রাজনগরে সরকারি খাদ্য গুদাম সংকট বোরোধান সংগ্রহ ব্যাহত : দালালদের দৌরাত্ম

রাজনগরে সরকারি খাদ্য গুদাম সংকটে কৃষকদের কাছ থেকে বোরো ধান সংগ্রহ ব্যাহত হচ্ছে। এতে বেকায়দায় পড়েছেন কৃষকেরা। অনেকটা নিরুপায় হয়ে ধান সংগ্রহ করতে লম্বা তারিখ দিয়ে ভূক্তভোগী কৃষকদের শান্তনা দিচ্ছেন খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ।

সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে না পারা কৃষকদের থেকে এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন ফরিয়া আর মধ্যসত্বভোগীরা। কৃষি জমি নেই এমন লোককে দেওয়া হয়েছে কৃষি কার্ড। প্রকৃতি কৃষক কৃষি কার্ড থেকে বঞ্চিত।

সূত্র জানায়, গত ২৪ এপ্রিল থেকে সরকারি খাদ্য গুদামের জন্য ধান সংগ্রহ শুরু করে এবং ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত ধান সংগ্রহ কার্যক্রম চলার কথা থাকলে গুদামে জায়গা না থাকায়, মে মাসেই নেওয়া হচ্ছে না কৃষকের ধান। এবছর কৃষকের এ্যাপসের মাধ্যমে কৃষকের কাছ থেকে ৯ শত ৫৯ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করার কথা খাদ্য গুদাম থেকে জানানো হয়েছিলো ১৪ শতাংশ আর্দ্রতা পূর্ণ ধান, কৃষি কার্ড ধারী কৃষকরা খাদ্য গুদামে বিক্রি করতে পারবেন। এবং কৃষকদের কাছ থেকে চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৪ শত ৪০ টাকা ধরে উপজেলা খাদ্য গুদামের জন্য ধান সংগ্রহ করা হবে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মিলিং চাল দিয়ে ভরে রাখা হয়েছে গুদামের অর্ধেক। বলা হয়েছিল এবছর ৯ শত ৫৯ মেট্রিক টন ধান কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে। কিন্তু বাস্তবে ৫ শত মেট্রিক টন ধান কৃষকের কাছ থেকে নেওয়া হবে কি না তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। কৃষকরা নির্ধারিত তারিখে শুকনো ধান নিয়ে গেলেও ১৪℅ আর্দ্রতা নেই বলে ফিরেয়ে দিচ্ছেন গুদামে দায়িত্বরত কর্মকর্তা । অপর দিকে খাদ্য গুদামের চত্বরে থাকা দালালের মধ্যস্ততায় একই ধান কৃষকদের কাছ থেকে নিচ্ছেন গুদামের কর্মকর্তারা। অভিযোগ রয়েছে কৃষি জমি নেই বা সামান্য জমি বর্গা চাষ করে কোন রকম চার-পাঁচ মাসের খোরাকি যোগান এমন শতাধিক ভূয়া কৃষকের কৃষি কার্ড দিয়ে একাধিক দালাল অভিনব কায়দায় সরকারী খাদ্য গুদামে ধান দিচ্ছেন।
এবছর কাউয়া দীঘি হাওরে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৩ শত ৫০ মেট্রিক টন। কিন্তু কাউয়া দীঘি হাওরে বিপুল পরিমানে উৎপাদিত ধান, কৃষকেরা সরকারি খাদ্য গুদামে বিক্রি না করতে পেরে, ৮ শত থেকে ৯ শত টাকা দরে ফরিয়া ও দালালদের কাছে বিক্রি করে লোকসান গুনছেন। অভিযোগ রয়েছে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষি অফিসারকে মেনেজ করে কৃষি জমি নেই এমন কৃষকের নামে শতাধিক কার্ড করে খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করছেন দালালরা। কোন ভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না দালালদের দৌরাত্ম। সর্বোপরি গুদাম সংকটকে পুঁজি করে সুবিধা নিচ্ছে ফরিয়া, দালাল আর মধ্যসত্বভোগীরা।
সারা বছর খাদ্যশস্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে কোন রকমে কার্যক্রম চালাতে পারলেও বৈশাখী মৌসুমে বোরো ধান সংগ্রহকালীন সময়ে গুদাম সংকটের বিষয়টি সামনে চলে আসে। উপজেলায় মাত্র ৫০০ মেট্রিক টন ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন ২ টি গুদাম রয়েছে। যার কারনে বিপুল পরিমানে উৎপাদিত বোরো ধান সংগ্রহ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ গুদাম গুলোর অপর পাশে গুদাম নির্মাণের পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। এখানে ৫শ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন আরো ২টি নতুন খাদ্যগুদাম নির্মাণ জরুরী হয়ে পড়েছে।

রাজনগর খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষকরা জানান, গুদাম কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছ থেকে ধান কিনতে লম্বা লম্বা তারিখ দিয়ে ঘুরাচ্ছেন। আমাদের ধানে চৌদ্দ পার্সেন্ট আর্দ্রতা থাকার পরেও সাড়ে চৌদ্দ পার্সেন্ট আর্দ্রতা রয়েছে বলে ধান রাখেননি। এতে আমরা নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। এ রকম লম্বা লম্বা তারিখের অভিযোগ এনে হতাশা প্রকাশ করেন অন্যান্য কৃষকেরাও।

এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য গুদামের প্রধান নিয়ন্ত্রক, ধীরাজ নন্দী চৌধুরীর এশিয়াবিডি২৪  বলেন, সারা বছর কোন রকমে খাদ্যশস্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে চালাতে পারলেও বোরো সংগ্রহ কালীন সময়ে অনেকটা বেকায় পড়তে হয়। নতুন আরো ২টি গুদাম হলে আর কোন সমস্যা থাকবে না। তিনি বলেন আমরা সিলেট আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও মৌলভীবাজার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে এবিষয়ে অবগত করেছি। এ পর্যন্ত ৪ শত মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। আর মাত্র কয়েকদিন সংগ্রহ করা যাবে। এরপর ধান রাখার জায়গার অভাবে সংগ্রহ কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরকারি গুদামে ধান দিতে দালালের সহযোগীতা নেওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে, তিনি তা অস্বীকার করেন। কৃষি জমি নেই এমন কৃষকের কার্ডের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, কার্ড দেওয়া দায়িত্বতো আমার নয়।
রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল আমীন বলেন, কৃষকদের কৃষি কার্ড গুলো আট -দশ বছর আগ থেকেই দেওয়া হয়েছে এখন কৃষকের কার্ড অনলাইন করা হচ্ছে, নতুন করে প্রকৃত কৃষকের খুঁজ খবর নিয়ে আপডেট করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা- আফরোজা হাবীব শাপলা রাজনগরে আরো দুইটি নতুন খাদ্যগুদাম নির্মাণের বিষয়ে সহমত পোষন করে তিনি বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রস্তাব পাঠানো হবে।

এশিয়াবিডি২৪/গৌছুজ্জামান

আরও সংবাদ