দেশে এখন মাদক সেবী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ–ডিআইজি মোঃ কামরুল আহসান
সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ কামরুল আহসান বলেছেন, জঙ্গিবাদকে নির্মুল করা না গেলেও নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে, কিন্তু মাদকের বিস্তার উত্তর উত্তর বেড়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত মাদককে নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। যে কারণে সাড়া দেশে এখন মাদক সেবী মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭০ লাখ।
বুধবার বিকেলে মুজিব বর্ষ উদযাপনে ব্যতিক্রমী মৌলভীবাজার সদর মডেল থানা আয়োজিত এ মাদকের অন্ধকার থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা উপলক্ষে আয়োজিত এসো আলোর পথে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ এর সভপতিত্বে ও সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) পরিমল দে এর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, মৌলভীবাজার সকারি কলেজের অধ্যক্ষ ড. ফজলুল আলী, পৌর মেয়র মোঃ ফজলুর রহমান, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাউর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম, মৌলভীবাজার টাউন কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সামছুল ইসলাম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার মোঃ জামাল উদ্দিন, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সালেহ এলাহী কুটি, কনকপুর ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউর রহমান চৌধুরী।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি আক্তারুজ্জামান, একাটুনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আবু সুফিয়ান, মোস্তফাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ রুমেল আহমদ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, অ্যাডভোকেট পার্থ সারথী পাল, কনকপুর ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম প্রমুখ।
ডিআইজি মোঃ কামরুল আহসান আরো বলেন, দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে মাদক যেমন সমস্য তেমনি ব্যাক্তি জীবন ও সমাজের জন্য প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি গ্রাম থেকে একটি দেশ, মাদকমুক্ত বাংলাদেশ”-এই শ্লোগানকে ধারণ করে মৌলভীবাজার জেলাব্যাপী মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে গেল কয়েক মাস থেকে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে আসছে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ। এর ধারাবাহিকতায় মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কনকপুর ইউনিয়নকে মাদকমুক্ত ইউনিয়ন হিসেবে ঘোষণার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে সারা জেলাকে মাদকমুক্ত ঘোষণার কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে জেলা পুলিশ। এমন লক্ষেই মাঠ পর্যায়ে দৃশ্যমান কাজের গতি সঞ্চালনে স্থানীয় মানুষের সহায়তায় এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগে এখন সক্রিয় তারা।
তিনি বলেন, মাদকের কারনে নিজ পরিবারের সদস্যদের খুন করছে মাদক সেবীরা। মাদকের কারনে দেশের তরুণ ও যুব সমাজ চরম বিপথগামী হচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ব্যহত করতে এর চেয়ে ভয়াবহ আর কি হতে পারে। গবেষণায় তথ্য মিলেছে মাদকের পিছনে দেশে বছরে ৪৮ হাজার ৬ কোটি ব্যয় হচ্ছে। যা দিয়ে আমরা বছরে দেড়টা পদ্মা সেতু তৈরী করতে পারতাম। দেশে প্রায় ৭০ লাখ মাদক সেবী রয়েছেন। যা বিশ্বের অনেক দেশের জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। মাদকের ব্যপারে জিরো ট্রলারেন্স নীতিতে আমরা।
পরে মোঃ কামরুল আহসান মাদকের বিষাদময় জীবন থেকে আলোর পথে আশায় তাদেরকে অভিনন্দন জানান।
অনুষ্ঠানে পুলিশের কাছে ১৭ জন মাদক সেবী ও ব্যবসায়ী আত্মসমর্পন করে। সামাজিক মান মর্যদার কথা বিবেচনা করে এ ১৭ জন মাদক সেবীকে জনসম্মুখে হাজির করা হয়নি। অনুষ্ঠানে সদর উপজেলার কনকপুর ইউনিয়নকে মাদক মুক্তঘোষনা করা হয়।
জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, গত বছরের আগষ্ট মাস হতে এই চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত মোট গ্রেফতারি পরোয়ানা নিস্পত্তি ৩,৯৫১, গ্রেফতারি পরোয়ানা নিস্পত্তি বৃদ্ধি ৮৩০, মোট সাজা পরোয়ানা নিস্পত্তি ৩৭২ , সাজা পরোয়ানা নিস্পত্তি বৃদ্ধি ১৫৩। এছাড়া গত চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জেলায় ১৪৬ টি মামলা রুজু হয়েছে যা গত বছরে ছিল ১৮২ টি।
জানা যায় জেলায় আগষ্ঠ ২০১৯ হতে ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মাদকদ্রব্য , মাদক মামলা ও উদ্ধার হয়েছে ২৭৯ টি, গ্রেফতারের সংখ্যা ৩৫০ জন, ইয়াবা ১৩,৩৮৯ পিছ, চোলাই মদ, ২৭৩০ লিটার ৯শ গ্রাম, গাঁজা ২৬ কেজি, বিদেশী মদ ৮২ বোতল, ফেন্সিডিল ১২২ বোতল, হিরোইন .০৯ গ্রাম, ওয়াস ৩৭৫ লিটার।
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/সাইফ