ধর্ষন রুখতে পুরুষের দরকার মানবিক হবার
শিরোনামটি সব পুরুষের জন্য নয়। যারা প্রথমে একজন মানুষ, তারপর একজন নারী বা পুরুষ, তাদের জন্যই লেখাটা।
অবস্থা বাস্তবতা দেখে মনে হয়, আমাদের আগে মানুুষ হবার দরকার। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় পুরুষের আরো মানবিক হবার শিক্ষা দরকার, মুল্যবোধ শেখবার চর্চা দরকার ঘর থেকেই।
আদিম সাম্যবাদী সমাজ থেকে শুরু করে বর্তমান পুঁজিবাদী সমাজ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরেই অপরাধ বিদ্যমান ছিল।তবে সব সমাজের অপরাধের বৈশিষ্ট্য, ধরণ ও প্রকৃতি একই রকম ছিল না। বর্তমান বাংলাদেশের অধিকাংশ অপরাধ কর্মকান্ডে মদদদাতা হচ্ছে রাজনৈতিক দলের নেতারা, তা যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন!
চলতি সময়ে বাংলাদেশে ধর্ষন ব্যাপকহারে বেড়েছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র(আসক)-এর ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী সারা দেশে ধর্ষনের ঘটনা আগের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়েছে।গত বছর সারা দেশে ধর্ষন ও গণধর্ষণের শিকার ১হাজার ৪১৩ নারী ও শিশু।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতিমাসে গড়ে ৮৪টি শিশু ধর্ষনের শিকার হচ্ছে।এছাড়া এক বছরে যৌন নির্যাতন বেড়েছে ৭০ শতাংশ।
বাংলাদেশ পুলিশের রেকর্ড অনুযায়ী বিগত বছর ৫ হাজার ৪০০ নারী এবং ৮১৫টি শিশু ধর্ষনের অভিযোগে মামলা হয়।
পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে শিশু থেকে বৃদ্ধা প্রত্যেক বয়সের নারী ধর্ষনের শিকার হচ্ছে। এবং ধর্ষকও কিশোর থেকে বৃদ্ধা প্রত্যেক বয়সের।অবাক করার বিষয় হলো এই ধর্ষন কর্মকান্ডে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ জড়িত, পুরোহিত থেকে শুরু করে মাদ্রাসার শিক্ষক পর্যন্ত!!
অনেক সময় ধর্ষনের জন্য নারীর পোশাককেই দায়ী করা হয়, যেটার আদৌ কোনো ভিত্তি নেই।
তবে মনস্তাত্ত্বিকভাবে ব্যাখ্যা করতে গেলে রাশিয়ান বিজ্ঞানী প্যাভলভ-এর কনসেপ্ট বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।বিজ্ঞানী প্যাভলভ কুকুরের দেহে পরিপাকের শরীরবৃত্ত নিয়ে গবেষণা করেন।কুকুরের খাওয়া পরিবেশনের দায়িত্বে ছিলেন গবেষণাগারের নির্দিষ্ট টেকনিশিয়ান। প্যাভলভ লক্ষ্য করলেন শুধু খাবার দেখলেই কুকুরের লালাক্ষরণ হতো না,যে টেকনিশিয়ান খাবার পরিবেশন করতেন তার গায়ের সাদা Lab-Coat দেখলেই লালাক্ষরণ শুরু হয়ে যেত, এই উদ্দীপনাকে তিনি মানসিক উদ্দীপনা নামকরণ করেন। বিজ্ঞানী প্যাভলভ গবেষণার খাতিরে খাবার হিসেবে মাংসচূর্ণ দেয়ার পর তিনি লালাক্ষরণের পরিমাণ রেকর্ড করে রাখেন। সঠিক পরিমাণ মাংসচূর্ণ মুখে গেলে নির্দিষ্ট পরিমাণ লালাক্ষরণ হতে দেখা যায়। প্যাভলভ ক্ষুধার্ত কুকুরের মুখে মাংসচূর্ণ দেয়ার আগমুহূর্তে ঘন্টা বাজান, অন্তত ১২ বার ঘন্টাধ্বনির পর উদ্দীপনার প্রতি সাড়া পাওয়া যায়। এবং শুধু ঘন্টাধ্বনি শুনলেই কুকুরের লালাক্ষরণ শুরু হয়। ক্ষরণের পরিমাণ শুধু মাংসচূর্ণ দিলে যতোখানি হয় ঠিক ততখানি।
মানুষের মধ্যেও কিন্তু পশুত্ব রয়েছে।
বিখ্যাত নিউরোলজিস্ট এবং
সাইকিয়াট্রিস্ট ফ্রয়েড বলেছিলেন, যাকে আমরা মন বলি সেটি আসলে তিনটি সত্ত্বার সমন্বয়ে গঠিত, “ইড, ইগো এবং সুপার ইগো।”
‘ইড’ মূলত মানুষের জৈবিক সত্ত্বা,এটিকে “মন যা চায় তাই” এর সাথে তুলনা করা যায়। এই ‘ইড’ মানুষ এবং পশু উভয়ের মাঝেই বিদ্যমান।’ইড’ এর পুরোটাই লোভ লালসায় ভরপুর। এক কথায় ইড হচ্ছে মানুষের ভিতরের সুপ্ত পশু।
সুপার ইগো মানুষের বিবেক।ইড যখন কামনা বাসনা পূরণ করতে চায় তখন সুপার ইগো একে বাধা দেয়। তবে এই বাধা দেয়ার ক্ষমতা নির্ভর করে ব্যক্তির নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের উপর।
তাই শিশু-বৃদ্ধা কিংবা নারীর পোশাক এখানে দায়ী হতে পারে না।
অন্যান্য অপরাধের মতো ধর্ষনের ক্ষেত্রেও শুধু আইনের প্রয়োগই যথেষ্ট নয়। আইন ঘরে ঘরে গিয়ে কারো নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে না, কারণ অনেক সময় নিজের ঘরও নিরাপদ নয়।
তাই ধর্ষন বন্ধের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের পাশাপাশি নৈতিকতা ও মূল্যবোধ জাগ্রত করার বিকল্প নেই।
লেখকঃ স্নাতক পর্যায়ের রাজনীতি সচেতন শিক্ষার্থী ।
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান

