আমিরাতে ভিসা জটিলতা বিপাকে বাংলাদেশীরা

২০২৪ সালের জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার পর আরব আমিরাতের ভিসার সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে ভেবেছিলেন প্রবাসীরা কিন্তু বাস্তবতা উল্টো। ভিসা সমস্যার সমাধান হয়নি বরং ভিসা ট্রান্সফার, ফ্যামিলি ভিসা বন্ধ করে দেয় আমিরাত সরকার। প্রবাসীরা বলছেন এর জন্য দায়ী প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কূটনৈতিক ব্যর্থতা।

২০১২ সাল থেকে সাধারণ শ্রমিক ভিসা বন্ধ থাকার পর করোনা-পরবর্তী বিভিন্ন ক্যাটাগরি ভিত্তিক কিছু ভিসা প্রদান করা হলেও বর্তমানে নির্দিষ্ট ২/৩টি ক্যাটাগরিতে হাই-প্রফেশন ভিসা দিচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার। কোম্পানির মাধ্যমে এই ভিসা নিয়েও বৈধ হলেও কাজ অনেকেই করতে পারছেন না।

সম্প্রতি শুধুমাত্র ব্যবসায়ীদের জন্য ভিজিট ভিসা চালু আছে, যা ঢাকাস্থ আরব আমিরাত দূতাবাস থেকে ইস্যু হয়। এছাড়া আমিরাতের অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা কোম্পানি থেকে বাদ হয়ে ভিসা পরিবর্তন করতে না পেরে বাধ্য হয়ে পার্টনার ভিসায় বৈধ হচ্ছেন আবার অনেক প্রবাসী অবৈধ হচ্ছেন বা দেশে চলে যাচ্ছেন।

কেন ভিসা বন্ধ রয়েছে এমন তথ্য খুঁজতে গিয়ে কিছু সমস্যা সামনে এসেছে।

সমস্যার কারণ—
নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ ও ডকুমেন্ট জালিয়াতি
আমিরাতের পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে যে, কিছু বাংলাদেশি ভুয়া নথি, ভুয়া পেশা ও উদ্দেশ্য দিয়ে ভিসার জন্য আবেদন করে থাকেন। কিছু ক্ষেত্রে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগও এসেছে।

অসচেতন দালাল চক্র ও প্রতারণা
বাংলাদেশে দালাল চক্রের মাধ্যমে অনেকেই অবৈধভাবে ভিসা নিয়ে আরব আমিরাতে পাড়ি জমান, যারা সেখানে কাজ না পেয়ে অবৈধ হয়ে পড়েন। এতে করে আমিরাত সরকারের চোখে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।

বাধ্যতামূলক “সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স” জটিলতা
অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে আসা শ্রমিকদের জন্য সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়ায় আমিরাত কর্তৃপক্ষ আগ্রহ হারাচ্ছে।

রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক টানাপোড়েন
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কিছু কূটনৈতিক দূরত্ব বা চুক্তিগত অসংগতি থাকাও ভিসা বন্ধের অন্যতম কারণ হতে পারে।

ভিসা বন্ধের ফলে বাংলাদেশের রেমিট্যান্সের ওপর প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশি শ্রমিকের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও শ্রমিক ভিসা না পাওয়ায় ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কার শ্রমিকদের নিয়োগ দিচ্ছে আরব আমিরাতে বাংলাদেশি বিভিন্ন কোম্পানি।

ভিসা বন্ধে বাংলাদেশের ওপর প্রভাব—
রেমিট্যান্সে ধস
আমিরাত থেকে আসা রেমিট্যান্স বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম বড় উৎস। ভিসা বন্ধের ফলে ভবিষ্যতে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে আসবে, যা দেশের অর্থনীতির ওপর বড় প্রভাব ফেলবে।

বেকারত্ব বেড়ে যাবে
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অনেকে বিদেশে কাজের আশায় দালালদের মাধ্যমে টাকা ধার করে বা জমি বিক্রি করে প্রস্তুতি নেন। ভিসা বন্ধ থাকায় তারা বেকার হয়ে পড়ছেন।

সামাজিক অস্থিরতা
যারা বিদেশ যাওয়ার স্বপ্নে পরিবারকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তারা মানসিক চাপে ভুগছেন। অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন।

এসব বিষয়ে সমাধান খুঁজতে কয়েকজন প্রবাসীর সাথে আলাপ করেছি, তারা বিভিন্ন কারণ বললেও সব থেকে বেশি কূটনৈতিক ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন।

এশিয়াবিডি২৪

আরও সংবাদ