত। ব্যাটার-বোলাররা নিজেদের সেরাটা দিয়েছে। দ্বিতীয় সেমিফাইনালেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও শতভাগ উজার করে দিয়েছে তারা। অধিনায়ক রোহিত শর্মার হাফ-সেঞ্চুরির সাথে সূর্যকুমার যাদবের ঝড়ো ইনিংস এবং দুই স্পিনার অক্ষর প্যাটেল ও কুলদীপ যাদবের ঘূর্ণিতে ইংল্যান্ডকে ৬৮ রানে হারায় ভারত। তৃতীয়বারের মত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে ভারত।

এর আগে ২০০৭ ও ২০১৪ সালে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছিলো উপমহাদেশের দলটি। ২০০৭ সালে প্রথম বিশ্বকাপের শিরোপা জিতলেও, ২০১৪ সালের ফাইনালে হেরে যায় ভারত। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে শ্রীলংকার কাছে ৬ উইকেটে হেরেছিলো টিম ইন্ডিয়া। আর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথম বিশ্বকাপে টান-টান উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনালে পাকিস্তানকে ৫ রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো ভারত। ২০০৭ সালের সুখস্মৃতি বিশ্বকাপের নবম আসরে ফিরিয়ে আনতে চায় ভারত।

দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেন, ‘আমাদের সামনে ২০০৭ সালের সুখস্মৃতি ফিরিয়ে আনার সুর্বণ সুযোগ। ১৭ বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ট্রফি জিততে মুখিয়ে আছে দলের সবাই। ঐ আসরের দলে আমি ছিলাম। আশা করছি আবারও শিরোপা জয়ের উৎসবে মেতে উঠতে পারবো আমরা।’

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ফাইনাল নিয়ে রোহিত বলেন,‘দল হিসাবে আমাদের খুব শান্ত থাকতে হবে। কারণ, মাথা ঠা-া থাকলে ও চাপ না নিলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। ফাইনালে জিততে হলে ভাল ক্রিকেট খেলা ছাড়া অন্য কোন পথ নেই। আমরা এবার আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলছি। ফাইনালে একই পরিকল্পনায় খেলতে চাই।’

ফাইনালে উঠলেও, দলের সেরা ব্যাটার বিরাট কোহলির ফর্ম নিয়ে আবারও প্রশ্ন শুনতে হয়েছে রোহিতকে। কিন্তু কোহলির ফর্ম নিয়ে চিন্তা নেই ভারতের।

রোহিত বলেন,‘কোহলি কেমন ক্রিকেটার তা আমরা সবাই জানি। সবার ক্যারিয়ারেই খারাপ সময় আসে। আবার খারাপ সময় কেটে যায়। সে রানের জন্য মুখিয়ে আছে। ফাইনালেও সে ওপেন করবে। আমরা আশা করছি, ফাইনালে কোহলির ব্যাট কথা বলবে।’

ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে যারা

এক বিবৃতিতে আইসিসি জানিয়েছে, অন-ফিল্ড আম্পায়ার হিসেবে এবারের ফাইনালের গুরু দায়িত্ব পালন করবেন ইংল্যান্ডের রিচার্ড ইলিংওর্থ এবং নিউজিল্যান্ডের ক্রিস গ্যাফানি। এছাড়া তৃতীয় এবং চতুর্থ আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করবেন যথাক্রমে ইংল্যান্ডের রিচার্ড কেটেলব্রো ও অস্ট্রেলিয়ার রড টাকার।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা সরাসরি

ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা

রাত ৮টা ৩০ মিনিট

সরাসরি নাগরিক টিভি, স্টার স্পোর্টস ১ ও ২

আরও সংবাদ