বিশ্বকাপ নয় যেন ‘অভিশাপ’!

বিশ্বকাপ নয় যেন 'অভিশাপ'!

প্রতি চার বছর পর পর আয়োজিত হয় ফুটবল বিশ্বকাপ। তা নিয়ে পুরো বিশ্বে চলে নানা আয়োজন। কারণ ফুটবল একটি রাজকীয় খেলা। অনেকের ধারনা মতে ৯০ মিনিটের মধ্যে খেলা শেষ হয়ে যাওয়ায় হয়তো এই খেলার দর্শক বেশি। দীর্ঘ সময় ধরে খেলা দেখা সবার জন্য সুবিধার হয়ে ওঠে না।

প্রতিটা দেশের মানুষেরই নিজ দেশের ফুটবল দল পছন্দ। কিন্তু সব দেশ তো আর বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পায় না। তাই যেসব দেশগুলো বিশ্বকাপে সুযোগ পায় না, সেসকল দেশের মানুষরা খেলার মান দেখে বিভিন্ন দল সমর্থন করে থাকেন। বাংলাদেশেও ঠিক তাই। সবাই চায় বাংলাদেশ বিশ্বকাপ খেলুক। কিন্তু সেটা যেন একটা রূপকথার গল্পের মতো। তবে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশ একদিন ফুটবল বিশ্বকাপ মাতাবে।

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষরাই আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের সমর্থন করেন। তাছাড়া অনেকে আবার জার্মানি, পর্তুগাল, ইংল্যান্ড সহ নানা দলকেও সমর্থন করেন। কেউ কেউ প্রিয় খেলোয়াড়ের জন্য তার দলকে সমর্থন করে থাকেন। আবার কেউ সর্বাধিক বিশ্বকাপ জয়ী দলকে সমর্থন করেন।

বিশ্বকাপ শুরু হলে প্রিয় দলের পতাকা দিয়ে বাড়ি, গাড়ী, গ্রাম, শহর রাঙিয়ে তুলেন ভক্তবৃন্দরা। সোস্যাল মিডিয়া জুড়ে হয় তোলপাড়! বিভিন্ন দলের সমর্থকরা তাদের দল নিয়ে যুক্তি প্রদর্শন করতে থাকেন। আসলে সবাই-ই চায় তার প্রিয় দলটা বিশ্বকাপ জিতুক। কিন্তু এটা তো এতো সহজ বিষয় নয়। যারা খেলে তারাই বুঝে খেলাটা কতো কঠিন। তবুও সমর্থকরা যুক্তি দিয়ে তাদের দলকে ফাইনালের মঞ্চে দেখেন। এটা ভালো! অন্তত যুক্তির চর্চা তো হলো।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সমর্থকদের খেলা দেখার একটি চিত্র বিশ্বজুড়ে ভাইরাল হয়। ছবিগুলো স্থান পায় আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের বিভিন্ন গণমাধ্যমেও। আমার মতে, এটা বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয়।

যাইহোক, খেলা হচ্ছে বিনোদনের একটা অংশ। মানুষ মন ভালো করার জন্য খেলা দেখে। প্রিয় দলের খেলা উপভোগ করার জন্য খেলা দেখে। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশের চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই খেলা নিয়ে প্রতিদিন নানা ধরণের অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটছে। একদলের সমর্থকেরা আরেক দলের সমর্থকের সাথে ঝগড়া, বিবাদ, এক পর্যায়ে তা বড় ধরণের সংঘর্ষে রূপ নেয়।

এই খেলার জন্য অনেক মায়ের বুক খালি হয়েছে। আদরের একমাত্র সন্তানকেও হারিয়েছেন মায়েরা। চারিদিক যখন ফুটবল আমেজের উল্যাসে উত্তাল! তখন নিরলে বসে অশ্রু ঝরাচ্ছেন কলিজার টুকরো সন্তান হারানো সেই সকল মায়েরা। এই বিশ্বকাপ কারো কাছে আনন্দের, আবার কারো কাছে ‘অভিশাপ’!

এই অভিশাপের বিশ্বকাপ যেন আর না আসুক। আর যেন কোনো মায়ের সন্তান হারানোর অশ্রু মাঠিতে না পড়ে। খেলাটা যেন ওই বড় পর্দা অবধি সীমাবদ্ধ থাকে।

আমরা সৃষ্টির সেরা জীব। অথচ আমাদের বিবেক, বুদ্ধি আজ কোথায়? আমরা যেসকল দেশ নিয়ে মারামারি করছি তারা তো এমনটা করে না! তাহলে কেন আমরা তাদের নিয়ে এতো বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করবো? কেন এই খেলার জন্য ভাইয়ের সাথে ভাইয়ের বিবাদ হবে? কেন বন্ধুর সাথে বন্ধুর সংঘর্ষ হবে? এটাই কি তবে খেলা দেখার মূল উদ্দেশ্য? এখনো সময় আছে, আসুন নিজের বিবেক, বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে খেলাটাকে শুধুমাত্র বিনোদনের অংশ হিসেবেই যেন নেই।

লেখকঃ কামরান আহমদ
তরুণ সংবাদকর্মী।

আরও সংবাদ