মৌলভীবাজা‌রের রাজনীতির রাজকুমা‌রের বিদায়

আ‌জিজুর রহমান চ‌লে গে‌ছেন। মৌলভীবাজা‌রের রাজনী‌তি‌র অঙ্গ‌নে অন্তহ‌ীন শুন‌্যতা সৃ‌ষ্টি ক‌রে মানুষটা কিছুক্ষন আ‌গে বিদায় নিলেন চীরঘু‌মের দে‌শে।
সাদা লু‌ঙ্গি সাদা পাঞ্জাবী আর হা‌তে ব‌্যাগ আর প‌ত্রিকা নি‌য়ে মানুষটা আর কোন‌দিন হাট‌বেন না,তাঁর বু‌কের শহর মৌলভীবাজারে।

একজীব‌নে কী পান নি মানুষটা। মৌলভীবাজা‌র রাজনগ‌রের মানুষ এম সাইফুর রহমান‌কে হা‌রি‌য়েও তা‌কে এম‌পি বা‌নি‌য়ে‌ছে। তিনবার এম‌পি হ‌য়ে‌ছেন। বঙ্গবন্ধুর সা‌ন্নিধ‌্য পে‌য়ে‌ছেন।
শেখ হা‌সিনা তা‌ঁকে সং‌স‌দে হুইপ,কেন্দ্রীয় আওয়ামীলী‌গের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক বান‌ি‌য়ে‌ছেন নব্বইয়ের দশ‌কে। বৃহত্তর সি‌লে‌টে মরহুম আব্দুস সামাদ আজা‌দের সব‌চে‌য়ে কা‌ছের নেতা ছি‌লেন তি‌নি।

মহান মু‌ক্তিযু‌দ্ধে একজন রাজনী‌তিবিদ হি‌সে‌বে অসামান‌্য ভু‌মিকা রে‌খে‌ছেন। ভয়াবহভা‌বে শারী‌রিক নির্যাত‌নের শিকার হন পাক বা‌হিনীর হা‌তে।

তবু একজীব‌নে কী ক‌রেন নি তি‌নি?
যা চে‌য়ে‌ছেন রাজনী‌তি‌তে, সবই ক‌রে‌ছেন। ইউ‌নিয়নের চেয়া‌রম‌্যান থে‌কে আজ‌কের মন্ত্রী শাহাব উদ্দীন আহ‌মেদ প্রথমবার এম‌পির ম‌নোনয়ন পান তাঁরই হস্ত‌ক্ষে‌পে। গ্রাম থে‌কে তু‌লে এ‌নে হাইস্কুল শিক্ষক‌কে জেলা আওয়ামীলী‌গের সাধারন সম্পাদক বানি‌য়ে‌ছেন। তখনও জহুর‌া আলাউদ্দীন, সৈয়দা সায়রা মহসীনরা ছি‌লেন। তবু আ‌জিজুর রহমান পাথফাইন্ড‌া‌রে চাকুরী করা মরহুম হোস‌নে আর‌া ওয়া‌হিদ‌কে এম‌পি বা‌নি‌য়ে‌ছি‌লেন। আ‌জিজুর রহ‌মা‌নের ছায়ায় অ‌নেক নেতার জন্ম হ‌য়ে‌ছে। মৌলভীবাজা‌র জেলায় সব‌চে‌য়ে ‌বে‌শি সময় ধ‌রে আওয়ামী রাজনী‌তির নিয়ন্ত্রন ছিল তাঁর হা‌তে। সৈয়দ মহসীন আলী, আব্দুস শহীদ, সুলতান মনসুর,শাহাবু‌দ্দিন আহ‌মেদ থে‌কে নেছার আহমদ, জেলায় সব জৈষ্ট‌্য রাজনী‌তি‌বিদ‌দের তি‌নি তুই ব‌লে স‌ম্বোধন কর‌তেন। সেই অ‌ভিভাবকত্ব তি‌নি শুধু বয়স দি‌য়ে অর্জন ক‌রেন নি। পদ,পদবি ক্ষমতা কখ‌নে‌া তা‌ঁ‌কে দা‌ম্ভিক ক‌রে তুল‌তে পা‌রে‌নি। তি‌নি যখন সংস‌দের হুইপ, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধ‌ারন সম্পাদক তখনও তা‌কে রা‌ত্রিবেলায় শহ‌রের ঘোষপ‌ট্টির গ‌লি দি‌য়ে বের হ‌য়ে সন্তপ‌র্নে খুব ধীরপা‌য়ে চাদনীঘা‌টের ব্রিজ পে‌রি‌য়ে একা বাড়ী ফির‌তে দেখা যেত।

