চাকুরীর জন্য সিভি তৈরীর গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ

চাকুরীর জন্য সিভি তৈরী নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ।

১. যেকোনো কোম্পানিতে আপনি আপনার সিভি পাঠানোর পূর্বে, সে কোম্পানী ও পজিশন (পদ) এর উপর গবেষণা করতে হবে। অর্থাৎ সে কোম্পানীর মিশন, ভিশন, যে পদের জন্য আবেদন করছেন সে পদের দায়িত্ব-কর্তব্য ইত্যাদি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে আপনাকে আপনার সিভি কে নতুন করে সাজাতে হবে। যেনো কোম্পানি আপনার সিভিটা হাতে পেয়ে আপনার প্রতি আগ্রহী হয়। আপনি ফার্নিচার কোম্পানিতে, সাইট ইঞ্জিনিয়ার পদে আবেদনের সিভিতে, আপনার শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা লিখে কোম্পানির মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারবেন না।

২. Contact details : আপনার Resume তে আপনার বর্তমান contact details অবশ্যই Add করবেন। contact details বলতে আপনার বর্তমান ঠিকানা,মোবাইল নম্বর ও ইমেইল এড্রেস কে বুঝানো যেতে পারে।

Contact details লিখতে গিয়ে যে ভুল গুলো করবেন নাঃ
• Contact details এ অনেকেই একাধিক মোবাইল নম্বর লিখে দেন, যা মোটেও প্রফেশনাল লাগে না। আপনি Resume তে প্রয়োজনে ২টি মোবাইল নম্বর লিখতে পারেন। তবে মোবাইল নম্বর কোনোভাবেই ২ টির বেশি দিবেন না। এটা আপনাকে আনপ্রফেশনাল প্রমান করতে সাহায্য করবে।
• Contact details এ কেউ কেউ আবার ইমেইল এড্রেস দিতে ভুলে যাই বা দেই না। অনেকের আবার ইমেইল এড্রেসও নেই। এ ডিজিটাল যুগে ইমেইল এড্রেস না থাকা মানে আপনি অনেক কিছুতেই পিছিয়ে আছেন। আর কোনো কোম্পনিই পিছিয়ে থাকা লোক নিতে আগ্রহি হবে না।
• ইমেইল এড্রেস দেওয়ার সময় খেয়াল রাখবনে আপনার ইমেইল এড্রেস যেনো সাবলিল শব্দের হয়। angel.priya@mail.com, broken.heart@ mail.com এমন টাইপের ইমেইল এড্রেস আপনার Resume কে Unprofessional Look দিবে।
• ইমেইল এড্রেস অবশ্যই আপনার নামের সাথে মিল রেখে বানাবেন, যেমনঃ info.tech.ashraful@gmail.com । ইমেইল এড্রেস লিখার সময় অবশ্যই সব ইংরেজি ছোট হাতের অক্ষরে লিখবেন।
• দেশের বাহিরে আবেদন করার সময় অবশ্যই skype id/whatsapp যুক্ত করবেন এবং মোবাইল নম্বরে country code যুক্ত করবেন।

৩. Objectives অংশে অনেকেই লিখেন যেমনঃ seeking for a position, looking for a
position, want to get a job ইত্যাদি। যেগুলো হয়ত কোনো বড় ভাইকে তার সিভিতে লিখতে দেখেছেন, তাই আপনিও লিখে যাচ্ছেন। সত্যি বলতে এ লাইন গুলো আপনার সিভি বা Resume কে দুর্বল করে দেয়। আপনাকে এমনকিছু লিখতে হবে যেটা আপনার স্ট্রেংথ প্রকাশ করে, যেনো কোম্পানি বুঝে আপনাকেই তাদের দরকার।

৪. Education: শিক্ষাগত যোগ্যতা অংশ লিখতে গিয়ে অনেকেই দ্বিধায় পরে যায় কি দিয়ে শুরু করব। এখানে LIFO (Last in first out) পদ্ধতি ব্যবহার করতে বলা হয়। অর্থাৎ আপনি প্রথমে লিখবেন সর্বশেষ ডিগ্রি এবং সবার শেষে লিখবেন আপনার প্রথম ডিগ্রির বর্ননা।

৫. Experience: আপনার Resume এর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আপনার অভিজ্ঞতা অংশ যা আপনার চাকুরি পেতে বড় ভুমিকা রাখে। চাকুরীর অভিজ্ঞতা অংশ টি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে হবে। আপনার অনেক রকমের অভিজ্ঞতা থাকতে পারে। আপনি যখন যে কোম্পানির জন্য ,যে পোস্টের জন্য আবেদন করবেন, সে পদ ও কোম্পানীর সাথে ম্যাচ করে এমন অভিজ্ঞতা গুলো হাইলাইট করে প্রতিবার আপনার সিভি তৈরী করবেন। একটা কমন সিভি সব জায়গায় পাঠিয়ে দিলে, শুধু সিভি পাঠাতে থাকবেন, ডাক পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে, যাদের চাকুরীর অভিজ্ঞতা নেই তারা কি লিখবেন?
যাদের চাকুরীর অভিজ্ঞতা নেই, তারা শিক্ষা জীবনে করেছেন এমন কিছু প্রজেক্ট, জব, কর্মশালা , স্কাউটিং ইত্যাদি সম্পর্কে লিখবেন।

