করোনায় ডা. মইন উদ্দিনের মৃত্যু এবং কয়েকটি প্রশ্ন

তিনি চীনা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। অথচ করোনাকালে তিনি সিলেট থেকে বেরই হননি। যখন অন্য অনেক চিকিৎসক স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারান্টাইনে চলে যান, তখনও সেই মানবিক মানুষটি, প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী মানুষটি, অভিজাত হসপিটালে গরীবের ‘ডাক্তার’ নামে পরিচিত সেই চিকিৎসক নিয়মিত রোগী দেখেছেন। তিনি ডা. মাঈন উদ্দিন। সিলেটের খ্যাতনামা হৃদরোগ ও মেডিসিনের চিকিৎসক! তিনি করোনা ভাইরাসে আজ (১৫-০৪-২০২০) ভোরে কুর্মিটোলা হাসপাতালে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন।

প্রশ্ন হলো, তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন করোনায়। আজ পর্যন্ত কারো সংস্পর্শ ছাড়া করোনা উড়ে এসে জুড়ে বসেনি। এই মহৎপ্রাণ মানুষটাকে নিশ্চয়ই কেউ না কেউ তার সরলতার, তার মানবপ্রীতির, তার অসুস্থদের প্রতি পরম সহানুভূতির সুযোগে করোনা উপহার দিয়ে গিয়েছেন?

অবশ্যই। কিন্তু কে সেই ব্যাক্তিটি? তা বের করা কঠিন। এটা ঠিক। তাই বলে এটাও কি ঠিক যে, ওই নির্দয় উপহারটা কি সেই পরোপকারী লোকটি পুটলিতে ভরে এনে শুধু তাকেই দিয়েছিলেন? তারপর সেই পুটলি তিনি সুরমা নদীতে বিসর্জন দিয়েছিলেন? আর কারো কাছে না দিয়ে পরে হঠাৎ করে হাওয়া হয়ে গিয়েছিলেন?

অবশ্যই না! তাহলে আর কত মানুষ সেই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন? করোনা তো সুবোধ বালকের মত বসে থাকার পাত্র না, তাহলে আর কতজনে সে ছড়িয়েছে? সিলেটে বিষ্ময়কর ভাবে এর তথ্য বা প্রমাণ কোনোটাই বের করতে পারছে না স্বাস্থ্য বিভাগ! তারা যেন মেনেই নিয়েছে, আর কেউ তার কাছ থেকে আক্রান্ত হননি। তিনিও যেন অলৌকিকভাবে আক্রান্ত হয়ে গিয়েছিলেন!

তবে আমরা মেনে নিই নি! নিশ্চয়ই তিনি যার কাছ থেকে পেয়েছেন তিনি আরও অসংখ্যজনকে ছড়িয়েছেন। আর এই চিকিৎসকও আরও অনেককে নিজের অজ্ঞাতে ভাইরাসটি ছড়িয়ে দিয়েছেন! তারা কারা? তারা কই? সিলেটে তো তিনিসহ মাত্র ৩ জন রোগী! তাও ভৌগোলিক ভাবে এরা ৩ প্রান্তের! কাগজেপত্রে আর কেউ নেই! কিন্তু করোনাধর্ম তো অব্যর্থ! তার সাইকেলধর্ম মেনে নিলে এটি কি মানা যায়? যায় না! তাহলে আর কোনো রোগী খুঁজে না পাওয়া কি সিলেটের ব্যর্থতা, না কি অসামর্থতা? নাকি সিস্টেমের অপূর্ণতা? দৃশ্যত; আমরা কাজের চেয়ে বাহবা নিতেই বেশি উন্মুখ! অথচ যখন তার অবস্থা ক্রিটিক্যাল হতে চলল তখন তাকে দ্রুত ঢাকায় নিতে একটি এয়ার এম্বুলেন্স ভিক্ষা চাওয়া হয়েছিল! যে মানুষটি সারাজীবন মানুষের জীবন বাঁচিয়েছেন, তার জীবন বাঁচাতে রাষ্ট্র কয়েক মিনিটের জন্য একটি এয়ার এম্বুলেন্স দিতে রাজি হলো না!

সেই স্বাস্থ্য বিভাগ যতই বলুক, ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, নারায়নগঞ্জ বা সিলেটে করোনা প্রতিরোধে তারা স্থানীয় ভাবে যথেষ্ট প্রস্তুত, এই চিকিৎসকের মৃত্যুর বিষয়টি শক্তিশালী হয়ে প্রমাণ করে, তারা ঠিক বলছেন না! কেননা তাকে সিলেট থেকে ঢাকায় স্থানান্তরিত করেও বাঁচাতে পারলো না স্বাস্থ্য বিভাগ! একজন চিকিৎসক যে সিস্টেমে নিরাপদ নন, সেখানে বাকিরা কতটুকু নিরাপদ? হাস্যকরভাবে শোনালেও ‘সেখানে আমার মত আম পাবলিক কতটুকু সেইভ’— সেই প্রশ্ন তো অবান্তর! আর এমনিতেই তো করোনার কাছে পুরো বিশ্বের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অসহায়!

তাহলে কি আমাদের সব কিছুই স্বান্তনা? আত্মপ্রবঞ্চনা? দূর থেকে দেখা কলসিটি আসলেই খালি?

আমরা বিশ্বাস করতে চাই, এইসব প্রশ্নের উত্তর ‘হাঁ’ নয়, ‘না’ই হবে!

লেখক: সালমান ফরিদ, কবি, সাংবাদিক

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান 

আরও সংবাদ