আজ প্রতিবন্ধী দিবস
আজ ৩ ডিসেম্বর ৩৩তম আন্তর্জাতিক এবং ২৬তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস। বিশ্বজুড়ে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধিতার শিকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও সুরক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ১৯৯২ সাল থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে ১৯৯৮ সাল থেকে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য এ দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন আজ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।
প্রতিবন্ধি দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ, বিকশিত নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে প্রতিবন্ধী জনগণ’।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের জনসংখ্যার ১৫% শতাংশ লোক অর্থাৎ ১ বিলিয়ন লোক কোনো না কোনোভাবে প্রতিবন্ধীতা নিয়ে বসবাস করছে। এর মধ্যে ৪৫০ মিলিয়ন লোক মানসিক বা স্নায়ু রোগে ভুগছে এবং এদের দুই–তৃতীয়াংশ লোক তাদের এ সমস্যার জন্য ডাক্তার বা স্বাস্থ্য কর্মীর কাছে আসে না। কারণ এতে সামাজিক বা লোকের কাছে হেয় হবার সম্ভবনা আছে বলে মনে করে। তাছাড়া প্রতিবন্ধী লোকেরা নানা কুসংস্কার বা বঞ্ছনার শিকারও হয়ে থাকে। এ সমস্ত প্রতিবন্ধী লোকেরা বেশির ক্ষেত্রে চিকিৎসার পরিবর্তে অপ–চিকিৎসা করে থাকে। যা তার সমস্যাকে আরো ভয়াবহ বা মারাত্বক করে ফেলে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আরেকটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ৬৬ মিলিয়ন লোক মস্তিস্কের আঘাত জনিত কারণে নানা ধরনের পঙ্গুত্ব বরণ করছে। প্রতি ১৬ জন শিশুর মধ্যে ১ জন শিশু অটিজম আক্রান্ত। কিছু কিছু প্রতিবন্ধীকতা আছে যা স্বাভাবিকভাবে চোখে পড়ে না। কেউ বা কিছু অনুমান করতে পারে না যে তার মধ্যে কোন কোনভাবে সীমাবদ্ধতা আছে। এর মধ্যে সাধারণত আচরণগত সমস্যা অন্যতম। যেমন কিছু শিশু অতিমাত্রায় চঞ্চল, কথা বলার সমস্যা, লেখার সমস্যা। এগুলোর কারণ সাধারণত নির্ণয় করা যায় না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যার জন্য জীন গঠিত সমস্যাকে দায়ী করা হয়। অনেক সময় মস্তিস্কের জন্মগত ক্রটির কারণে শিশুর শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে সিটিস্ক্যান ও এমআরআই আমাদের দৃষ্টি প্রসারিত করেছে। অনেক শিশু ডাউন সিনড্রম নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। অধিক বয়সে কোন নারী সন্তান জন্ম দিলে কিছু চেহারাগত, দৈহিকগত বা অঙ্গের সমস্যা নিয়ে শিশুটি জন্মগ্রহন করে। এখানেও জীন সমস্যাকে দায়ী করা হয়।
সমাজসেবা অধিদফতরের এক জরিপের সবশেষ তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩৫ লাখ ২১ হাজার ৬০৬ জন। এর মধ্যে ২১ লাখ ৩২ হাজার ৭৮৭ জন পুরুষ, ১৩ লাখ ৮৫ হাজার ৯১১ জন নারী ও ২ হাজার ৯০৮ জন তৃতীয় লিঙ্গের।
প্রতিবন্ধীতার ধরন বিবেচনায় অটিজম ৯০ হাজার ৪০৮ জন। শারীরিক প্রতিবন্ধিতা ১৮ লাখ ২৯ হাজার ১১৭ জন, দীর্ঘস্থায়ী মানসিক ও অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধিতা ১ লাখ ৩২ হাজার ৭৩০ জন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা ৪ লাখ ৭২ হাজার ৫০৫ জন, বাকপ্রতিবন্ধিতা ২ লাখ ৮৮২ জন, বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা ২ লাখ ২৯ হাজার ৮ জন, শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭৭ জন, শ্রবণ দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা ১৫ হাজার ৬৩ জন, সেরিব্রাল পালসি ১ লাখ ৩১ হাজার ১৩৯ জন, বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধিতা ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯২৭ জন, ডাউন সিনড্রোম ৭ হাজার ১০৩ জন ও অন্যান্য প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২০ হাজার ১৮৭ জনকে সেবা দেয়া হচ্ছে।
সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ ৩৩তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও ২৬তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস পালনে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি এক বার্তায় বলেন, “গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। এই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার আত্মহুতির বিনিময়ে আমরা বাংলাদেশকে আজ নতুন রূপে পেয়েছি। এ দেশকে প্রতিবন্ধী-অপ্রতিবন্ধী নির্বিশেষে সবার জন্য বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র-জনতার স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় দেশের সুস্থ, অবহেলিত,পশ্চাৎপদ, দরিদ্র ,এতিম প্রতিবন্ধী গণঅভ্যুত্থানে আহত ছাত্র-জনতাসহ অনগ্রসর মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহ বহুমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছে।”