মেয়ের সাথে খুশি হয়ে যা দিবেন!

একটা সময় ছিল, যখন মেয়ে বিয়ে দেওয়া প্রত্যেক বাবার কাছে সরাসরি একটা অভিশাপ মনে হতো। সব মেয়ের পরিবার-ই চায় তাদের মেয়েকে ভালো কোন পাত্রের হাতে তুলে দিক।

ভালো কোন ছেলে, চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ী, ধনাঢ্য ছেলের কাছে বিয়ে দিলে হয়তো মেয়েটা সুখে শান্তিতে দিন কাটাবে।

কিন্তু ভালো পাত্রের হাতে দিতে হলে বিয়ের খরচের পাশাপাশি যৌতুক দিতে হবে। সেটাই ছিল দুই যুগ আগের সমাজের প্রচলিত ব্যবস্থা। ছেলে পক্ষ থেকে মেয়ে পক্ষের কাছে সরাসরি যৌতুক চাওয়া হতো।

এখনকার সময়েও যে এগুলো নেই তা বলা যাবেনা। আইনের কঠোর প্রয়োগে এখন এটা বিলীন হয়েছে। তবে গ্রামে গঞ্জে এখনো অনেক জায়গায় যৌতুক চাওয়া হয়। অনেক মেয়ের স্বপ্নের সমাপ্তি হয় এই যৌতুকের কারণে।

নিঃসন্দেহে যৌতুক একটি সামাজিক ব্যধি। সমাজের প্রত্যেকটা ক্ষেত্রের মানুষের জন্য এটা একটা বিরাট অভিশাপ।
আইনের কঠোর প্রয়োগে যৌতুকের ট্রেন্ড এখন পাল্টেছে। শুধু যৌতুক নাম টা উঠেছে। এখনকার সময়ে মেয়ে বিয়ে দিতে গিয়ে কথা-বার্তা চূড়ান্ত হওয়ার পর ছেলে পক্ষ থেকে ইনিয়েবিনিয়ে বলা আপনাদের মেয়ে আপনারা খুশি হয়ে যা দিবেন! সিলেটে এই বাক্য এখন সবচেয়ে বেশি বিয়েতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
মেয়েকে তো ভালো কিছুই দিতে হবে। ঘুরিয়ে ফিরিয়েই তো চাওয়া হচ্ছে? সেটা আসবাবপত্র হউক আর যাইহোক।
এইযে চাওয়া পাওয়ার হিসেবের বিয়েতে কার কাছে কে বিক্রি হচ্ছে সেটাই এখন বুঝা মুশকিল।

মেয়ের সাথে বিছানাপত্র, আসবাবপত্র, হাড়ি পাতিল এগুলো দেওয়া নাকি যৌতুক নয়। সেটা সংস্কৃতি, ঐতিহ্য। এসব সংস্কৃতি ধনী পরিবারের জন্য হতে পারে। মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এটা আধুনিক যৌতুক। এটাও যৌতুকের মতো অপরাধের শামিল।

বিয়ের সময় স্ত্রীর কাছ থেকে কোন কিছু চাওয়া নয় (যৌতুক নেয়া নয়) বরং স্ত্রীকে মোহর দেয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ আদেশ প্রদান করেছে ইসলাম। পবিত্র কোরানের সুরা নিসার ৪ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করা হয়েছে, তোমরা নারীদের তাদের মোহর, স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে প্রদান করবে।

তবে বিজ্ঞ আলেমদের কথা অনুযায়ী সেই মোহরানা হতে হবে ছেলের সামর্থ্য অনুযায়ী। ইসলাম নারীদের কতো মর্যাদার আসন দিয়েছে সেটা আমরা সামান্য লোভে পড়ে সমাজ থেকে উঠিয়ে নিয়েছি। ইসলাম বিয়েকে কতো সুন্দর করে দিয়েছে সেটা আধুনিক লোভে এই সমাজ হারিয়ে দিচ্ছে।

