আমার সাংবাদিকতায় এম সাইফুর রহমান ও ইলিয়াস আলী
ওয়ান ইলেভেনের আগে পরের এখন যারা দেশের মুল ধারার গনমাধ্যমে রির্পোটিংয়ে সাংবাদিকতায় আছেন,তাদের মধ্যে মরহুম অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমানকে নিয়ে জাতীয় কোন গনমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি হার্ডকোর নিউজ আমারই করা। এম সাইফুর রহমানের ছোট ভাই মরহুম রফিকুল ইসলাম মানি চাচা,পুত্রবধু রোজিনা রহমান,একান্ত সচিব যুবদল নেতা তিতুমির কলেজের সাবেক এজিএস শামসুর রহমান সামছু ভাইয়ের সাথে সাংবাদিক হিসেবে সপ্তাহে তিন চারদিন কথা বলার একটা সম্পর্ক গড়ে উঠে।
ওয়ান ইলেভেনের শুরুতে।
মরহুম এম সাইফুর রহমানকে জোর করে বিএনপির সংস্কারপন্থী অংশের চেয়ারম্যান করা, তার পুত্র এম নাসের রহমান সহ সিলেট বিভাগে তার সকল অনুসারী প্রভাবশালী নেতাকে জেলে ঢুকানো,কমলগঞ্জের আদিবাসী নৃত্যশিল্পী সুতপা সিনহার নাম জড়িয়ে খবরের হঠাৎ ছড়িয়ে পড়া,তার ক্যান্সার ধরা পড়া,ব্যাংককে চিকিৎসা করাতে যাওয়া, ফিরে এসে মৌলভীবাজারে শখের বাগান বাড়ীতে নিসঙ্গ দিনযাপনের সময়েও একটা বাহিনীর কর্মকর্তাদের অব্যাহত হুমকি ধামকির মধ্যে দিয়ে সে সময়টা কেটেছে তুমুল প্রভাবশালী এই নেতার।
সেই সময়ের দেশের দুই লক্ষাধিক প্রচারসংখ্যার দৈনিক আমাদের সময়ে সাইফুর রহমান সংক্রান্ত নিউজগুলোর অনেকগুলি ব্রেকিং আমার বাইনেইমে করা।
আমার সাংবাদিকতা জীবনের সৌভাগ্য আমি এই প্রয়াত উন্নয়নের রাজনীতির কবি, ঝানু রাজনীতিবিদের সেই সময়কার নিউজগুলো করতে পেরেছিলাম। বাজেটের প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষনিক নিতে পারতাম তার একান্ত সচিব শামছু ভাই সুযোগটি করে দিতেন।
তৎকালীন মহাসচিব মান্নার ভুইয়ার মতো দলের অনেক কী পয়েন্টে থাকা নেতাদের চেয়ে বেগম খালেদা জিয়া বহুগুন বিশ্বাস করতেন,গুরুত্ব দিতেন এম সাইফুর রহমান সাহেবকে। সেই সাইফুর রহমানকে দিয়ে ওয়ান ইলেভেনের কারিগররা খালেদা জিয়াকে চ্যালেঞ্জ করতে চেয়েছিল।
ইলিয়াস আলীর মতো সাবেক ছাত্রনেতা জোট সরকারের দাপুটে এমপি,দলে তুমুল প্রভাবশালী সিলেটী নেতাকেও উর্দ্ধত আচরনের জন্য সাইফুর রহমানের কাছে সরি চাইতে হয়েছিল। খালেদা জিয়াই ইলিয়াস আলীকে সাইফুর রহমানের কাছে ফের পাঠান। তাই ইলিয়াস আলীকে দুঃখ প্রকাশ করতে হয় বিএনপির ক্ষমতার শেষ দিকে।
জোট সরকার আমলেও এম সাইফুর রহমানের মন্ত্রী ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য থাকা অবস্থাতেও পুরো সিলেটে দলে নিজের আলাদা একটা বলয় তৈরী করেন ইলিয়াস আলী। ক্ষমতার সংঘাতে শরীক হন।
সেই ইলিয়াস আলীর সাথে সংবাদকর্মী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন তার একান্ত ঘনিষ্টজন কেন্ত্রীয় ছাত্রদলের তৎকালীন সহ সভাপতি মিজানুর রহমান মিজান । ইলিয়াস ভাই ছিলেন রাগী, একগুয়ে কিন্তু ঈমানদার নেতা। তার সাথে নিউজ নিয়ে কথা হলেই তিনি বলতেন, ‘তোমারে ওউ রাজনৈতিক নিউজটা যে লাখান করতায় করছলাম মিয়া,করছো না তো’ । প্রায়ই সংবাদের সুত্র ধরে যোগাযোগ আমাকে তার কাছের কয়েকজন সংবাদকর্মীর একজনে পরিনত করে।
কেননা সেই ওয়ান ইলেভেনের শুরু থেকে ২০১২ পর্যন্ত আমিই ছিলাম দৈনিক আমাদের সময়ের একমাত্র ষ্টাফ রির্পোটার। সেই কয়েক বছরে সিলেট বিভাগের রাজনীতি নিয়ে কোন বিটের চীফ রির্পোটার নিউজ করলেও আমাকে সাথে নিয়েই করেছেন। বাকীগুলো সব আমারই বাইনেমে ছাপা হওয়া।
পাশাপাশি আহমদ নূর সম্পাদিত সিলেট প্রতিদিন,আজিজ আহমদ সেলিম সম্পাদিত উত্তরপুর্বেও কাজ করেছি কিছু বছর। উত্তরপুর্বর মালিক ও সম্পাদক শুরু থেকে নাদেল ভাই থাকলেও শুরু থেকে পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদক ছিলেন আজিজ আহমদ সেলিম।
