দেশবাসীকে সালাম জানিয়েছেন সাঈদী

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) যাকাত তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ ও আয়কর ফাঁকির মামলায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।
সোমবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার পর পুরান ঢাকার বকশিবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিতর অস্থায়ী ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১-এ বিচারক সৈয়দা হোসনে আরার আদালতে তাঁকে হাজির করা হয়। আজ অর্থ আত্মসাতের মামলাটির চার্জশুনানি অনুষ্ঠিত হবে। আয়কর ফাঁকির মামলায় দেলোওয়ার হোসাইন সাঈদী একমাত্র আসামি।
একসময়কার বিশ্ববরেন্য এই মুফাস্সিরে কুরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে দুটো মামলায় বিপুল সংখ্যক আইন শৃংখলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যমে কাশীমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সকাল সাড়ে নয়টায় মাদ্রাসা ময়দানে আনা হয়।
যুদ্ধাপরাধী মামলায় আটককৃত এই জামায়াত নেতার আইনজীবি বলেন, প্রায় শতাধিক আইনজীবী পূর্ব থেকেই বিশেষ আদালত চত্বরে তার জন্য অপেক্ষা করি। প্রিজন ভ্যান থেকে হুইল চেয়ারে করে তাকে যখন আদালতে প্রবেশ করানো হয়। তখন স্বভাব সুলভ কন্ঠে তিনি উচ্চস্বরে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে সবাইকে সালাম জানান। আমরা আইনজীবীগন তার সামনে উপস্হিত হতেই তিনি আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত খোঁজখবর নেন। তার সংগঠনের দায়িত্বশীলদের কুশলাদি জানতে চান।
আদালতের কার্যক্রম শেষ হলে তার আইনজীবী হিসেবে একান্ত পরিবেশে সাক্ষাতের সুযোগ পাই। তার দুই পুত্র শামীম সাঈদী ও মাসুদ সাঈদী আমাদের সাথে বিশেষ আদালতে তাদের বাবার সাথে একটু সাক্ষাতের জন্য যান। গেটে তাদেরকে আটকে দেয়া হয় ।
আমরা আদালতে লিখিতভাবে আবেদন করি সাঈদী সাহেবের সাথে তার সন্তানদের সাক্ষাতের সুযোগ দানের জন্য। বিজ্ঞ আদালত আমাদের আবেদন না মন্জুর করেন।
গত ৯ মাস যাবৎ করোনা ভাইরাসের কারনে আল্লামা সাঈদীর সাথে পরিবারের কোন সাক্ষাৎ নেই। আমরা আশা করেছিলাম আজ সাক্ষাতের সুযোগ হবে। কিন্তু অনুমতি না পাওয়ায় তা হলোনা।
আল্লামা সাঈদী আইনজীবীদের সাথে সাক্ষাতকালে বলেন, কথিত মামলার বিষয় বস্তুর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। হয়রানির উদ্যেশ্যেই এ আদালতে আমাকে হাজির করা হয়েছে।
তিনি বলেন মহান রাবুবুল আলামীন কুরআন শরীফে ২৫ জন নবীর কাহীনি উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তাদের পরীক্ষা নিয়েছেন। আমি দুর্বল মানুষ।আমি দেশবাসীর নিকট দোয়া চাই যেন আল্লাহ ঈমানের পরীক্ষায় আমাকে পাস করার তওফিক দেন।
আল্লামা সাঈদী শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তার বয়স ৮২ বছর। তিনি একা চলাফেরা করতে পারেন না। অপরের সহযোগীতা ছাড়া বসতে বা দাড়াতে পারেন না। তিনি মানসিক ভাবে অনেক দৃঢ আছেন। সকল কষ্টের বিনিময়ে তিনি যেন আদালতে আখেরাতে আল্লাহর নিকট পুরস্কার পান সে কামনা করেন। তিনি দেশবাসীকে সালাম জানিয়েছেন ও দোয়া করতে বলেছেন।
উল্লেখ্য, অর্থ আত্মসাতের মামলায় দেলোওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ ছয়জন আসামি। অপর পাঁচ আসামি হলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ লুৎফুল হক, মসজিদ কাউন্সিল ফর কমিউনিটি অ্যাডভান্সমেন্টের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, বন্ধুজন পরিষদের প্রধান সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ ইউনুস, ইসলামী সমাজ কল্যাণ কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ কাউন্সিলের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল হক। এদের মধ্যে দেলোওয়ার হোসাইন সাঈদী কারাগারে আছেন। আবুল কালাম আজাদ এবং আব্দুল হক পলাতক রয়েছেন। অপর তিন আসামি জামিনে আছেন।
ইফার যাকাত তহবিলের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) আইয়ুব আলী চৌধুরী ২০১০ সালের ২৪ মে শেরেবাংলা নগর থানায় এ মামলা করেন।
মামলাটি তদন্ত করে দুদকের সহকারী পরিচালক ওয়াজেদ আলী গাজী ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
এদিকে, দুই কোটি ২৭ লাখ ৪০ হাজার ১২০ টাকা আয় গোপন করে তার ওপর প্রযোজ্য ৫৬ লাখ ৪৬ হাজার ৮১২ টাকা কর ফাঁকির অভিযোগে ২০১১ সালের ১৯ আগস্ট এনবিআর মামলা করে। পরের বছর ১৫ সেপ্টেম্বর মামলায় সাঈদীর বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন আদালত।
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ নিয়ে করাগারে আছেন।
এশিয়াবিডি/ ডেস্ক/ এমকে