৬. Skill & Strenght: আপনার সিভি বা Resume এর আর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আপনার স্কিল ও স্ট্রেংথ। আপনি কি কি বিষিয়ে দক্ষ ,আপনার কি কি স্ট্রেংথ আছে তা আপনার সিভিতে হাইলাইট করে লিখে দিতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো হাইলাইট করবেন কিভাবে?
আপনার Resume বা সিভি কে হাইলাইট করার জন্য কিছু Power Word (managed, lead, maintained, organized, initiated, solved etc) ব্যবহার করতে পারেন যেগুলো চোখে পরলে আপনার Resume বা সিভির গ্রহণ যোগ্যতা বাড়বে।

৭. Simple format- আপনার সিভি এর ফরম্যাট হবে simple but complete. কমপ্লিট বলতে বুঝাচ্ছি আপনার Resume তৈরীতে অবশ্যই নিচের বিষয় গুলো খেয়াল রাখবেনঃ
• Clear & Concise – আপনার Resume অবশ্যই সুন্দর গুছানো ও কেবল মাত্র পোস্টের সাথে সম্পর্ক আছে এমন দরকারি তথ্য সংবলিত হতে হবে।
• Complete – Resume অবশ্যই সম্পূর্ণ হতে হবে। একটি কমপ্লিট সিভি বা Resume এর ফরমেট অনেক রকমের হতে পারে। তবে কমন কিছু ফরম্যাট আছে যা গুগলে সার্চ করলেই পাবেন।
• Consistent – আপনি আপনার Resume তে অবশ্যই কোন অপেশাদার ফন্ট বা স্টাইলিং ব্যবহার করবেন না। Resume বা সিভিতে Times New Roman, Arial এই দুইটা ফন্টকে বেশ প্রফেশনাল লাগে। ফন্ট সাইজ ১২ হওয়া উচিত।
• Resume বা সিভিতে কোনো প্রকারের কালারিং পরিত্যাজ্য। এমন কোনো কালার ব্যবহার করা উচিত না যা দেখতে অপেশাদার লাগে।
• Resume বা সিভি লিখার পেজ সাইজ A4 রাখা ভালো। লিখার সময় পেজ সেটাপে গিয়ে মার্জিন পরিবর্তন না করাই ভালো। Resume বা সিভি লিখার পর লিখা গুলার এলাইনমেন্ট অবশ্যই Justified করে দিতে হবে।
• Resume লিখার সময় আপনি যে কোম্পানির জন্য ও যে পদ এর জন্য আবেদন করবেন, সে পদ ও কোম্পানীর সাথে ম্যাচ করে এমন তথ্য উল্লেখ করে ১-২ পেজ এর মাঝে শেষ করা উত্তম।

৮. Photo: Resume বা সিভি তে অবশ্যই সদ্য তোলা কালার পাসপোর্ট ছবি যুক্ত করবেন। ছবি দেখতে যেনো প্রফেশনাল হয়। ছবিতে আপনার চুল-দাড়ি, গোফ, জামা ইত্যাদি অবশ্যই প্রফেশনাল হতে হবে। মনে রাখবেন আপনি যতই যোগ্য হোন না কেনো, চাকুরিদাতা আপনার সিভি বা রিজিউম পছন্দ না হলে আপনাকে ডাকবে না।

৯. Extra Curriculum Activities: অনেকে এ অংশটি লিখেন না বা গুরুত্ব দেন না। তবে অন্যসব চাকুরি প্রার্থীদের থেকে আপনার গ্রহণ যোগ্যতা বাড়াতে এ অংশটি আপনাকে সাহায্য করবে। আপনি আপনার শিক্ষা জীবনে যেসকল এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন সেগুলোর একটা গুছানো বর্ণনা এ অংশে লিখে দিবেন।

১০. References- Resume বা সিভির অন্যতম একটা অংশ হলো এটি। অনেকেই এ অংশটিতে খামখেয়ালি করে যা বড় ধরনের ভুল। রেফারেন্স হিসেবে ২ জনের নাম উল্লেখ করতে হয়। আপনার রেফারেন্স অংশে আপনার বর্তমান অফিসের আপনার নিয়ন্ত্রণকারী অফিসারের নাম দিতে পারেন। সাথে আপনার শিক্ষা জীবনের একজন শিক্ষকের নাম ও দিতে পারেন। তবে এমন কারো নাম দিবেন না, যার সাথে আপনার সুসম্পর্ক নেই। আর নাম দেওয়ার পর তাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে বলে রাখবেন যে, আপনি তাদের কে আপনার সিভিতে রেফারেন্স হিসেবে দেখিয়েছেন।

১১. A cover letter- সিভি বা রিজিউম কোথাও পাঠানোর আগে অবশ্যই কাভার লেটার সহ পাঠাতে হবে। কাভার লেটার কিভাবে লিখতে হয় সেটা নিয়ে গুগলে স্টাডি করতে পারেন। আমার পরবর্তী  আলোচনায় আমি এ ব্যপারে বিস্তারিত লিখব।

১২. Signature: সিভি বা রিজিউম এ অবশ্যই আপনার স্বাক্ষর অবশ্যই থাকতে হবে। স্বাক্ষর ছাড়া সিভি বা রিজিউম বাতিল বলে বিবেচিত হয়।

মোঃ আশরাফুল শেখ
জুনিয়র ইনস্ট্রাকটর
মৌলভীবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান

আরও সংবাদ