স্বাধীনতা ও তরুণ্যের ভাবনা


বীর বাঙালি জাতি ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত পাকিস্তানের সমস্ত অপশাসন, শোষণ, বঞ্চ্যনা, নির্যাতন, নিপিড়ন, বৈষম্য ও ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে, তাই কোন বাঁধাই আমাদের কাছে বাঁধা হতে পারে না। বাঙালির আত্মত্যাগ ও আন্দোলন সংগ্রামের সুদীর্ঘ রক্তাক্ত পথ অতিক্রম করে অর্জিত হয়েছে ইতিহাসের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মহান স্বাধীনতা। এই আত্মত্যাগ, বিসর্জন, বীরত্ব দিয়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে তা বর্তমান সময়ে সঙ্কট মোকাবেলায় যাতে প্রেরণা হয়ে আসে তা গভীরভাবে চর্চা ও জ্ঞানার্জন করতে হবে; তাহলে নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের অমলিন স্মৃতি কোনদিন বিস্মৃত হবে না। বর্তমান প্রজন্ম মাথা উঁচু করে বাঁচতে ও চলতে সাহায্য করবে। কালের বিবর্তনে মানুষ অনেক দুঃসহ যন্ত্রণা-বঞ্চনা-দুঃখ-কান্না-বেদনার কথা ভুলে যায়। তেমন পরবর্তী প্রজন্মকে জানিয়ে সত্যিকারের দেশপ্রমিক সচেতন নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার প্রথম পাঠশালা পরিবারের দায়িত্বও কম নয়। স্বাধীনতা প্রাপ্তির অর্ধশতকে তরুণ প্রজন্মের কাছে এমনটি প্রত্যাশা করতে পারি।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করে সাজানো হয়েছে। এসব পড়ে তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সম্পর্কে কিছুটা জানতে পারছে। আজ জন্ম নেওয়া প্রতিটি শিশুর চোখে সোনার বাংলার স্বপ্ন। তাদের চোখে সে স্বপ্ন ফোটাতে আমাদের কাজ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তথ্য তাদের জানাতে হবে। তরুণদের মধ্যে একটি বড় অংশ এখনও দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের গোড়ার কথা জানে না। জানার আগ্রহ নেই বলা যাবে না, তবে তা খুবই সামান্য। তাই স্বাধীনতা সংগ্রামের কোনো বিভ্রান্তি রাখা যাবে না। নতুন প্রজন্মের অনেকের মধ্যে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিষয়ে জানাশোনা তলানিতে। দীর্ঘ ৯ মাসের ৩০ লাখ বাঙালির রক্ত আর লক্ষ লক্ষ নারীর ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া এ স্বাধীনতার সঠিক ব্যবহার আমরা আজও করতে পারিনি ও পারছি না। যুদ্ধ সংগ্রাম মৃত্যু লাঞ্ছনা ও চরম আত্মত্যাগের মাধ্যমে বাঙালি বিজয় লাভ করেছিল। স্বীকৃতি লাভ করেছিল লাল সবুজের একটি পতাকা, একটি গর্বিত সার্বভৌমত্ব। স্বাধীনতার দীপ্ত ঘোষণার মধ্য দিয়ে সেই দিন নিপীড়িত ও বঞ্চিত বাঙালী জনগণের শোষন মুক্তির প্রত্যাশা অর্জনে পেয়েছিল এক নতুন দিক নির্দেশনা, নতুন মাত্রা। স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালি একাট্টা হয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিল ঐক্যবদ্ধ সশস্ত্র সংগ্রামে। মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ আর যুদ্ধের লক্ষ্য, স্বাধীন দেশের পতি দায়িত্ব-কর্তব্য এসব বোঝাতে হবে। কোনটা স্বাধীনতার চেতনা আর কোনটা স্বাধীনতার চেতনা নয়, তার মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট করে তুলে ধরতে হবে। কারণ আজকের শিশু, তরুণ যুবারাই আগামীর ভবিষ্যৎ। তারাই আমাদের নতুন দিগন্তে পথ দেখাবে। আজকের পজন্মকে সেই চেতনায় দেশ গড়তে হবে। এগিয়ে যেতে হবে। কিন্তু আমরা সেই চেতনা থেকে কি দূরে সরে যাচ্ছি। স্বাধীনতার এতগুলো বছর পেরিয়ে গেলেও কেন দুর্নীতিমুক্ত হতে পারছিনা। এখানে ধনী-গরিবে বৈষম্য সর্বত্রে ভেদাভেদ গড়ে উঠেছে। আমাদের দেশ এমন হওয়ার কথা ছিল না। কষ্টে অর্জিত এ দেশটা আরো এগিয়ে চলার কথা ছিল। কিন্তু বারবার থমকে দাঁড়িয়ে পড়ছে। তরুণদের অনেকেই বুদ্ধিদীপ্ত চিন্তাভাবনায় এগিয়ে যাচ্ছে ঈর্ষণীয়ভাবে। ইতিহাস-ঐতিহ্য, রাজনৈতিক গতিধারা সব বিষয়ে খোঁজখবর করার অভ্যাস গড়ে উঠছে তাদের। তাদের মতান্তর, লেখালেখি, আলাপ-আলোচনাতে এর প্রমাণ মেলে। এ পজন্মের তরুণরা এসব নিয়ে গবেষণাও করছে। পড়াশোনা করছে। তবে এটাও ঠিক, এর সংখ্যা নগণ্য। বাংলাদেশের বয়স এখন অর্ধশতকে। এ বয়সে একজন মানুষকে যেমন পরিপূর্ণ হিসেবে সমাজের মানুষ দেখতে চায়, তেমনি একটি গতিশীল রাষ্ট্রের গর্বিত নাগরিক হওয়ার বাসনাও কম নয়। স্বাধীনতার শুভ অর্জন মূল্যায়ন করে স্বাধীনতার প্রত্যাশিত লক্ষ্য অর্জনে এগুতে হবে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ দূর করে অসাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে আজকের স্বাধীনতা দিবসের শপথ। দারিদ্র পীড়িত মানুষের অধিকার দুঃখ, ব্যর্থতা ও হতাশা দূর করে একটি অর্থনৈতিক নির্ভর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে তরুণ প্রজন্ম। বাঙালির প্রতিজ্ঞায় এবং সংগ্রামের অঙ্গিকারে উদ্দীপ্ত হয়ে বাঙালির আত্মপরিচয়ে গৌরবে উজ্জল মহিয়ান হয়ে উঠে। দেশপ্রেমের অনুভূতিতে স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বাঙালি জাতি আনন্দে গৌরবে শ্রদ্ধায় উজ্জীবিত হয়। বর্তমান প্রজন্ম আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নিজেদের সফলতা এবং ব্যর্থতা দেখার চেষ্টা করে। আত্মজিজ্ঞাসায় জেগে উঠে। স্বাধীনতা শৃঙ্খল ও শোষনের গ্রাস থেকে নিজের মুক্তি শিক্ষা দেয়। মানবিক চাহিদা থেকে শুরু করে জীবনের নিরাপত্তা। শিক্ষিত বেকার শব্দটি যেখান থেকে নির্বাসিত হবে চিরতরে। কর্মক্ষম একটি মানুষও কর্মহীন থাকবে না। বেকারত্বের কারণেই পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে অপরাধ বেড়ে যায়। আধুনিক রাষ্ট্রের ব্যাখ্যা নতুন করে দেওয়ার কিছু নেই। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। পিছু পিছু নয়, পথ চলতে হবে পাশাপাশি। আধুনিক বিশ্বের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গতিবিধিও লক্ষ রাখতে হবে সচেতনভাবে। বর্তমান প্রজন্ম বিশ্বাস করে সুখী সমৃদ্ধ সৌন্দর্যময় বাংলাদেশ গড়ার। শোষনহীন একটি স্বাধীন সমাজ ব্যবস্থার। স্বাধীনতার লক্ষ্যও ছিল এদেশের দুঃখী মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন। তরুণ প্রজন্ম বিশ্বাস করে দেশের উন্নয়ন শিক্ষা সংস্কৃতিকে। আত্ম উন্নয়নের পথে স্বাধীন ভাবে অগ্রসর হওয়ার পথ।
আমাদের দেশের শিক্ষার মানকে যুগোপযুগী ও যথার্থ করে তুলে যুগের সাথে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শতভাগ শিক্ষিত মানুষ থাকবে। মননশীলতায় বিরাজ করবে আত্মবিকাশে অনুকূল পরিবেশ। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করে তরুণ প্রজন্মকে মানব সম্পদে পরিণত করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে উপলব্ধি করতে পারব। স্বপ্নের বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি দৃঢ় ভিত্তির উপর দাড়িয়ে শিল্প প্রযুক্তি শীর্ষে উঠে শিল্পায়নের চূড়ায় দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগুতে থাকবে। প্রাকৃতিক সম্পদের যথার্থ ব্যবহারে গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্প কারখানা। প্রতিটি মানুষের বেকারত্বের হাত হবে বলিষ্ঠ কর্মীর হাত। দেশপেমের পকৃত মূল্যবোধ তাদের মধ্যে জেগে উঠবে। রাষ্ট্রের মৌলিক অধিকার, সামাজিক নিরাপত্তা, আইনগত সহায়তা, শিক্ষার আলোয় আলোকিত সমাজে সুস্থ সংস্কৃতি এবং রাজনীতিকদের পারস্পরিক সহনশীলতা সৃষ্টি করে স্বপ্নের স্বাধীনতাকে উজ্জীবিত করে সোনার বাংলাকে প্রজ্জ্বলন করার স্বপ্ন তরুণ প্রজন্মের।
লেখক: প্রাবন্ধিক

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান

আরও সংবাদ