‘সরকার আমাদের পালতেছে, দেশের জন্য বুলেট খাইতে প্রস্তুত’
‘জনগণের ট্যাক্সের টাকায় সরকার আমাদের আজীবন পালতেছে। দেশের জন্য ও সীমান্ত রক্ষায় শত্রুপক্ষের বুলেট খাইতে এই শরীর সর্বদা প্রস্তুত আছে। বিজিবি ভয় পায় না। সীমান্ত রক্ষায় বিজিবির সাহসিকতা বারবার প্রমাণিত। অন্তত একটা বুলেট বুকে লাগিয়ে দেশের জন্য মরে যেতে আমরা কার্পণ্য করবো না।’ কথাগুলো বলেছেন বিয়ানীবাজার ব্যাটালিয়ান (৫২ বিজিবি) এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মোঃ মেহেদি হাসান (পিপিএম)।
রবিবার (৬ জানুয়ারি) জুড়ী উপজেলার ডাকটিলা বিওপিতে শতাধিক মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন মোঃ মেহেদি হাসান। এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্প্রতি উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধে গ্রেফতারের পর দেশের অভ্যন্তরে ইসকন সদস্যরা প্রতিবাদের নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালায়। ২৬ নভেম্বর (মঙ্গলবার) চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গনে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে পিটিয়ে হত্যা করে উগ্র ইসকন সদস্যরা।
ভারতের ইসকন সদস্যরাও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়। বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ অভিমুখে মিছিল নিয়ে বাংলাদেশ বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেয় তারা। ভারতীয় মিডিয়া ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন’-এর মিথ্যা গল্প সাজায়। সাংবাদিকতার নামে পরিকল্পিতভাবে দূর্গন্ধ ছড়ায় তারা। একের পর এক মিথ্যাচার দিয়ে বিশ্ব মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণের ঘৃণ্য খেলায় মেতে উঠে তারা। ভারতীয় উগ্রবাদী রাজনৈতিক দল বিজেপির নেতারা বিষবাষ্প ছড়ায়।
ভারতীয় ইসকন সদস্যদের বাঁধার মুখে জুড়ীর বটুলী সীমান্তের শুল্ক স্টেশন দিয়ে ২৯ নভেম্বর (শুক্রবার) আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। ৩ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) বটুলী সীমান্তের ওপারে ভারতীয়রা জড়ো হয়ে বাংলাদেশ বিরোধী স্লোগান দেয় ও বিক্ষোভ করে। ভারতীয়দের উস্কানি, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো ও ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচারের বিরূদ্ধে ৭ ডিসেম্বর (শনিবার) জুড়ীর সাধারণ ছাত্র-জনতার ব্যানারে বটুলী সীমান্তে সর্বধর্মীয় প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মূলত ডিসেম্বরের শুরু থেকে অন্তত ১৫ দিন জুড়ীর বটুলী সীমান্তে কড়া নজরদারিতে ছিল বিজিবি। বাংলাদেশের সীমান্ত সুরক্ষিত রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় তাদের। ৩ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) ভারতীয়রা বাংলাদেশ অভিমুখে মিছিল নিয়ে আসবে এমন তথ্য জেনে ফুলতলা কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার উসিম উদ্দিন সকালেই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এর সাথে পতাকা বৈঠক করেন এবং শূন্যরেখায় কেউ যাতে প্রবেশ করতে না পারে এই মর্মে কড়া হুঁশিয়ারি দেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও এলাকাবাসীর সাথে দফায় দফায় মিটিং করে তারা।
বটুলী সীমান্তে সেই সময়কার দিনগুলোতে তখন চরম উত্তেজনা বিরাজ করছিল। যদিও দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আন্তরিকতায় ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। দুই দেশের সম্পর্ক আগের পরিস্থিতিতে ফিরে গেলে ১৮ দিন পর বটুলী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ১৫ ডিসেম্বর (রবিবার) আমদানি-রপ্তানিও ফের চালু হয়। পুরো পরিস্থিতি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে সামাল দেন বিয়ানীবাজার ব্যাটালিয়ান (৫২ বিজিবি) এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মোঃ মেহেদি হাসান (পিপিএম)।