ওসি নয় যেন টাকা ঢালার গর্ত!

সাধারণ মানুষের নিরব অভিযোগ। যদি কাজ সম্পন্ন না হয় তাহলে নতুন করে সমস্যা হবে! তাই মুখ না খোলা। কেউ কেউ অভিযোগ করেও সুরাহা না পাওয়া এসব নিরবে নির্বিত্তে চলছিল।

রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, সাধারণ জনগন সবার তরে একই অবস্থা! ফোনকল কিংবা সরাসরি কথা বলে প্রশাসনিক কোন কাজের জন্য রিকুয়েষ্ট করলে আন্তরিকতার সাথে করার কথা বললে ঘুরিয়ে পেছিয়ে টাকার আবদার! এ যেন ওসি নয় টাকার গর্ত!

সাধারণ মানুষের নিরব অভিযোগের প্রেক্ষিতে অবশেষে টনক নাড়ালেন উপজেলার জনপ্রতিনিধিরা। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ৮ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিলে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর অভিযোগ।

এই অভিযোগে স্পষ্ট হয়েছে আরও অনেক গল্প! বলছিলাম মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর থানার গল্প!
সেখানে ওসির কাছে গেলেই নাকি টাকার প্রয়োজন হয়! পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, মামলা এফআইআর, তদন্ত এসবের জন্য বিশাল অংকের টাকা চাওয়া হয়! অভিযোগ আছে টাকা খেয়ে বিনা অপরাধেও ফেসে গেছেন অনেক মানুষ!

শুধু এসব নয়। ওসির অবহেলায় উপজেলা জুড়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটছে। নিয়মিত ঘটছে চুরি ছিনতাই। তবে সুরাহা নেই কোথাও।

এছাড়াও ওসি মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিজয় দিবসে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে পতাকা উত্তোলনের সময় সম্মান প্রদর্শন না করা, নির্বাচনের সময় বিভিন্ন প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ ও অবাধ ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে তাকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা হয়েছে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকার সম্মান প্রদর্শন না করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী পালন উপলক্ষে পোর্টিয়াস উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সময় ইউনিফর্মধারীদের স্যালুট প্রদানের নিয়ম থাকলেও রাজনগর থানার ওসি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম তা না করে সোজা দাঁড়িয়ে থাকেন। এ নিয়ে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। অভিযোগে আরো বলা হয়, থানায় মামলা গ্রহণের পর বাদী-বিবাদীদের কাছে মোটা অংকের টাকা ঘুষ নেন। তিনি রাজনগর থানায় যোগদানের পরপরই আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে। উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় চুরি-ছিনতাই বেড়ে গেছে।

লিখিত অভিযোগে স্বাক্ষর করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান খান, ভাইস চেয়ারম্যান আলাল মিয়া, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তি চক্রবর্তী, মনসুরনগর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিলন বখ্ত, টেংরা ইউপি চেয়ারম্যান টিপু খান, ফতেপুর ইউপি সমস্যা নকুল চন্দ্র দাশ, রাজনগর ইউপি চেয়ারম্যান জুবায়ের আহমদ চৌধুরী, উত্তরভাগ ইউপি চেয়ারম্যান দিগেন্দ্র চন্দ্র সরকার, পাঁচগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ছানা, মুন্সিবাজার ইউপি চেয়ারম্যান রাহেল হোসেন, কামারচাক ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান।

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর দেয়া জনৈক মোহাম্মদ ফজলে কবির নামে এক ব্যক্তির আরো একটি অভিযোগে ওসি’র বিরুদ্ধে বিগত ৪র্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও সদস্যপ্রার্থীদের কাছ থেকে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তার আশ্বাস দিয়ে মোটা অংকের টাকা গ্রহণ করেছেন। তার এই অভিযোগের সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার উপজেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় ওসি’র এসব কার্যক্রম নিয়ে তুমুল আলোচনা করা হয়। এসময় চেয়ারম্যানরা ওসিকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন।

টেংরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিপু খান বলেন, ওসি সাহেবের স্বেচ্ছাচারিতা, ঘুষ বাণিজ্য সবাই জানে। আমার বাসায় হামলার ঘটনার মামলায় মূল আসামিদের গ্রেফতার না করে বাজারের ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে বাণিজ্য করছেন। আমি বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপন করায় তিনি দাম্ভিকতা প্রদর্শন করে বলেন আমার বিরুদ্ধে ১০টি মামলা নিবেন। নির্বাচনের সময় অনেক অভিযোগ পক্ষে বিপক্ষে হয়েছিল। এগুলো সমাধানও হয়ে গেছে। কিন্তু আমি শুনেছি আজ ১৫দিন পর আমার বিরুদ্ধে ৩টি মামলা নিয়েছেন। তার কাছে সাধারণ মানুষ জিম্মি।

দেশের শীর্ষ স্থানীয় একটি পত্রিকার রাজনগর উপজেলা প্রতিনিধি জানান, আমার এক আত্মীয় প্রবাসে থাকে। তার জন্য একটা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন হয়। ওসি সাহেবকে বলে স্বাক্ষর নিতে গেলে টাকা ছাড়া তিনদিন ঘুরতে হয়েছে!

উপজেলার আরেকজন প্রবাসী সাংবাদিক জানান, উনার গ্রামের একটা মামলার জন্য ওসিকে বিশ হাজার টাকা এবং তদন্ত অফিসার কে বিশ হাজার টাকা মোট চল্লিশ হাজার টাকা দিয়ে একটিমামলা এফআর করা হয়েছে।

জনপ্রতিনিধিদের এই অভিযোগে ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম ও অফলাইনে সাধারণ মানুষের উচ্ছাসে পরিণত হয়েছে। প্রশ্ন ছুড়ছেন সামাজিক সংগঠনের অনেক নেতৃবৃন্ধও!

এব্যাপারে রাজনগর থানার ওসি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, তারা কি উদ্দেশ্যে এমন অভিযোগ করছেন জানি না। বিষয়টি নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে বলতে পারবেন।

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কেকে
আরও সংবাদ