সাংবাদিকতা আমাকে সেই ইলিয়াস আলীরও সেই সময়ে কাছে যাবার সুযোগ করে দেয়। তিনি যে রাতে গুম হন সেই রাতে তার মোবাইলে সর্বশেষ যে কয়েকটি কল ঢুকেছিল তার মধ্যে আমার ০১৭১৫ ৯৩০৯৪৯ নাম্বারটি ছিল। ফোনে লম্বা সময় কথা বলার ফাকে খবরের খোজঁ নিতে হলে তাকে কল দিতে দিতাম রাত ১২ টার পরেই।
তিনি নিখোঁজ হবার পরদিন সকালে যখন তার সন্ধানে যখন সিলেট বালাগঞ্জ বিশ্বানাথ সহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভের খবর সংগ্রহ করছি,তখন শুরু হল আরেক উৎপাত। একটি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন দিনভর ফোনে যন্ত্রনা করছিলেন। তারা কললিষ্টে দেখেছেন,ইলিয়াস আলীর নাম্বারে সে রাতে ঢোকা শেষ ফোনটি নাকি আমার নাম্বার ০১৭১৫ ৯৩০৯৪৯ নাম্বা থেকে গেছে। একাধিক বড় অফিসার কথা বললেন। তাদেরকে তাদের মতোন করে উত্তর দিলাম। বিষয়টা সাথে সাথে তৎকালীন চীফ রির্পোটার (সার্বিক) দুলাল আহমদ চৌধুরী, মৌলভীবাজারের সিনিওর সাংবাদিক আবদুল হামিদ মাহবুবকে বিষয়টা জানালাম।
ঢাকার সমকাল,বিডিনিউজ থেকে সাংবাদিকরা একের পর এক ফোন দিয়ে দিয়ে হয়রান করে ফেলছেন। তারা ইলিয়াস আলীর সর্বশেষ ফোনালাপের সুত্র ধরে নিউজ করতে চান।
এরমধ্যে সিলেটে সমকালে ব্যুরো চীফ বা ষ্টাফ রির্পোটার হিসেবে কর্মরত কোন একজন সাংবাদিকও ইলিয়াস আলীর সর্বশেষ ফোনালাপের সুত্র ধরে ফোন দিলেন। ০১৯১৪ ১৩০৩০০ নাম্বারের আমার অপর ফোন নাম্বারে তখন কথা বলছিলাম উত্তরপুর্বের বার্তা সম্পাদক তাপস দাশ পুরকায়স্থের সাথে। তিনি ও প্রান্ত থেকে আমাকে বললেন,তুই ফোন রাখ, আমি চয়নের সাথে কথা বলছি।
সেই ইলিয়াস আলী আর কোনদিন ফিরবেন না,একথাটা আজো বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।
প্রত্যেকটা মানুষের এক একটা শুরুর গল্প থাকে। ২০০৩ সালের দুঃসময়ে মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগ আহবায়ক কমিটির সর্বকনিষ্ট সদস্য ছিলাম। সেই জায়গা থেকে সাংবাদিকতায় এসে বিএনপির বৃহত্তর সিলেটের দুই কিংবদন্তী এম সাইফুর রহমান,এম ইলিয়াস আলীর মতো নেতাদের সাথে খবরের খোঁজে যোগাযোগ থাকাটা সেই সময়ের সোনালী স্মৃতি।
দেশের সামগ্রিক রাজনীতি অর্থনীতিতে একজন অর্থমন্ত্রী হিসেবে,বিএনপির নেতা হিসেবে,
সাইফুর রহমানের সাথে বিএনপির সিলেটী আর কোন নেতার তুলনা কোনদিন হবে না। মরহুম মন্ত্রী মাহবুব আলী খান,মরহুম স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর পর এম সাইফুর রহমান বৃহত্তর সিলেটের উন্নয়নের রাজনীতির একজন রাজনৈতিক কবির নাম। একজন সাইফুর রহমানের বর্নাঢ্য কর্মময় জীবনে তার প্রেরনাদাত্রী হিসেবে তার বিদূষী স্ত্রী মরহুমা দুররে সামাদ রহমানের বিশাল একটি অবদান ছিল। এম সাইফুর রহমানকে ইতিহাস যুগে যুগে মুল্যায়ন করবে। তার মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই অতল শ্রদ্ধা।
তেমনি বৃহত্তর সিলেটে বিএনপির বিশেষত বিরোধী দলের রাজনীতিতে এম ইলিয়াস আলীর শুন্যস্থানটি বহুকাল হয়ত শুন্যই থেকে যাবে।
আজ থেকে একযুগ আগে সব মুহুর্তগুলি সেলফোনে বন্দি করা যেত না। রিল ক্যামেরায় এম সাইফুর রহমানের সাথে কিছু ছবি যে দুজন ফটোগ্রাফারের তোলা তাদের সাথে যোগাযোগ করেছি। নারায়ন দেব সুমন জানালেন, পুরনো রিলগুলি নেই। ইলিয়াস আলীর সাথে কখনো কোন ছবি তোলা হয় নি।
আমার সাংবাদিকতার সোনালী স্মৃতির ধুলো না জমা জ্বল জ্বলে অক্ষরে এম সাইফুর রহমান,এম ইলিয়াস আলীর স্মৃতিগুলি আজীবন লেখা রবে।
লেখকঃ প্রবাসী সাংবাদিক ও সেক্রেটারি, ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব।
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান