অভিনয়
আজ রবিবার- ছুটির দিন। এই দিন সৌরভ জমিয়ে বাজার করে। দু-তিন রকম মাছ অবশ্যই থাকবে। তাই বাজারের ব্যাগ নিয়ে মাছের দোকানে পোনা মাছ, টিংড়ি মাছ আর কিছু মৌরলা মাছ কিনে টাকা মেটাতে যাবে পকেটে হাত দিয়ে দেখে মানিব্যাগ নেই। সর্বনাশ! পকেটমার হল! বাজারে ঢোকার মুখে একটু জটলা ছিল সেইসময় কী তবে মানিব্যাগটা হাওয়া হল! মাছের দোকানদার সৌরভকে আগে থেকেই চিনত। সে সৌরভের অবস্থা বুঝে মুচকি হেসে বলল- কি বাবু, গ্যাছে? এ মার্কেটে এখন কিছুদিন তেনাদের উপদ্রব হয়েছে বাবু। প্রায় প্রতিদিন কারও না কারও মানিব্যাগ হ্যপিস হচ্ছে। একটু সাবধানে থাকবেন তো!
– মাছগুলো রাখ। টাকা তো নেই আমার কাছে।
– কি যে বলেন বাবু! আমি কি আপনাকে চিনিনা? আপনাকে আজ এই প্রথম দেখছি? মাছগুলো নিয়ে যান পয়সা পরে সময় করে দিয়ে যাবেন।
মাছগুলো নিয়ে বন্ধু অজিতের দোকানে গিয়ে সব বলল, কিছু টাকা ধার দে ভাই। বাজার করে যাই। নাহলে আবার বাড়ী থেকে এখানে আসতে আসতে বাজার শেষ হয়ে যাবে।
অজিতের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাজার করতে যাবে এমন সময় পকেটে মোবাইল বেজে উঠল। রীনা ফোন করেছে।
– তুমি কে গো! বাজার করতে গ্যাছো মানিব্যাগটা বাড়িতে ফেলে!
– মানিব্যাগ বাড়িতে রয়ে গেছে? আর আমি এখানে বাজারে…
কিন্তু সর্বনাশ! মানিব্যাগটা যদি রীনা খুলে দেখে তাহলেই তো বিপদ! ওতেই তো রয়েছে সেই বিজ্ঞাপনের পেপার কাটিংটা!
চমকে উঠেছিল বলে মুছকি হেসে নিজেকে বোকা বলে গাল দিল সৌরভ। পুরনো একটা করাতকল বিক্রির বিজ্ঞাপন এটা। এটাতে অন্যকিছু যে আছে তা শুধু সে আর সুপ্তা ছাড়া আর কেউ জানেনা।
রহস্যময়ী এই সুপ্তা নামধারী কিছুদিন আগে হঠাৎ করে ডাকযোগে একটা চিঠি পাঠিয়েছিল সৌরভের অফিসে। চিঠিটা পড়ে চমকে উঠেছিল সৌরভ। তার কলঙ্কময় অতীত অধ্যায়ের একটা বিশ্রী ঘটনা এবং প্রেরকের বাধ্যগত না হলে রীনার কাছে তা প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকি বহন করছিল চিঠিটা।
পত্র প্রেরক বেশ শক্তভাবে জালে জড়িয়েছিল সৌরভকে। সে বাধ্য হয়ে সুপ্তার প্রস্তাব শুনতে রাজি হয়। তার সম্মতি জানিয়ে চিঠিতে বর্ণিত নির্দেশনা মোতাবেক একটা চিরকুট নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দেয়। পরদিন আবার একটা চিরকুট আসে। সেটায় এই বিজ্ঞাপনটার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয় এবং বিজ্ঞাপনের জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়; আরও বলা হয় বিজ্ঞাপন প্রাপ্তির পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে।
প্রায় একমাস পর বিজ্ঞাপনটা গতকালই প্রকাশিত হয়েছিল। অফিসে বসেই সে এটাকে কেটে নিয়ে মানিব্যাগে ঢুকিয়েছিল এবং অফিস থেকে ফেরার পথে তাদের বাসার পাশের পরিত্যক্ত সেই করাতঘর ঘুরে এসেছিল। কিন্তু পরবর্তী নির্দেশ সম্বলিত একটা কাগজ ছাড়া ওখানে কেউ ছিল না।
গতকালে সে কাগজটা পেয়েছিল সেটাতে আজ আবার আরেকটা জায়গায় যাওয়ার নির্দেশ ছিল। বাজারের ঝামেলায় বেশ দেরী হয়ে গেছে। বাজার নিয়ে বাসায় ফিরে ঘন্টাখানেকের মধ্যে আসছি বলে তাড়াতাড়ি আবার বেরিয়ে গেল সৌরভ। রাস্তায় নেমেই মানিব্যাগটা খুলে দেখল- যেখানে যা ছিল সব যথাস্থানেই আছে।
কিন্তু খেয়াল করলো না রীনা যথাস্থানে নেই। সে রান্নাঘর ছেড়ে পিছনের ব্যালকনিতে দাড়িয়ে সৌরভকে দেখছে আর মুছকি হাসছে।
এখানেও সৌরভ এক টুকরো কাগজ ছাড়া আর কিছু পায়নি। তবে কাগজে যা লেখা পেয়েছিল তাতে সে পাথর হয়ে গেল। লেখা ছিল- ঘরে ফিরে এসো; তোমার রীনা তোমারই থাকবে।
লেখকঃ কবি, প্রাবন্ধিক
কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার থেকে।
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান