চাঁদা তুলে সাঁকো নির্মাণ, দেখার কেউ নেই

নদী! কোথাও দুটি এলাকাকে এক করেছে আবার কোথাও দুটি এলাকাকে আলাদা করেছে। তেমনিভাবে মিলিত হয়েছে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সদর জায়ফরনগর ইউনিয়নের নয়াগ্রাম ও পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের খালেরমুখ গ্রাম।

প্রতিবছর দুই এলাকার মানুষ এক হয়ে সাঁকো নির্মাণ করেন। প্রতিদিন দুই পাড়ের লোকজন নানা কাজে এপারে-ওপারে আসা-যাওয়া করে।যত দিন যাচ্ছে সাঁকোটির জরাজীর্ণ হয়ে পড়তেছে। যার কারণে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও তারা চাঁদা তুলে সাঁকো নির্মাণের কাজটি শুরু করেছেন।

সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, নদীতে পাকার ১২টি খুঁটি স্থাপন করে এর ওপর বাঁশের ফালি বিছিয়ে সাঁকো নির্মাণের কাজ চলছে।শ্রমিকদের মধ্যে কেউ সাঁকোর ওপরে ফালিগুলো বিছিয়ে একটিকে আরেকটির সঙ্গে দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাঁধছেন। কেউ আবার করাত দিয়ে বাঁশ কেটে ফালি তৈরি করছেন।

এই এলাকার বাসিন্দা ফারুক আহমদ কাছের হাকালুকি হাওরের বোরো ধানের ক্ষেত দেখিয়ে বলেন, সেখানে নয়াগ্রামসহ দুটি ইউনিয়নের ১৫-২০টি গ্রামের লোকজনের জমি রয়েছে। ধান কাটার সময় হয়ে গেছে। ওই সাঁকো দিয়েই হাওরের ধান আনতে হয়। নয়াগ্রামের লোকজনকে প্রতি দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে সাঁকো পার হয়ে খালেরমুখ বাজারে যেতে হয়। এ ছাড়া এলাকার শিক্ষার্থীরা ওই সাঁকো দিয়ে আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে পড়ে। এলাকাবাসীর দুর্ভোগ দেখেই আমাদের এ সাঁকো তৈরীর পরিকল্পনা।

আরেক স্থানীয় বাসিন্দা জামাল হোসেন বলেন, সাঁকোটি ১৪০ ফুট লম্বা। এক বার তৈরি করলে প্রায় দুই বছর চলে। কারণ, বৃষ্টিতে বাঁশ পচে নষ্ট হয়ে যায়। অন্যান্য বার বাঁশের খুঁটি দিতেন। তবে এবার পাকার খুঁটি স্থাপন করেছেন। সাঁকোটি যাতে বেশি দিন টেকে-সে কারণেই এ ব্যবস্থা। সাঁকোটির নির্মাণকাজে প্রায় দেড় লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪০ হাজার টাকা চাঁদা উঠেছে। সপ্তাহখানেক আগে কাজ শুরু হয়েছে। সম্পন্ন হতে আরও চার-পাঁচ দিন লেগে যাবে। জামাল হোসেন ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, ‘মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছে গিয়া সহযোগিতা চাইছিলাম। কেউ করল না।’

নয়াগ্রামের বাসিন্দা প্রবীণ মুরব্বি ওয়াহেদ আলী বলেন, অনেক আগে থেকেই ব্রিজ নির্মাণ হবে শুনছি কিন্তু এখন ব্রিজ হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নাই । কত মাপজোক হইল। ব্রিজ হওয়ার কোনো খবরই নাই। চলাচল তো করা লাগব। এর লাগি এলাকার মানুষ অনেক আগে থাকিই চাঁদা তুলি (সাঁকো) বানায়।’

এলজিইডির জুড়ী উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল মতিন বলেন, ওই স্থানে ২০ মিটার দীর্ঘ একটি পাকার সেতু নির্মাণের ব্যাপারে মার্চ (২০২০) মাসে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি শেষ হওয়ার পর কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এশিয়াবিডি/মারুফ/কামরান

আরও সংবাদ