ধর্মীয় পরিচয় দেখেই মুসলিমদের গ্রেফতার করছে পুলিশ!


ভারতে কোভিড-১৯ আতঙ্কের মধ্যেই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে জড়িত রয়েছেন এমন বেশ কয়েকজন সমাজকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷

প্রায় দুই ডজন আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, চিত্রনির্মাতা, সমাজকর্মী, লেখক এর নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তাদের বক্তব্য, দেশের মুসলিম স্কলার ও সমাজকর্মীরা অন্তহীন দোষারোপের শিকার৷ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনার পরিবর্তে, রাষ্ট্রশক্তি তাদেরকে নগ্ন শক্তি প্রকাশের জন্য বেছে নিয়েছে৷ তাদের আটক রাখা হচ্ছে এবং গ্রেফতারও করছে৷ সিএএবিরোধী বিক্ষোভ বিষাক্ত উগ্র-জাতীয়তাবাদ থেকে সাধারণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের এক পদক্ষেপ বলে তারা মতপ্রকাশ করেন।

গত কয়েক সপ্তাহে সিএএবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেওয়ার অভিযোগে কমপক্ষে দু’জন সিএএ বিরোধী কর্মী এবং জামিয়া সমন্বয় কমিটির (জেসিসি) সদস্যদের দিল্লি পুলিশ গ্রেফতার করেছে৷ পুলিশের দাবি, এই সিএএ বিরোধী বিক্ষোভই ফেব্রুয়ারিতে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে সহিংসতার কারণ হয়েছিল। সম্প্রতি জামিয়ার গবেষক সফুরা জারগর ও মিরন হায়দরকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ জেসিসির প্রায় ৫০ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ নোটিস জারি করেছে৷ জারগর ও মিরনের গ্রেফতারের আগে খালিদ সাইফি ও ইশরাত জাহানের মতো সিএএ বিরোধী আরও বেশ কয়েকজন সমাজকর্মীকে উত্তর-পূর্ব দিল্লি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। একইভাবে শারজিল ইমাম, ডা. কাফিল খান ও সাবু আনসারীর মতো অন্যান্যদের সিএএ বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেবার জন্য গ্রেফতার করা হয়৷

বিশিষ্টরা বিবৃতিতে অভিযোগ করেছেন, বর্তমান সরকার ইচ্ছাকৃত ভাবে মুসলিম তরুণদের হেনস্থা করছে৷ তারা মুসলিম যুবকদের বিরুদ্ধে যেন এক যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে৷ সিএএবিরোধী বিক্ষোভ এবং ফেব্রুয়ারির শেষদিকে উত্তর-পূর্ব দিল্লিকে কাঁপানো মুসলিম নিধনযজ্ঞের মধ্যে সরাসরি যোগসূত্র স্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে করা এফআইআরগুলোতে৷ শান্তিপূর্ণ সমাবেশগুলোকে অপরাধ হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে পুলিশ৷

‘সিএএএবিরোধী নেতাকর্মীদের উইচ-হান্টের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেন’ শীর্ষক এই বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি হলেন: আকার প্যাটেল, কলাম লেখক; অলোক রায়, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক; আনন্দ পট্টবর্ধন, চলচ্চিত্র নির্মাতা; চন্দ্র উদয় সিং, প্রবীণ আইনজীবী; লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাইরাস বনজি; জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মৈত্রেয়ী চৌধুরি; মুকুল কেশবন, লেখক ও ইতিহাসবিদ; নন্দিনী সুন্দর, দিল্লি স্কুল অফ ইকোনমিক্সের অধ্যাপক; অ্যাডভোকেট যুগ মোহিত চৌধুরি প্রমুখ৷ তাঁদের মত, সাইফি, কাফিল, শারজিল ইমামরা কী বলেছেন, সেটা যদি বিবেচ্য হত তবে শাসক দলের সাংসদ, মন্ত্রীনেতারাই জেলের মধ্যে থাকত৷ এখানে অভিযুক্ত ও গ্রেফতারকৃতদের পরিচয়টাই শুধু গুরুত্ব বহন করেছে–তারা মুসলিম৷ এমনভাবে অন্যায় করে সেটাকে প্রদর্শন করা হচ্ছে যেন মুসলিমরা তা দেখে ভয় পেয়ে যায়৷ তারা চুপ করে থাক, ভীত হয়ে থাক৷ এটাই বোঝাতে চাইছে সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদী সরকার৷

এশিয়াবিডি/মুজাম্মিল/সাইফ

আরও সংবাদ