মৌলভীবাজার ট্রাজেডি: উদ্বিগ্ন মেয়রের ছুটোছুটি
মৌলভীবাজার শহরের সাইফুর রহমান সড়কের (সেন্ট্রাল রোড) পশ্চিমবাজার এলাকায় পিংকি সু স্টোরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুই আত্মীয়সহ একই পরিবারের ৫ জন মারা গেছেন।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে ছুটে যান মেয়র ফজলুর রহমান। জান-মাল রক্ষায় শুরু হয় উদ্বিগ্ন মেয়রের ছুটোছুটি। পৌর পরিষদ, কর্মকর্তা-কর্মচারি ও তরুণদের নিয়ে নেমে পড়েন উদ্ধার তৎপরতায়।
জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, বিদ্যুৎ ও গ্যাস কর্তৃপক্ষ, স্বেচ্ছাসেবক ও উদ্ধারকমীদের সমন্বয়ে কাজ শুরু করেন।
ঘটনাস্থলে দেখা যায়, বস্তা ভর্তি করে বালু দেওয়া, ফায়ার সার্ভিস ও পৌরসভার গাড়ি দিয়ে পানি দেওয়া, মনু নদী থেকে পানি সংগ্রহ করায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। আগুন যেন বাণিজ্যিকপাড়া পশ্চিমবাজারের পুরো এলাকায় ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য তিনি সর্বাত্মক তৎপরতা চালান। এ ঘটনায় যখন একে একে ৫টি লাশ বের হয়ে আসে, তখন মেয়রের চোখ গড়িয়ে পড়ে কান্নার জল।
এমবি ডিপার্টমেন্ট স্টোরের নুরুল ইসলাম কামরান বলেন, ‘মেয়র মহোদয়সহ সকলের তৎপরতায় আরো বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছে মৌলভীবাজার শহর। আরো ব্যাপক প্রাণহানি ঘটতে পারতো। আশেপাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারতো
ঘটনাস্থলে উপস্থিত সেন্ট্রাল কিচেনের মালিক (ব্যবসায়ী) জাহেদ আহমদ চৌধুরী বলেন, অগ্নিকাণ্ডে মেয়র মহোদয়ের তৎপরতা ছিলো চোখে পড়ার মতো। মনে হচ্ছিলো তাঁর নিজের কোনো স্বজন, ভাই-বোন, মা-বাবা ভেতরে আটকে আছেন। আগুন নেভাতে নিজে বালু ভর্তি করে বস্তা ফেলেছেন। ঝুঁকি নিয়ে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে সহায়তা করেছেন।
আহত ও নিহতদের তড়িৎ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। ছুটে গেছেন হাসপাতালে। দ্রুত ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করে দাহ করার জন্য শ্মশানে পাঠিয়েছেন। আবার সেখানে (শশ্মানঘাট) ছুটে গেছেন, যেন সবকিছু সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়।’
আরেক ব্যবসায়ী মহান মটরসের মালিক সাদিক আহমদ বলেন, ‘শুধু উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নয়, অগ্নিকাণ্ড থেকে শুরু করে বন্যা, জঙ্গিবিরোধী অভিযান, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো; এ যেন অনন্য এক মেয়র।’
এ ব্যাপারে মেয়র ফজলুর রহমান বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের খবর শোনার সাথে সাথে আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেছি। আমার চেষ্টা ছিলো কত তড়িত ও সৃ-শৃংখলভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। জানমালের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যত কম হয়। আটকে পড়া মানুষগুলোকে জীবিত ও সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা। কিন্তু ধোঁয়ায় ৫ জন মানুষ মারা গেছেন। এটা গভীর শোক আর বেদনার।’
মেয়র বলেন, ‘আরো বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশংকা ছিলো। পার্শ্ববর্তী নুর ব্রাদার্স থেকে শুরু করে এম-বিলাস এমনকি পুরো পশ্চিমবাজারে আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশংকা ছিলো। তখন বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় ঘটে যেতো। আগুন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতোনা। আমরা জান বাজি রেখে কাজ করেছি বলে সেটা হয়নি। এতে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, ব্যবসায়ী, শহরের তরুণ ও স্বেচ্ছাসেবকসহ সকলের আন্তরিক ভূমিকা ছিলো, বলেন মেয়র।
অগ্নিকাণ্ডে মেয়র ফজলুর রহমানের ভূমিকা ও উদ্ধার তৎপরতা নিয়ে জানতে চাইলে শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সংস্কারক ডা. এম আহাদ বলেন, ‘শত বছরেও এমন জনপ্রতিনিধি পাওয়া দুষ্কর। এই শহরের উন্নয়নে তাঁর কর্মতৎপরতা বিশ্বজুড়ে শো-কেস করার মতো। তিনি সত্যিকারের একজন পৌরপিতা। এই শহর আর নাগরিকদের জন্য তাঁর কি যে এক মায়া। মেয়র ফজলুর রহমানের উদ্যম, সততা ও কর্মতৎপরতায় আমরা নাগরিকা মুগ্ধ। কিন্তু মানুষটা নিজের শরীরের যত্ন নিচ্ছেন না। চিকিৎসক হিসেবে মনে হচ্ছে তিনি অমানবিক পরিশ্রমে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’
উল্লেখ্য মৌলভীবাজার শহরের সাইফুর রহমান সড়কের (সেন্ট্রাল রোড) পশ্চিমবাজার এলাকায় পিংকি সু স্টোরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুই আত্মীয়সহ একই পরিবারের ৫ জন মারা গেছেন।
পিংকি সু স্টোর সংলগ্ন দোতলা আবাসিক বাসায় বসবাস করতে ব্যবসায়ী সুভাষ পাল, তাঁর ভাই মনা পাল ও তাঁদের পরিবার। জুতার দোকান থেকে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে পার্শ্ববর্তী গ্যাস রাইজার থেকে গ্যাস ছিদ্র হয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস।
এ ঘটনায় নিহত হন পিংকি সু স্টোরের মালিক সুভাষ রায় (৬৫), সুভাষ রায়ের মেয়ে প্রিয়া রায় (২৪), সুভাষ রায়ের ভাইয়ের স্ত্রী দিপ্তী রায় (৪৮), সুভাষ রায়ের শ্যালকের স্ত্রী দিপা রায় (৩৫), দিপা রায়ের কন্যা-শিশু বৈশাখী রায় (৩)।
এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে মৃতদেহ সৎকারের জন্য ১ লক্ষ টাকা সহায়তা দিয়েছে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন।
হাসনাত কামাল, সাংবাদিক, বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) সূত্রঃ আইনিউজ.নিউজ
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/সাইফ