মহামারী
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের খবর কারও অজানা নয়। ইতোমধ্যে ১৩৫টি দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক স্বাস্থ্য গবেষণা সংস্থা এতে ৬ কোটি মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করছে।
মানব সভ্যতার ইতিহাসের সাথে মহামারীর সম্পর্ক বহু পুরোনো। বর্তমানে, সাধারণত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকাভুক্ত ভাইরাসঘটিত রোগ, যাতে মৃত্যুর হার বেশি, সেসব রোগ ছড়িয়ে পড়লে মহামারী ঘোষণা করা হয়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে নির্দিষ্ট দেশের সরকার অন্য কোনো সংক্রামক রোগের জন্য সে দেশে মহামারী ঘোষণা করতে পারে। মহামারী একটি দেশ, পাশাপাশি কয়েকটি দেশ, মহাদেশ, এমনকি একসাথে কয়েকটি মহাদেশেও থাবা বসাতে পারে। নিকট অতীতের বীভৎসতম মহামারী ছিল স্পেনিশ ইনফ্লুয়েঞ্জা। ১ম বিশ্বযুদ্ধকালীন সীমাহীন ক্ষয়ক্ষতি এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে আঘাত করেছিল ওই মহামারী। ১৯১৮ থেকে ১৯২০ পর্যন্ত চলা সে মহামারীতে আক্রান্ত হয়েছিল প্রায় ৫০ কোটি মানুষ। মৃতের সংখ্যা ৫ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
মুসলিম বিশ্বে আঘাত হানা সবচেয়ে প্রাণঘাতী মহামারী ছিল আমওয়াস মহামারী। উমর রা.’র খেলাফতকালে ৬৩৯ খ্রিস্টাব্দে ফিলিস্তিন, সিরিয়া এবং ইরাকে থাবা বসিয়েছিল ওই মহামারী। মৃত্যুবরণ করেছিলেন অন্তত ২৫ হাজার মানুষ। ফলশ্রুতিতে মুসলিম বিশ্বের একটি দিক প্রায় শূন্য হয়ে গিয়েছিল। মৃতের তালিকায় কারা ছিলেন জানেন? সাহাবি আবু উবায়দাহ ইবনুল জাররাহ, বিলাল ইবনে রাবাহ, মু’আজ ইবনে জাবাল এবং তাঁর পরিবারসহ বহু প্রসিদ্ধ সাহাবা রাদ্বিআল্লাহু আনহুম। ভাবা যায়?
আমার জানামতো, লিখিত ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারী ছিল ১৩৪৭ সালের ব্লাক ডেথ মহামারী। ইঁদুরবাহিত সে মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে পচনশীল রোগে ৪ বছরে মারা গিয়েছিল তৎকালীন পৃথিবীর প্রায় ৪০% মানুষ!
রাসূলুল্লাহ ﷺ আল্লাহর কাছে দুআ করেছিলেন, তাঁর পুরো উম্মত যেন কখনও মহামারীতে ধ্বংস না হয়। মহামারীতে মৃত্যুবরণকারীকে হাদিসে ‘শহীদ’ বলা হয়েছে।
আল্লাহর নবী ﷺ আমাদেরকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন, দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। মহামারী আক্রান্ত এলাকায় প্রবেশ করতে, এবং মহামারীতে আক্রান্ত হলে (অন্যদের সুস্বাস্থ্য বিবেচনায়) স্থান ত্যাগ করতে নিষেধ করেছেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ সব ধরণের রোগবালাই থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থণা করার দুআ আমাদেরকে শিখিয়ে গেছেন।
দুআটি নিম্নরূপঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَالْجُنُونِ وَالْجُذَامِ وَمِنْ سَيِّئِ الأَسْقَامِ
[সুনান আবি দাউদ, সুনান আন-নাসায়ী, মুসনাদ আহমদ]
আল্লাহ আমাদের সবাইকে রক্ষা করুন। আমীন।
মাওলানা মারজান আহমদ চৌধুরী ফুলতলি
বি,এ (অনার্স), এম,এ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ডিপ্লোমা ইন অ্যারাবিক, মিশর
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান