ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে করোনা; বাড়ছে সংক্রামণ ও মৃত্যু

বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এখন পৃথিবী জুড়ে ব্যাপক আকারে মৃতের সংখ্যা বাড়িয়ে তুলছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম গুলোর হিসাবে প্রায় ৩ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে করোনায়।  আক্রান্তের সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে লাগামহীন ভাবে। ভ্যাক্সিন বের না হলে মৃতের সংখ্যা কেমন হতে পারে তা ভাবলেও শরীরের পশম দাঁড়িয়ে যায়। আজ থেকে ৫০ বছর আগেও হয়তো মানুষ ভাবেনি পৃথিবী জুড়ে এমন তান্ডব চালাবে অদৃশ্য কোন এক ভয়ংকর রোগ। নামটাই যেমন আশ্চর্যমূলক ও ভয়ংকর। পৃথিবীর বুকে এমন কোন মানুষ নেই এখন করোনা নাম জানেনি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন সচরাচর এই রোগ আমাদের পাশেই। কিন্তু তা দেখার মতো কোন হদিস নেই। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এর বিভিন্ন রূপ অঙ্কন করে দেখালেও তার বাস্তব সদৃশ্য রূপ আজও কেউ খালি চোখে দেখতে পারেনি।

প্রকৃতিকে যখন মানুষ দখল করে নিজেদের রাজত্ব কায়েম করতে ব্যস্ত তখন করোনা যেন নীরব কথা না বলা বোবা প্রকৃতির পাশে যোদ্ধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নেই কোন বুলেট বোমার বা গুলির শব্দ। কখনো উপসর্গ দেখিয়ে প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। কখনো নীরব ভূমিকায় মানুষের দেহে প্রবেশ করছে।

বিশ্বের প্রায় বেশিরভাগ দেশ এখন করোনা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করছে। তবুও মত্যুর মিছিল থামাতে ব্যর্থ হচ্ছে তারা। চীনে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলেও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চালিয়েছে মহা তান্ডব। ইতালি আর স্পেনের এক সময় ছিল ভয়াবহ অবস্থা। এখন এই দেশ গুলো শান্ত হলেও ভালো নেই বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
এতোসব উন্নত দেশের এই ভয়াল অবস্থা দেখে বাংলাদেশের চিত্র স্মরণ করে সুখে প্রশান্তির ঘুম দেওয়াটা আমাদের জন্য অনেকটা বোকামি।

এশিয়ার ছোট্ট মধ্যম আয়ের এই দেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দিন দিন হু হু করে বেড়েই চলেছে। আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি থাকা সত্বেও গত ১ জুন থেকে সকল লকডাউন খুলে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। লকডাউন খুলে দেয়ার পর থেকে মৃতের সংখ্যা ৩ দশকের নিচে নামছেই না কোন ভাবে।

৪০ থেকে ২২ থেকে ৩৭ থেকে আবারও ৩৭ আবার ৩৫ তারপর ৩০। এটা ছিলো করোনায় গত ৬ দিনের মৃত্যুর পরিসংখ্যান।

আর আক্রান্তের হিসাব করলে দেখাযায়, ২৫৪৫ থেকে ২৩৮১ থেকে ২৯১১ থেকে ২৬৯৫ থেকে ২৪২৩ তারপর ২৮২৮।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেওয়া প্রতিদিনের তথ্য অনুযায়ী মৃত ও আক্রান্তের গত ৬ দিনের হিসাব একসাথে করলে বুঝাই যায় করোনায় গত ৬ দিনে কেমন ছিল বাংলাদেশের অবস্থা?

রোববার (৩১ মে) ১২ হাজার ২২৯ টি নমুনা সংগ্রহ করে ৫২ টি ল্যাবে ১১ হাজার ৮৭৬ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে করোনা আক্রান্ত হিসাবে শণাক্ত হয়েছেন ২৫৪৫ জন এবং মৃত্যু বরন করেছেন ৪০ জন।

সোমবার (১ জুন) ১১ হাজার ৪৩৯ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে করোনা আক্রান্ত হিসাবে শণাক্ত হয়েছেন ২৩৮১ জন এবং মৃত্যু বরন করেছেন ২২ জন।

মঙ্গলবার (২ জুন) ১৪ হাজার ৯০৫ টি নমুনা সংগ্রহ করে ৫২ টি ল্যাবে ১২ হাজার ৭০৪ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে করোনা আক্রান্ত হিসাবে শণাক্ত হয়েছেন ২৯১১ জন এবং মৃত্যু বরন করেছেন ৩৭ জন।

বুধবার (৩ জুন) ১৫ হাজার ১০৩ টি নমুনা সংগ্রহ করে ৫০ টি ল্যাবে ১২ হাজার ৫১০ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে করোনা আক্রান্ত হিসাবে শণাক্ত হয়েছেন ২৬৯৫ জন এবং মৃত্যু বরন করেছেন ৩৭ জন।

বৃহস্পতিবার (৪ জুন) ১৩ হাজার ৭৮৮ টি নমুনা সংগ্রহ করে ৫০ টি ল্যাবে ১২ হাজার ৬৯৪ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে করোনা আক্রান্ত হিসাবে শণাক্ত হয়েছেন ২৪২৩ জন এবং মৃত্যু বরন করেছেন ৩৫ জন।

শুক্রবার (৫ জুন) ১৪ হাজার ৮৮ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে করোনা আক্রান্ত হিসাবে শণাক্ত হয়েছেন ২৮২৮ জন এবং মৃত্যু বরন করেছেন ৩০ জন।

গত ৬ দিনে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৫৭৮৩ জন এবং মোট মৃত্যুবরণ করেছেন ২০১ জন, মোট সুস্থ্য হয়েছেন ৩৪২৯ জন।

এখনই যদি করোনা মোকাবিলা করা না যায় তাহলে দেশে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা আরোও বাড়বে। তাই প্রয়োজন আবারও দেশে সাধারণ ছুটি।

এশিয়াবিডি/এসএইচ/কামরান

আরও সংবাদ