না বুঝে ভুল করে নিজের শিশু সন্তানকে রাস্তায় ফেলে গিয়েছিলেন তিনি
পঞ্চগড়ে গলির রাস্তায় ফেলে যাওয়া সেই কন্যাশিশুর মা রিমু আক্তার জানিয়েছেন, না বুঝে ভুল করে নিজের শিশু সন্তানকে রাস্তায় ফেলে গিয়েছিলেন তিনি।
মঙ্গলবার আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে বসে সমকালের সঙ্গে আলাপকালে তিনি নিজের ভুল স্বীকার করে একথা জানান।
রিমু আক্তার বলেন, ‘আমি আমার মেয়েকে পার্বতীপুরে স্বামীর বাড়িতেই নিয়ে যাব। তাকে ভালোভাবে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার চেষ্টা করবো। আমার স্বামী ফোনে বলেছেন, দুই সন্তাকেই নিয়ে যেতে। এজন্য আমি আমার মেয়েকে নিয়ে সেখানেই চলে যাব।’
তিনি বলেন, ‘আমি না বুঝেই ভুল করে শিশুটিকে এভাবে ফেলে গিয়েছিলাম। এখন বুঝতে পেরেছি। আমি চেয়েছিলাম কামাতপাড়া এলাকার আমার দুই মামার মধ্যে একজন শিশুটির দায়িত্ব নেবেন। কিন্তু কেউ নিতে চাননি। এরপর আমি ওই মহল্লার একজনের বাড়িতে গিয়ে শিশুটিকে দিতে চেয়েছিলাম। তিনিও নিতে চাননি। এরপর কিছু না ভেবেই এভাবে ফেলে চলে যাই।’
বর্তমান স্বামীর বাড়িতে সুখেই আছেন জানিয়ে রিমু আক্তার বলেন, ‘আমার বর্তমান স্বামী আমাকে খুব ভালোবাসেন। কিন্তু স্বামীর বাড়ির লোকজনসহ বর্তমান স্বামী জানেন, এই শিশুটি তাদের না। এর আসল বাবার নাম মাসুদ। তার সাথে আমার আগে বিয়ে হয়েছিল। এরপর আমি পার্বতীপুরে বর্তমান স্বামীর সাথে চলে যাই। এখন মাসুদ কোথায় আছে আমি জানি না। কিন্তু মাসুদের বড় ছেলে জিসানসহ (৪) দুই শিশুকে সামলানো আমার জন্য কঠিন। এজন্য চেয়েছিলাম– এই শিশুটি অন্য কাউকে দিয়ে দেই। কারো কোন সাড়া না পেয়ে আমি শিশুটিকে রেখে চলে যাই।’
তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমি ট্রেনে উঠে দিনাজপুরের পার্বতীপুরেই গিয়েছিলাম। সেখান থেকে আবারও পঞ্চগড়ে আসতে ট্রেনে উঠি। এরপর কিছু না বুঝে ঠাকুরগাও রেলস্টেশনে নেমে পড়ি। সেখান থেকে আটোয়ারী মালিগা এলাকার আলেমা আক্তার নামে এক নারী তার বাড়িতে নিয়ে যান। এরপর পুলিশ থানায় নিয়ে আসে।’
রিমু আক্তারের বাবা আইবুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়েটি আমার ছোটবেলা থেকে অসংলগ্ন কথা বলে। কখন কী করে কোনো ঠিক নেই। তাকে কয়েকবার ডাক্তার দেখিয়েছি। দীর্ঘদিন মানসিক চিকিৎসা করিয়েছি। এখন আমি নিজেই চলতে পারি না। তার আরও চিকিৎসা প্রয়োজন। তা না হলে সে কখন কী করে, ঠিক নেই। এর আগেও সে বড় ছেলে জিসানকে পুকুরে ফেলে দিয়েছিল। বর্তমান ১৭ দিনের শিশুসহ বড় ছেলেটিও তার কাছে নিরাপদ নয়। এজন্য আমরা এসেছি। আমাদের কাছে শিশুটিকে দিলে আমরাই লালনপালন করবো।’
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মঈন খন্দকার বলেন, ”শিশুটি হাসপাতালের শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে রয়েছে। সে সুস্থ আছে। খাওয়া নিয়ে সমস্যা নেই। শিশুটির মায়ের সাথে কথা বলে বোঝা যায় অসংলগ্ন কথা বলেন। তাবে তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন কি-না সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামত ছাড়া বলা যাবে না।’
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, ঘটনার পর থেকেই শিশুটির মাকে উদ্ধারের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছিল। সোমবার আটোয়ারী উপজেলার মালিগা থেকে শিশুটির মা রিমু আক্তারকে উদ্ধার করা হয়। এখন তার আগের স্বামী মাসুদকে খোঁজা হচ্ছে। বিষয়টি মানবিক দিক থেকে বিবেচনা করা হচ্ছে। এছাড়া কেউ কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি। এজন্য কারো বিরুদ্ধে মামলাও নথিভুক্ত করা হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে শুরু থেকে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ওই নারীর কথা অসংলগ্ন এবং মানসিকভাবে তাকে সুস্থ মনে হয় না। কিন্তু শিশুটি যে তার এটা নিশ্চিত এবং তিনি এখন শিশুটিকে নিতে চান। শিশুটির বাবা মাসুদকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। তবে রিমু আক্তারের বর্তমান স্বামীর সঙ্গে কথা বললে তিনিও শিশুটিকে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এজন্য শিশুটির নানা-নানীর উপস্থিতিতে মায়ের কাছেই শিশুটিকে ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’