মনে অতৃপ্তি নিয়েই বিদায় নিলেন বীরাঙ্গনা জানকী 

মনে অতৃপ্তি নিয়েই এ দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেন বীরাঙ্গনা জানকী বাড়াইক। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি না পেয়ে হতাশ ছিলেন এ বীরাঙ্গনা। সে অবস্থায়ই মৃত্যু হলো তার।

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী আমু চা বাগানের পুরান লেনের বাড়িতে অসুস্থ অবস্থায় ৮ জানুয়ারি দুপুরে মারা যান তিনি। রাতে বাগানেই তাকে সমাহিত করা হয়। এ বাগানের বাসিন্দা আকাশ মুন্ডা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে ‘জানকী’ পাকিস্তানি সেনাদের পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন। সেনা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন তিনি। এরপর থেকে চা বাগানেই বাস করে আসছিলেন জানকী।

তার মৃত্যুর পূর্বে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আমু চা বাগানে গিয়ে বীরাঙ্গনা চা শ্রমিক জানকী বাড়াইকের সঙ্গে কথা বলেন এ প্রতিবেদক।

সে সময়ে তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তারা আট ভাই-বোন ও তাদের মা-বাবা চিমটিবিল সীমান্তের কাংড়াবাড়ি এলাকায় আশ্রয় নেন। একদিন তিনি ও তার বাবা-ভাই মিলে বাড়িতে আসেন খাবার নেয়ার জন্য। এ সময় প্রায় ১২ জন পাকিস্তানি সেনা তাদের পাকড়াও করে। সেনারা তাদের চোখ বেঁধে ফেলে। এ সময় তার ভাই কৌশলে পালিয়ে গেলেও তারা পালাতে পারেননি। পাকিস্তানি সেনারা তার ওপর পাশবিক নির্যাতন শুরু করে। পরে তাদেরকে চুনারুঘাট ক্যাম্পে নিয়ে আটকে রাখা হয়। সেখানেও সেনারা তার ওপর নির্যাতন চালায়। ২০ দিন পর গুইবিল সীমান্তে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের তুমুল লড়াই শুরু হয়। এ সময় ক্যাম্পে কেউ না থাকায় তিনি ও তার বাবা পালিয়ে যান। দেশ স্বাধীন হলে তারা বাড়ি ফিরে আসেন।

তিনি আরো জানান, লোকজন তাকে দেখে নানা ধরনের অপমানজনক কথা বলত। এ কারণে তার বিয়ে হয়নি। তার মা-বাবা, ভাই-বোনরা মারা গেছেন। শুধু বেঁচে ছিলেন তিনি। শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়ায় চা বাগানের কাজ ছেড়ে দেন। স্বজনদের সঙ্গে বসবাস করে আসছিলেন। কুমারী হওয়ায় বিধবা ভাতা পাননি। বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও তাকে এ ভাতা দেয়া হয়নি।

জানকী বাড়াইক বলেছিলেন, ‘লোকজনের কাছ থেকে শুনেছি, বীরাঙ্গনারা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাচ্ছেন। সাবেক এমপি কেয়া চৌধুরীর চেষ্টায় হবিগঞ্জের চা বাগানসহ বিভিন্ন এলাকার পাঁচ বীরাঙ্গনা নারী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন। এ কথা শোনার পর চুনারুঘাট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলে গিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।’

আক্ষেপ করে তিনি বলেছিলেন, ‘বিয়ে হলো না। এ কারণে আমার কোনো উত্তরাধিকারী নেই। বাকি জীবনে আমার চলার পথে কী হবে?’

মুক্তিযুদ্ধে সম্ভ্রম হারানো এই নারী জীবনের শেষপ্রান্তে এসে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চেয়েছিলেন। তা আর পাওয়া হলোনা তার। এক বিশাল অতৃপ্তি নিয়েই চিরদিনের জন্য চলে গেলেন এই বীরাঙ্গানা।

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/সাইফ

আরও সংবাদ