গরুতে শুরু, লজ্জাতে শেষ

মোঃ তোফায়েল হোসেন

গরুর হাঁটের সামনে বসে ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম একটা গরু তেড়ে আসছে সোজা আমার দিকে। হাতে একটা লোহার চেইন নিয়ে গণ্ডার সদৃশ্য ষাঁড়টার পিছন পিছন ছুটে আসছেন রিয়ার বড়ভাই।

পাড়ার সেরা সুন্দরী রিয়ার আমন্ত্রণেই আমি ওখানে গিয়েছিলাম। এমনিতেই প্রতিদিন লাইন দিয়ে পাড়ার ছেলেরা তার বাসার সামনে পাহারাদারের কাজটা খুব নিষ্টার সাথে পালন করতো। ফাঁকে একদিন আমার দৃষ্টিটা কেমন করে যেন পড়ে গেল তার দৃষ্টিতে।

আমিও লাইন দেয়ার মনস্থির করলাম। আমি কখনো কোনো মাস্তানি না কারলেও মাস্তান উপাধিটা পেয়ে গিয়েছিলাম বেশ আগেই। তাই হয়তো আমার অবস্থান দেখে নায়ক সাজতে আসা ছেলেরা স্থান ত্যাগ করলো।

গরুর হাঁটের পাশেই ছিল রিয়াদের বাসা। রিয়ার রুমটা ছিল দু’তলার গলিমুখী জানালার পাশেই। আমিও ঐ পাড়ার বাসিন্দা তবে বাসাটা ছিল পাড়ার একদম শেষ প্রান্তে।

রিয়ার প্রেমে পড়ার পর থেকেই আমার যাতায়ত বেড়ে গেল মোড়ের ঐ দোকানে। দোকানীও আমার জন্য বরাদ্দ করে দিল ছোট একটা বেঞ্চ। তবে আমি ওখানে বসতাম না, বেঞ্চটা নিয়ে রিয়াদের বাসার দিকে কিছুটা সরে এসে বসতাম।

মোবাইলে রিয়ার সাথে যোগাযোগ করার সব রকম চেষ্টা করে যখন ব্যর্থ হলাম তখন একটা চিরকুট ছোট পাথরে জড়িয়ে রিয়ার খোলা জানালায় ছুড়ে দিতে বাধ্য হলাম। ক্ষণকাল পরেই জানালাই উঁকি দিল রিয়ার অনিন্দ্য সুন্দর মুখ। আমাকে দেখে সে এমন এক হাসি দিল- মুহূর্তে আমি কপোকাত হয়ে গেলাম।

উত্তরটা পেয়েছিলাম আজ সকালে ঠিক একই ভাবে। রিয়াও জবাব লেখা কাগজ টুকরোটা পাথরে জড়িয়ে আমার দিকে ছুড়ে দিয়েছিল। তার হাতের নিশানা কেমন ছিল জানিনা তবে ছুড়ে মারা পাথরটা প্রচণ্ড জোরে আঘাত করেছিল আমার নিতম্বে। “মাগো” বলে হাতটা পিছনে নিতেই খিলখিল হাসি শুনে থমকে গেলাম। রিয়া বত্রিশ দাঁত বের করে যেন ভেংচাচ্ছে আমায়।

রিয়া লিখেছিল- “বিকালে এসো; আমি তোমাকে ভালোভাবে দেখতে চাই। ভালো যদি লেগে যায় ঈদের উপহার হিসেবে আজ সন্ধ্যায় ভালোবাসাটা কনফার্ম করে দেব।”

ভালো না লাগার মতো চেহারা ছিল না আমার। তারপরও ঘষে মোছে পালিশ করে বাবু সেজে গিয়েছিলাম। যেতে যেতে অজানা এক উৎকষ্ঠায় গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। দোকানির কাছে থেকে একটা প্রাণ ফ্রুট ডিংক ডান হাতে নিয়ে বাম হাতে করে বেঞ্চটা নির্ধারিত জায়গায় এনে যেই বসলাম সেই রিয়া এসে দাঁড়ালো জানালায়। আমি ভুলে গেলাম সব। হঠাৎ করেই তলপেটটা মোচড় দিয়ে উঠল।

আর সেই মুহূর্তে দেখলাম তেড়ে আসছে ষাঁড়টা। রিয়ার পরীক্ষায় পাস করবো বলে সাহস নিয়ে বসেই রইলাম দুই চোখ দু’দিকে রেখে। পরক্ষণেই দেখলাম রিয়ার বড় ভাই হাতে ধরা চেইনটা দিয়ে ষাঁড়টার মাংশল পিঠে ঠাস ঠাস করে বসিয়ে দিলেন দু’ ঘা। এক্সপ্রেস এঞ্জিনের মতো ধেয়ে আসতে লাগলো আতঙ্ক। সুঁচালো শিং যখন আমায় ছুঁই ছুঁই করছে ঠিক তখন প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে সব ভুলে লাফ দিয়ে দাড়ালাম। পা’য়ে বেধে উল্টে গেল বেঞ্চটা। ষাঁড় আর আমার মধ্যে প্রথম বাঁধা হিসেবে বেঞ্চটা কাজ করছে কিনা তা দেখার সময় নেই। সোজা দিলাম দৌড়। যখন রিয়ার জানালা অতিক্রম করছিলাম ছুটন্ত অবস্থায় ঘাড়টা একটু কাত করে দেখলাম- রিয়া হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

দৌড়াতে দৌড়াতে একসময় পিছনে তাকিয়ে দেখলাম আর দৌড়ানোর প্রয়োজন নেই ঠিক তখন আকষ্মিক সত্যটা অনুভব করলাম- রিয়ার হাসিটা যতটা সুন্দর ছিল তার ভাইয়ের আচরণটা ছিল ততটা রহস্যময়!

কিছুক্ষণ পরেই রিয়া এসএমএস করে আমাকে জানিয়েছিল- “তোমার দৌড়টা আমার ভালো লাগেনি। আরও গতি চাই আমার। তাই ভালোবাসা কনফার্ম করা গেল না। আগামী বছরের ঈদের দাওয়াত রইল। ভাইয়া বলেছেন- এবারের কোরবানির গরুর সাথে তুমি তো পারলে না, আগামী বছর পুনঃরায় পরীক্ষা হবে। যদি সেবার তুমি বিজয়ী হও তবে তিনি ভেবে দেখবেন আমার ছোট বোনটাকে তোমার ছোট ভাইয়ের কাছে বিয়ে দেয়া যায় কিনা। আর আরেকটা কথা- প্যান্টের নিচে যদি কিছু পরার অভ্যাস না থাকে তবে জীপারটা সম্পর্কে সতর্ক থেক!

দৃষ্টিটা অটোমেটিক চলে গেল দুই উরুর সংযোগস্থলে। অন্ধকারে কে যেন চুপচাপ বসে আসে দ্বার খোলে। রিয়ার কথা মনে হতেই লজ্জার কথা মনে হলো। কি আর করা; ভাঙ্গা মনে উদাস ক্ষণে ডান হাত দিয়ে ধীরে ধীরে টেনে দিতে বাধ্য হলাম লজ্জা ঘরের উন্মুক্ত সাটার।

লেখকঃ মোঃ তোফায়েল হোসেন
কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান 

আরও সংবাদ