এখনকার সমাজ তো অনেক আধুনিক। আধুনিকতার ছোয়ায় সমাজের মানুষের কথা বার্তাও আধুনিক হয়েছে। একজন বাবা তার জীবনের চেয়ে সব চাইতে বেশি মায়ার পাত্র তার আদরের কন্যাকে আপনার কাছে তুলে দিচ্ছে। সেখানেও হাড়ি-পাতিল থেকে শুরু করে টিভি-ফ্রিজ পর্যন্ত দিতে হয়। সেগুলো সমাজ ট্রেন্ড বানিয়ে রেখেছে। লাখ টাকার এসব খরচাপাতি যদি মেয়ের সাথে বাবাকে দিয়ে দিতে হয় তাইলে জামাই বাবু আর নিজের বাড়িতে থাকার কি প্রয়োজন? উনি তো মেয়ের বাড়িতে ঘর জামাই হিসেবেই চলে আসতে পারেন!

ধনী পরিবারের মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার সময় ছেলে পক্ষের সাথে প্রতিযোগিতা হয়৷ কার চাইতে কে বেশি কি দিতে পারে, কি করতে পারে। আর সেটা সমাজের মানুষ বাহ বাহ দেয়। এক সময় এটা প্রচলিত হতে শুরু করে। মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্ত পরিবার গুলো তখন মুখ লুকায়। আগামীতে তাদের উপর যে এগুলো বর্তাবে!
বিয়ের প্রত্যেকটা কথায় যারা ইসলামিক বিধিবিধান নিয়ে বিনয়ের সাথে কথা বলে। তারা কতোটা শরিয়াহ মোতাবেক বিয়ের কার্যক্রম সম্পাদন করে?

ইসলাম শুধু যৌতুক প্রথার বিরোধীই নয়, বিয়েশাদির ক্ষেত্রে সব ধরনের অপচয়ের বিপক্ষে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, সেই বিয়েই সর্বাধিক বরকতময়, যে বিয়েতে ব্যয় খুব সামান্যই হয়। রাসুল (সা.) নিজে বিয়ে করেছেন সাধারণভাবে, নিজের প্রিয় কন্যা হজরত ফাতেমা (রা.) কে বিয়ে দিয়েছেন একইভাবে। বিয়েতে অপব্যয় পাত্র-পাত্রীর পরিবারের জন্য কষ্টকর পরিণতি ডেকে আনে। সামাজিক সম্মান রক্ষার অজুহাতে অনেকে বিয়েতে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় করে অনেকেই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন। যা ইসলাম কোনোভাবেই অনুমোদন করে না।

আধুনিক ট্রেন্ডের নামে, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য বলে মেয়ের সাথে খুশি হয়ে যা দিবেন! সেই কথা বলার প্রথা অচিরেই বন্ধ করুন। ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটা জান্নাতি জুটি সমাজে উপহার দিন।

রাসুল (সা.) এর সময় কিংবা পরবর্তীতে ইসলামী সমাজে কখনো চাওয়া পাওয়ার হিসেব চালু ছিল বলে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। এ বিধান কোরআন-হাদিসের পরিপন্থী বিধায় তা বর্জন করা প্রতিটি মুসলমানের একান্ত কর্তব্য।

পবিত্র কোরআনে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করার ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বিবাহযোগ্য মেয়ের অভিভাবকরা তাদের মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এসব চাওয়া পাওয়ার নামে আধুনিক যৌতুক দিতে বাধ্য হন।

যারা যৌতুক নেন তারা অন্যায়ভাবে এ অর্থ বা সম্পদ নেন। এটি অবৈধ এবং সুনিশ্চিতভাবে গুনাহের কাজ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে যৌতুকের মতো গর্হিত ও নিন্দিত পথ থেকে দূরে থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখকঃ প্রবাসী সাংবাদিক ও বার্তা সম্পাদক, এশিয়াবিডি২৪ ডটকম

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান
আরও সংবাদ