আবারও ভিক্ষার ঝুঁলি তার হাতে!

ছবিঃ এশিয়াবিডি। ইনসেটে- জোনাব আলী

ভিক্ষা ছেড়ে শুরু করেছিলেন সবজি ব্যবসা। ছোট একটি স্বপ্ন দেখেন স্বাবলম্বী হবার। কিন্তু একটি বড় স্বপ্ন কেড়ে নেয় তাঁর ছোট সুখ, হাতে ধরিয়ে দেয় ভিক্ষার ঝুঁলি।

মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের দক্ষিণ বড়ডহর গ্রামের বাসিন্দা ভিক্ষুক জোনাব আলী (৬৭) এখন নি:স্ব হয়ে ঘুরছেন। ৬ মেয়ে ও ১ ছেলের জনক জোনাব আলী।

জোনাব আলীর সাথে কথা বলে জানা যায়, শারীরিক অসুস্থতায় কোন কাজ করতে না পারায় জীবিকার সন্ধানে প্রতিদিন ভোরে ভিক্ষার ঝুঁলি হাতে নিয়ে বাড়ী থেকে বের হতেন। উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ও গ্রামে গ্রামে ঘুরে যা পেতেন তা দিয়েই সংসার চলত। ছেলে সুহেল মিয়া স্ত্রী ও ৪ সন্তান নিয়ে পৃথক সংসারে থাকেন। ৩ মেয়ে বিয়ে দিয়ে বাকী ৩ মেয়ে ও স্ত্রীসহ ৫সদস্যের সংসারের ঘানি টানা জোনাব আলীকে ভিক্ষুকমুক্ত উপজেলা ঘোষণা প্রকল্পের আওতায় জেলা প্রশাসন কর্তৃক ২০১৮ সালের ০৭ জুলাই কিছু কাঁচা মাল কিনে দেয়া হয়।

তিনি স্বপ্ন দেখেন স্বাবলম্বী হবার। ছুড়ে ফেলেন ভিক্ষার ঝুঁলি। স্থানীয় কলাবাড়ী বাজারের ফুটপাতে বসে শুরু করেন সবজি ব্যবসা। ছোট স্বপ্ন সুখ দিতে শুরু করে তাঁকে। কিছু দিন ভালই চলছিল তাঁর ব্যবসা ও সংসার। কিন্তু নিয়তি তাঁকে সুখী হতে দেয়নি। বেশ কিছু দিন পর উপজেলা প্রশাসন থেকে তাঁকে দশ হাজার টাকা দেয়া হয়। টাকা পেয়ে বড় স্বপ্নে বিভোর হন তিনি। গ্রামীণ ব্যাংক ও ব্রাক ব্যাংক থেকে লোন নেন বিশ হাজার টাকা। এই ত্রিশ হাজার টাকায় বাড়ীর কাছে দোকান ঘর তৈরি করেন। অবশিষ্ট সামান্য টাকায় কিছু মালামাল ক্রয় করে শুরু করেন ব্যবসা। কিন্তু সামান্য পূঁজির ব্যবসা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। প্রায় ছয় মাস পর দোকান বন্ধ হয়ে যায়। বিগত এক মাস থেকে আর দোকান খোলা হয়না। ভাগ্য বিড়ম্বনায় পেটের দায়ে জোনাব আলী আবারও হাতে তুলে নেন ভিক্ষার ঝুঁলি। লোকলজ্জার ভয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে দুুরবর্তী এলাকায় গিয়ে মাঝে মধ্যে ভিক্ষা করেন। এতে সংসারের ব্যয় নির্বাহ না হওয়ায় বৃদ্ধ বয়সে বাধ্য হয়ে অন্যের বাড়ীতে কাজ করেন স্ত্রী মিনারা বেগম। ক্ষুধার জ্বালায় ইচ্ছের বিরুদ্ধে আবারও ভিক্ষায় নামা জোনাব আলী ত্রিশ হাজার টাকা পূঁজি পেলে পুনরায় দোকান চালু করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন।

জোনাব আলীর পুত্র সুহেল মিয়া বলেন, বাবা সবজি ব্যবসা ছেড়ে দোকান দিয়ে নি:স্ব হয়েছেন। সবজি ব্যবসাই ভাল ছিল। আমি দিনমজুরের কাজ করে নিজের সংসার চালাতে হিমশিম খাই। এরই মাঝে সপ্তাহান্তে বাবার ঋণের কিস্তি ছয়শত টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে।

আলাপচারিতায় জোনাব আলী বলেন, কর্মসৃজনে আমার নাম ছিল, কিছুদিন কাজ করি। কিন্তু আতা মেম্বারকে দুই হাজার টাকা না দেয়ায় আমার নাম কেটে দেন। আমার কোন ঘর নেই। অন্যের জায়গায় ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করি। বিদ্যুৎ বা সৌরবিদ্যুৎও নেই। স্থানীয় কিছু দানশীল ব্যক্তি ৫শতাংশ ভূমি ক্রয় করেদেন। কিন্তু গৃহ নির্মাণের সাধ্য আমার নেই।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আতাউর রহমান আতা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি নিয়মিত কাজ না করায় নাম কর্তন করা হয়েছে।

সাগরনাল ইউপি চেয়ারম্যান এমদাদুল ইসলাম চৌধুরী লিয়াকত বলেন, জোনাব আলীকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভিজিডি দেয়া হয়। আগামীতে সুযোগ হলে গৃহনির্মাণের ব্যবস্থা করব।

জানতে চাইলে জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অসীম চন্দ্র বনিক বলেন, মুজিববর্ষেই জোনাব আলীকে গৃহ নির্মান করে দেয়া হবে।

এশিয়াবিডি/বেলাল/সাইফ

আরও সংবাদ