মোদির আসাটা কতটুকু শোভনীয়, তা চিন্তা করা উচিত: ফখরুল
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানানোর সমালোচনা করে বিরোধী দলের নেতারা বলেছেন, এ বিষয়টি নিয়ে সরকারের চিন্তা করা উচিত। মোদিকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে ফিরিয়ে দেওয়ারও আহ্বান জানান তাঁরা।
আজ সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে জেএসডির উদ্যোগে পতাকা উত্তোলন দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা এসব কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দিল্লিতে যখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হলো, তখন মোদি আসছেন আমাদের দেশে। অভিযোগ আছে, এ দাঙ্গার সঙ্গে মোদির দল জড়িত। এই সময়ে বাংলাদেশে আসাটা কতটুকু শোভনীয় হচ্ছে, সেটা অবশ্যই চিন্তা করা উচিত।’
মোদিকে স্বাগত না জানিয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘মোদি বাংলাদেশে যে সময়ে আসছেন, সে সময় দুই হাত প্রসারিত করে থাকা নয়, দুই হাত শক্ত করে রাখা উচিত, তাঁকে ফেরানোর জন্য। যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে, তাতে মোদিকে স্বাগত জানাতে পারছি না।’
মুজিব শতবর্ষের অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদিকে প্রধান বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ করার সমালোচনা করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘এটা মোদিবর্ষ না মুজিববর্ষ? রব নাই, কাদের সিদ্দিকী নাই, মোদিকে আনছেন।’ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে মুজিব বর্ষ পালনের সমালোচনাও করেন তিনি।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি চিকিৎসক জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, মোদিকে প্রধান বক্তা করা লজ্জার। সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের জন্য মোদিকে ক্ষমা চাওয়ার দাবিও জানান।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘মুজিব বর্ষের অলংকার হিসেবে মোদিকে নিয়ে আসা হচ্ছে। এর অর্থ হচ্ছে ক্ষমতায় থাকতে হবে তোষামোদ করে।’
২ মার্চ রাষ্ট্রীয়ভাবে পতাকা দিবস পালন না করার সমালোচনা করেন এই নেতারা। মির্জা ফখরুল বলেন, এ দিবসকে কেন রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয় না, কারণ সরকার জনগণকে থেকে বিচ্ছিন্ন। তারা একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার স্বীকার করে না যে স্বাধীনতাযুদ্ধের সঙ্গে দেশের সব মানুষ জড়িত ছিল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বেআইনিভাবে আটক করে রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘এই দিনে আবারও শপথ নিতে হবে যে এই দেশকে একাত্তর সালে যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছিলাম। আজকে স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে হলেও স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হবে।’
১৯৭১ সালের ২ মার্চ বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনকারী জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, নিজের পরিবার, গোষ্ঠী, আত্মীয়স্বজনের অবদানকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতিহাসকে বিকৃতি করে অস্বীকার করা হচ্ছে। এগুলোকে অস্বীকার করে মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করা হচ্ছে।
২ মার্চকে জাতীয় স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানান কাদের সিদ্দিকী। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ‘জন্মশতবার্ষিকী দেশের সব মানুষকে নিয়ে পালন করা উচিত। আওয়ামী লীগের একা পালন করার অধিকার নেই। মুজিববর্ষ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো আগ্রহ নেই। শুধু গণমাধ্যমেই আছে। শেখ মুজিবুর রহমানের অপদার্থ ভক্তদের কারণে আজকে তিনি জনবিচ্ছিন্ন হতে চলেছেন।’
ডাকসুর ভিপি নুরুল হক জানান, আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পতাকা উত্তোলন দিবসের উৎসবে দাওয়াত পেয়েও তিনি যাননি। তিনি আরও জানান, প্রথম পতাকা উত্তোলক আ স ম রবকে না ডাকায় তিনি যাননি। তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের বা দলের নয়। সংকীর্ণতা থেকে বের হয়ে আসার আহ্বান জানান।
বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের সমালোচনা করে মান্না বলেন, যাঁরা যাঁরা বলেন আজকে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে হবে, তো বৃহত্তর ঐক্য ১১ বছর ধরে হলো না। আরও ১১ বছর ধরে যদি না হয়? তিনি আরও বলেন, নেতাদের সাহস করে আন্দোলনের পতাকা তুলে রাজপথে বেরিয়ে যেতে হবে। তবে তার জন্য সব ধরনের সংগঠন ও যোগ্যতা দরকার বলেও জানান তিনি।
এ ছাড়া আ স ম রব গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, একা কোনো দল কিছু করতে পারবে না।
জেএসডির কার্যকরী সভাপতি সা কা ম আনিসুর রহমান খানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব প্রমুখ।
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান