নাকিবের ক্যামেরায় বিরল প্রজাতির ধলাতলা-শালিক!
বাংলাদেশ ছোট্ট দেশ হলেও সর্বমোট ৭৩০ টি পাখির দেখা মিলেছে। দেশের উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণপূর্ব অঞ্চলের (ভারতীয়) এশীয় বেশ কিছু প্রজাতির পাখির বিস্তৃতি রয়েছে। তারই ফলশ্রুতিতে, সেসব অঞ্চলের কিছু পাখি বিচ্ছিন্নভাবে প্রায়ই তাদের উপস্থিতি দেখা যায়। এর মধ্যে অন্যতম ধলাতলা-শালিক। পাখিটি মোটামুটি বিরল দর্শন! এই পাখি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনিয়মিত ভাবে সিলেট, চট্টগ্রাম এবং ময়মনসিংহ অঞ্চলে দেখা গিয়েছে বলে জানা যায়। পাখি দেখা বা পাখির ছবি তোলার সুবাদে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মোটামুটি যাতায়াত নাকিব’দের। তাঁর ব্যক্তিগত পছন্দ ও পারিবারিক সূত্রে সিলেটে যাতায়াত-টা একটু বেশিই হয়। যেহেতু বিগত বছরগুলোতে সিলেট অঞ্চলে Great Myna বা ধলাতলা-শালিক অনিয়মিত হলেও দেখা গিয়েছে। সেই থেকে মনে আশার সঞ্চার হয় কবে তার দেখা পাবো ভাগ্য সহায় হলে ছবিও তুলবো এই আশায় মগ্ন।
নাকিবদের সাথে কথা বলে হুবহু তুলে ধরা হলো তাঁর রোমাঞ্চকর গল্পের কথা, গত এক বছরে অন্তত বার পাঁচেক সিলেটে গিয়ে এদের অনেক খোঁজাখুঁজির পরও পাখিটির কাঙ্খিত দেখা পায়নি।
তবে এবারের গল্প কিছুটা ভিন্ন। সিলেটে তাঁদের নিয়মিত যাতায়াত এবং কিছুটা চেনা-জানা থাকায়, বন্ধুপ্রতীম অনুজ ডাঃ রিদওয়ান খুব জোর অনুরোধ করলো, তাকে সাথে নিয়ে সিলেটে যেতে। উদ্যেশ্য সেখানকার কানাইঘাট নামক এলাকার সংশ্লিষ্ট হাওরে পরিযায়ী পাখি দেখা ও ছবি তোলা। যেমন কথা তেমন কাজ, সিলেট শহরের সু-পরিচিত মুখ, পাখি প্রেমী ও আলোকচিত্রী শামীম খাঁন ভাইয়ের সাথে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক থাকায় পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বেগ পেতে হয়নি। পরদিনই রাতের বাসে ঢাকা থেকে সিলেট!
সিলেটে পৌঁছে, সকাল-সকাল পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী যথারীতি নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত হলাম। এদিকে শামীম খাঁন ভাই আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন। শামীম ভাইয়ের পূর্বপরিচিত সিএনজি চালককে সাথে নিয়ে ছুটলাম কাঙ্খিত গন্তব্যে। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে মানু্ষের উপস্থিতি খুব কম। কিছুক্ষণ পরপর একজন-দুজনকে দেখা যাচ্ছে, মহিষের পাল চড়াতে। আমরাও কিছুক্ষণ গাড়িতে চড়ে ,কিছুক্ষণ পায়ে হেঁটে এদিক সেদিক দেখছিলাম আর ছবি তুলছিলাম। বেশকিছু পরিযায়ী হাঁসের ঝাঁকের দেখা পেলাম আশেপাশের জলাভূমিতে। শামীম ভাইয়ের পরমার্শে বেশ কিছুটা দূরের ভিন্ন একটি হাওর এলাকায় যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। সেখানে নাকি ভিন্ন-ভিন্ন প্রজাতির বহু হাঁসের সমাগম ঘটেছে। কিছুদূর সিএনজি চালিত অটোরিকশায় গিয়ে বাকিটা পায়ে হাঁটা পথ। সিএনজি চলছে, আমি আর রিদওয়ান এক মনে প্রকৃতির অকৃপণ সৌন্দর্য্য উপভোগ করছি। শামীম ভাইয়ের ডাকে সৎবিৎ ফিরে পেতেই রীতি মতো চক্ষু চড়কগাছ! কিছুটা দূরে একদল মহিষের আশপাশে ঘোরাঘুরি করছে বেশকিছু ঝুঁটিওয়ালা শালিক! তবে আকারে কিছুটা বড়! হ্যাঁ! বহুল কাঙ্খিত ধলাতলা-শালিক। কাছে গেলে উড়ে যায় পাছে, সেই আশঙ্কা থেকে সিএনজিতে বসেই অপলক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাদের দেখলাম। এবার ছবি তোলার পালা। তারা যেনো বিরক্ত না হয়, সিএনজিতে বসেই ক্যামেরার জুম সক্ষমতার সর্বোচ্চটা ব্যাবহার করে একদম নিশ্বাস বন্ধ করে একের পর এক ক্লিক করে গেলাম। তারপর আমি সরে গিয়ে রিদওয়ানকে সুযোগ করে দিলাম। আমরা কোনোভাবেই চাচ্ছিলাম না আমাদের দেখে তারা বিরক্ত হোক বা ভয় পেয়ে উড়ে যাক। এভাবেই কয়েক মিনিট পালা করে দেখা আর ছবি তোলা চললো কাঙ্খিত এই পাখিটির। হঠাৎ করেই বেরসিক ফিঙে এসে বাগড়া দেয়ায় আমাদের এই কয়েক মিনিটের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার ইতি ঘটলো! উড়তে উড়তে বহুদূর মিলিয়ে যাওয়া পর্যন্ত আমরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম দীর্ঘদিনের আরধ্য এই পাখিটিকে৷ ক্ষণিকের একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেই সাথে সাথে তৃপ্তির ঢেঁকুর-ও তুললাম। অবশেষে চক্ষু-মনের বিবাদ ভঞ্জন হলো। এতোদিন খোঁজেও কাঙ্খিত ধলাতলা-শালিক দেখতে না পাবার অপেক্ষা এবং আক্ষেপের গল্পের নটে গাছটি মুড়িয়ে দিয়ে আমরা ছুটে চললাম পরিযায়ী হাঁসের খোঁজে।