প্রতি ইউনিট পৌনে ছয় টাকায় নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আসবে বাংলাদেশে

নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আসছে ইউনিট পৌনে ছয় টাকায়

প্রায় সাত মাস দরকষাকষি শেষে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির মূল্য নির্ধারণে সমঝোতায় পৌঁছেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও ভারতীয় প্রতিষ্ঠান গ্রান্ধি মালিকা অর্জুনা রাও (জিএমআর) করপোরেশন। এই প্রতিষ্ঠানটি নেপালে উৎপাদিত প্রতি ইউনিট জলবিদ্যুৎ পৌনে ছয় টাকায় (৫ টাকা ৭৫ পয়সা) বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করবে। সরকার বলছে, শিগগিরই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘শিগগিরই সব বিষয়ে জানানো হবে। বিষয়গুলো এখনও প্রক্রিয়াধীন।’ তবে, ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের মূল্য কত ঠিক হয়েছে, তা তিনি জানাননি।

 

পিডিবির এক কর্মকর্তা জানান, গত সপ্তাহে জিএমআর-এর সঙ্গে একটি দরকষাকষি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে মূল্যের বিষয়টি নির্ধারিত হয়।’ তিনি জানান, ‘গত এপ্রিলে ঢাকায় সমঝোতার জন্য বৈঠক হয়। কিন্তু তখন জিএমআর-কে বিদ্যুতের মূল্য কমাতে বললে তারা রাজি হয়নি। বাংলাদেশের পক্ষেও এত বেশি মূল্যে বিদ্যুৎ কেনা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তাদের সঙ্গে আরও কয়েক দফা আলোচনা হয়। সবশেষ তারা প্রতি ইউনিট জলবিদ্যুৎ ৫ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে। তবে, ডলারের দামের সঙ্গে মূল্য ওঠানামা করবে।

পিডিবি জানায়, জিএমআর নেপালে ৯০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। এখান থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে বিক্রি করবে তারা।

 

এর আগে জিএমআর প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য ১০ দশমিক ৫৮ সেন্টে বিক্রির প্রস্তাব দেয়। মূল্য অনেক বেশি হওয়ার কারণে দুই দেশের মধ্যে দরকষাকষি শুরু হয়। দরকষাকষির পর নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৫ টাকা ৭৫ পয়সা।

 

এ বিষয়ে পিডিবির এক কর্মকর্তা জানান, আগে আমরা শুধু ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতাম। এখন ভারতের সঙ্গে নেপালও যুক্ত হচ্ছে। শিগগিরই ভুটানের সঙ্গেও আমরা সমঝোতায় যাবো। নেপালের এই বিদ্যুৎ ভারত হয়ে বাংলাদেশে আসবে। এক্ষেত্রে ভারত তাদের সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করে বিদ্যুৎ আমদানি করার সুযোগ দিলে তাদের সঞ্চালন চার্জ পরিশোধ করতে হবে। না হয় বাংলাদেশ আলাদা লাইন নির্মাণ করেও ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে পারে। তবে, শুরু থেকে ভারতের কোম্পানি বিদ্যুৎ ভাইপার নিগম লি. (এনভিভিএন)-কে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে রেখেছে জিএমআর। ভারত থেকে এখন যে বিদ্যুৎ কিনছে বাংলাদেশ, তার একটি বড় অংশই সরবরাহ করছে এনভিভিএন।

 

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত সপ্তাহে জিএমআর পাওয়ারের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছিল। তাদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করে পিডিবির প্রতিনিধি দল। দুই দলের আলোচনার ভিত্তিতেই এই মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিদিন ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ‘নো ইলেক্ট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ভিত্তিতে এই বিদ্যুৎ কেনা হবে। ফলে কোনও ক্যাপাসিটি চার্জ থাকবে না।

 

মূল্য নির্ধারণের পর কী করা হবে—জানতে চাইলে পিডিবির এক কর্মকর্তা জানান, মূল্যের বিষয়টি এখন সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে তোলা হবে। কমিটি অনুমোদন দিলে জিএমআর-এর সঙ্গে পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট (পিপিএ) সই করবে পিডিবি।’

 

কবে নাগাদ এই বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে নেগোশিয়েশন কমিটির এক সদস্য বলেন, জিএমআর-এর কেন্দ্র নির্মাণ করতে ছয় বছর সময় লাগবে। এর ফলে বিদ্যুৎ আসতে আরও ছয় বছর অপেক্ষা করতে হবে বলেও তিনি জানান।

আরও সংবাদ