ব‌্যা‌ক্তি আ‌জিজুর রহমান কোন‌দিন টাকা বানাবার জন‌্য রাজনীত‌ি ক‌রেন নি।‌ নি‌জের বল‌তে কিছু ছিল না। ব‌্যবসা বানিজ‌্য ক‌রেন নি।
কোন‌দিন কোন মানুষ‌কে গা‌লি দি‌য়ে‌ছেন, উচ্চস্ম‌রে কথা ব‌লে‌ছেন; একথা তাঁর রাজনৈতিক শত্রুরাও বল‌তে পার‌বে না।
বি‌য়ে সংসার কোনটাই ক‌রেন‌নি কোনকা‌লে মানুষটা।

তবু জীব‌নের শেষ দিন পর্যন্ত সচল ছি‌লেন। স‌ক্রিয় ছি‌লেন রাজনী‌তি‌তে। সর্বশেষ চার বছর আ‌গে তীব্র প্রতিদ্বন্দীতা পুর্ন জেলা প‌রিষদ নির্বা‌চনে জয়ী হ‌য়ে দা‌য়িত্ব পালন কর‌ছি‌লেন জেলা প‌রিষদ চেয়‌ারম‌্যান হিসেবে।

ভা‌বুন তো একবার; বয়স যখন আ‌শির দুয়া‌রে, তখনও তি‌নি সার্বক্ষ‌নিক রাজনী‌তি কর‌তেন। কোথায় পে‌তেন তি‌নি এত অনু‌প্রেরনা ? সংসার,সন্তান কোনটাই তো ছিল না ম‌ানুষটার।

তাঁর রাজনী‌তি, তাঁর সম্প‌তি‌তে সরাস‌রি কোন উত্তরাধীকার ‌রে‌খে যান নি তি‌নি।

হজ ক‌রে ফেরার পর জীব‌নের শেষ‌দি‌কে নামাজ কখ‌নো কাজা কর‌তেন না।

আ‌জিজুর রহমা‌নের মৃত‌্যু‌তে মৌলভীবাজার সদর রাজনগ‌রের মানুষ তাদের জীবিত সর্বশেষ আদ‌র্শিক জন‌নেতাকে হারাল। স্বাধীনতা পুরস্কারটা নিজ হা‌তে পাওয়া হল না।

আ‌মি ছাত্র রাজনী‌তির দিনগু‌লি‌তে মৌলভীবাজা‌রের আওয়ামী রাজনী‌তির আ‌রেক দিকপাল সৈয়দ মহসীন আলীর এক‌নিষ্ট অনুসারী হি‌সে‌বে আপনা‌কে দে‌খে‌ছি নি‌মোর্হভা‌বে। আ‌জিজুর রহমান, মহসীন আলীরা বার ব‌ার জন্ম নেন না। তা‌দের মত নেতা মৌলভীবাজা‌রের মানুষ কখনো পা‌বে না।

আপনার ব‌্যা‌ক্তিগত জীব‌নের ত‌্যাগ তি‌তিক্ষা‌, সংগ্রাম মৌলভীবাজা‌র রাজনগ‌রের মানুষ বহুকাল উদাহরন হি‌সে‌বে মনে রাখ‌বে। আপনার শুন‌্যতা বহু‌দিন সভা ক‌রে থাক‌বে। আপনার না থাকাটা মৌলভীবাজা‌রের বু‌কের বিউগ‌লে বিহব‌লে বা‌জ‌বে।
আল্লাহপাক অবশ‌্যই আপনা‌র ভাল কাজগু‌লির জন‌্য উত্তম প্রতিদান দেবেন।
বিদায় চীরক‌ুমার, বিদায় আমার শহ‌রের আদ‌র্শের রাজনী‌তির রাজকুমার। আপনার চীরনিদ্রা শা‌ন্তিময় হোক।

লেখকঃ সাধারণ সম্পাদক, ইউকে বাংলা প্রেসক্লাব

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান
আরও সংবাদ