চার বন্ধুর মাছের ঘ্যারে লাখ টাকার স্বপ্ন

চাকরির পিছনে না ঘুরে নিজেই এখন উদ্যোক্তা হচ্ছে এদেশের যুবকরা। করোনা মহামারীর কবলে পড়ে যখন স্থবির পুরো বিশ্ব, চাকরির বাজারেও তখন পুরোটাই ধ্বস। সবকিছু স্থবির হয়েগেলেও মানুষের দৈহিক চাহিদা তো আর স্থবির হয়নি। বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যেতে হবে শেষ নিঃশ্বাস থাকার আগে পর্যন্ত মাথা উচু করে দাঁড়াতে হবে ঘোনে ধরা সমাজের সামনের সাড়িতে।
বিশ্বের সব দেশেই সময়টা এখন খারাপ যাচ্ছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ বেকারত্ব নিয়ে ঘুরছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এর মতে পুরো বিশ্বে প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে আছে। অনেকে কর্মহীন হয়ে ঘরবন্দী নানা পেশার মানুষ।
ঠিক তখনি মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার মুন্সিবাজার এলাকার চার বন্ধু মিলে শুরু করেন একটি মাছের খামার। লক্ষাধিক লাভের আশায় তারা ৪৫০০০ টাকার পোনা মাছসহ সর্বমোট ৬৩০০০ টাকা ব্যয় করে শুরু করেন খামারের অগ্রযাত্রা।
চার বন্ধুদের মধ্যে উপজেলার করিমপুর গ্রামের বাসিন্দা মামুনুর রশীদ (২৯), ব্রাহ্মণগ্রামের বাসিন্দা টিউশন মাষ্টার সাদিফ রিশাত রাহেল (২৬), ও খলাগ্রামের ব্যাবসায়ী বিষ্ণু সেন (৩৮) ও নির্মাণ শ্রমিক অজিত ধর (৩০)।
সপ্রতি মাছের খামারে গিয়ে কথা হয় মামুনুর রশীদের সাথে। তিনি বলেন, আমরা ৩ একর যায়গাকে দুইটা অংশে পৃথক করে এই খামার তৈরি করি। জাতভেদে উভয় অংশে তেলাপিয়া- ৩৯ কেজি, রুই – মৃগেল – ২২ কেজি, সরপুঁটি – ৬ কেজি, ঘাসকার্প – ৮ কেজি, শিং – ৪ কেজি, কৈ – ২ কেজি, পাঙ্গাস – ৭ কেজি পোনা মাছ ছাড়ি।
মামুনুর জানান, বর্তমানে তেলাপিয়া মাছের ওজন প্রায় ২০০ – ২৫০ গ্রাম, রুই মাছ ৪০০ – ৬০০ গ্রাম, ঘাসকার্প ৪০০-৪৫০ গ্রাম, পাঙ্গাস প্রায় ৩০০ গ্রাম, সরপুটি ৪০০-৪৫০ গ্রাম, মৃগেল প্রায় ৩০০ গ্রাম ।

তিনি বলেন, ১৫ দিন পর পর যখন পানি কালো হয়ে যায় তখন আমরা চুন দেই । হঠাৎ মাছের একটি রোগ দেখা দেয়ায় মৎস্য অফিসে যোগাযোগ করলে ওনি আমাদের একটি ঔষদের নাম লিখে দেন। পরবর্তীতে এই ঔষধ খাওয়ানোর ফলে মাছ রোগমুক্ত হয়ে যায়।
মামুনুর রশীদ বলেন, এই খামার থেকে আমরা ২ লক্ষাধিক টাকা লাভের আশা করছি। তাছাড়া আগামীতে আরোও ৩-৪ টা মৎস্য খামার করার পরিকল্পনা আছে।
সাদিফ রিশাত বলেন, চার বন্ধু মিলে একটা সিদ্ধান্ত নেই যে এভাবে বেকার সময় নষ্ট না করে কিছু একটা করার জন্য। তাই আমরা প্রাথমিক অবস্থায় এক ধরনের শখের বশে এই মৎস্য খামার শুরু করি। যদিও লাভের আশায় আমরা খামার শুরু করিনি, কিন্তু জীবনে চলার তাগিদে আয়ের একটা উৎস থাকলে দিন শেষে হাসিমুখে ঘরে ফিরতে পারি।
এ বিষয়ে রাজনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জহিরুন্নবী জানান, মাছ চাষ এখন অনেক লাভজনক কমার্শিয়াল বিজনেস। সাধারণত রুই জাতীয় মাছ থেকে ১-৪ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ থাকে। এছাড়াও দেশীয় প্রজাতীর পাবদা, গুলসা, টেংরা, শিং, মাগুর এগুলোতে আরোও বেশি লাভ থাকে । করোনার প্রভাব থাকা সত্বেও আমাদের মাছের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বরং দিনদিন মাছের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনার কারণে চাষীরা আশানুরূপ দাম পাচ্ছে না। তবুও এটা আমাদের জন্য লোকসানের কিছু নয়। কারন মাছ যতদিন যাবে তত বড় হবে সাথে দামও বৃদ্ধি পাবে।
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান

