জলবায়ু পরিবর্তন ও আমাদের করণীয়

সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বহুল আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। বলতে গেলে এটি একুশ শতকের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দিন দিন জলবায়ুর পরিবর্তন জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলায় তা আমাদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে গবেষণাও চলছে ব্যাপক হারে।

ভূ-পৃষ্ঠের কোনো স্থানের ২৫-৩০ বছরের আবহাওয়ার গড় অবস্থাকে ওই স্থানের জলবায়ু বলা হয়। এটি মূলত কোনো স্থানের দীর্ঘদিনের বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, রৌদ্রালোক ইত্যাদির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনকে নির্দেশ করে। প্রাকৃতিক (পৃথিবীর বিভিন্ন গতিশীল প্রক্রিয়া, সৌর বিকিরণের মাত্রা, অক্ষরেখার দিক পরিবর্তন, সূর্যের তুলনায় পৃথিবীর অবস্থান ইত্যাদি) নানা কারণে জলবায়ু স্বাভাবিকভাবে পরিবর্তন হলেও মূলত মানবসৃষ্ট (কলকারখানা, যানবাহন থেকে নির্গত গ্যাস, কয়লা পোড়ানো, ইটভাটার ধোঁয়া, গাছ কাটা ইত্যাদি) কারণেই জলবায়ু দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে।

বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন বাড়ছে। বায়ুতে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় তাপমাত্রা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। মানবসৃষ্ট এ গ্রিনহাউস গ্যাসের ফলে পৃথিবীর উষ্ণয়নকে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি অন্যতম কারণ মনে করা হয়। বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর এ পরিবর্তন পরিবেশ ও মানুষের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, দুই মেরুর বরফ গলার সঙ্গে সঙ্গে উচ্চতা বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের। সমুদ্রপৃষ্ঠের সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলে দেখা দিচ্ছে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও পাহাড়ধসের মতো দুর্যোগ।

দুর্যোগপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম ঝুঁকিতে রয়েছে। জার্মানভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা জার্মান ওয়াচ কর্তৃক প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচক ২০২১’ এর শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, জলবাযু পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব থেকে ভবিষ্যৎ প্রজš§কে সুস্থ সুন্দর পৃথিবী উপহার দিতে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। নিতে হবে কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ-

১) বৃক্ষ নিধন রোধ ও গাছ লাগানো: পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যে জিনিসটি তা হলো অক্সিজেন। আর গাছ থেকে আমরা সেটি অনায়াসেই পাই। বর্তমানে ক্রমবর্ধমানহারে গাছ কাটার উৎসব চলছে। ফলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। তাই আমাদের উচিত নিয়মিত গাছ লাগানো। বাড়ির চারদিকে, রাস্তার পাশে, রেললাইনের দুই ধারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গাছ লাগাতে হবে। বনাঞ্চল ধ্বংস করা যাবে না।

২) জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো: জীবাশ্ম জ্বালানি (কয়লা, তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস) এর ব্যবহার কমাতে হবে। এটি অত্যন্ত দূষণকারী যা কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং মিথেনের মতো গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করে, যা জলবায়ু পরিবর্তনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

৩) ইঞ্জিনচালিত গাড়ির ব্যবহার কমানো: যথাসম্ভব চেষ্টা করতে হবে ইঞ্জিনচালিত গাড়ির ব্যবহার কমানোর। কেননা তা থেকে প্রচুর কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস বের হয়, যা মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিকল্প হিসেবে বৈদ্যুতিক/ব্যাটারিচালিত গাড়ি, বাইসাইকেল ইত্যাদি ব্যবহার করা।

৪) রিসাইকেল করা: পরিবেশ রক্ষায় রাসায়নিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করা জিনিসকে যেখানে সেখানে না ফেলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা ও তা পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে তোলা।

৫) জনসচেতনতা সৃষ্টি: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ, প্রভাব ও করণীয় দিকগুলো নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত সভা, সেমিনার আয়োজন করতে হবে। সবার মাঝে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।

এভাবে জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে এবং সুন্দর পৃথিবী নির্মাণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে।

আরও সংবাদ