প্রসঙ্গ: মীলাদুন্নবী (সা.) মোহাম্মদ নজমুল হুদা খান
প্রসঙ্গ : ঈদে মীলাদুন্নবী (সা.)
মোহাম্মদ নজমুল হুদা খান
বারই রবিউল আউয়াল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র জন্মদিন। সুপ্রসিদ্ধ মতানুযায়ী ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের এ দিনে পৃথিবীর বুকে তাশরীফ এনেছিলেন রাহমাতুল্লিল আলামীন নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তাঁর আগমনে দূরীভূত হয়েছিল অন্ধকার, নির্যাতন-নিপীড়ন-নিষ্পেষণের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছিল মানবতা। মিথ্যার জিঞ্জির থেকে মুক্তি পেয়েছিল সত্য, কুসংস্কার আর বর্বরতার আগল ছিন্ন করে হেসে উঠেছিল মানবতার অবয়ব। তাই তাঁর আগমন বিশ্বমানবতার জন্য কল্যাণের, সৃষ্টিকুলের জন্য আনন্দের। এ আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে মহানবীর আগমনের দিন ও মাসকে উপলক্ষে বিশ্বের দিকে দিকে মুসলমানরা আয়োজন করে ‘ঈদে মীলাদুন্নবী (সা.)’।
ঈদ মানে খুশী, আর মীলাদুন্নবী মানে নবী (সা.)-এর জন্মদিন। অতএব, ঈদে মীলাদুন্নবী মানে নবী (সা.)-এর জন্মদিন উপলক্ষে আনন্দ বা খুশী। কেউ কেউ এটাকে ঈদুল ফিতর বা ঈদুল আযহার সাথে মিলিয়ে বিবেচনা করে বিভ্রান্ত হন এবং বলে থাকেন ঈদ তো মাত্র দুটি। এর জবাবে প্রথম কথা হলো ঈদ দুটি নয়; বরং শুক্রবারও মুসলমানদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন। হাদীস শরীফে শুক্রবার ও আরাফার দিনকেও ঈদের দিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বিতীয় কথা হলো ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’-এর মধ্যে ‘ঈদ’ শব্দটি পারিভাষিক নয় বরং আভিধানিক অর্থে ব্যবহৃত, যা খুশি বা আনন্দ প্রকাশের অর্থ প্রদান করে।
আমরা কেন ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করবো অর্থাৎ মহানবী (সা.)-এর শুভজন্মে আনন্দ বা খুশী প্রকাশ করবো? এতে আমাদের কিইবা কল্যাণ? আসুন একটু পর্যালোচনা করি।
আল্লাহর নির্দেশ পালনের জন্য
আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রতিপালক, সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা সবকিছু। তিনিই আমাদের একমাত্র উপাস্য। কেবল তাঁরই ইবাদত করার জন্য, তাঁরই আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁরই প্রতিনিধিত্বের জন্য আমাদের সৃষ্টি। যুগে যুগে তিনি তাঁর নির্দেশনাসম্বলিত একশত চারখানা কিতাব নাযিল করেছেন। এসবের মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ হলো আল-কুরআনুল কারীম। এ আল কুরআনুল কারীমের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বিশ্বমানবতার হিদায়াতের মূলনীতি উপস্থাপন করেছেন। উক্ত আল কুরআনুল কারীমে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রদত্ত অনুগ্রহ ও রহমতের জন্য আনন্দ প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহর ঘোষণা: “(হে নবী) আপনি বলুন, আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত পেলে তারা যেন খুশী প্রকাশ করে।” (সূরা ইউনুস, আয়াত ৫৮)
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা অনুগ্রহ ও রহমত প্রাপ্তিতে খুশী হবার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আবার অন্য আয়াতে আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন যে, মহানবী (সা.) হলেন কূল আলমের জন্য রহমত। যেমন আল্লাহর বাণী: “(হে নবী) আমি আপনাকে সৃষ্টি জগতের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছি।” (সূরা আল আম্বিয়া, আয়াত ১০৭)
অনুরূপভাবে আল্লাহ তাআলা মহানবী (সা.)-কে ‘মুমিনদের জন্য অনুগ্রহ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যেমন আল কুরআনের বাণী: “আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন যে তিনি তাদের নিকট তাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল (সা.) প্রেরণ করেছেন।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৬৪)
আল কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী হযরত মুহাম্মদ (সা.) হলেন বিশ্ববাসীর জন্য রহমত ও অনুগ্রহ। আর আল্লাহর নির্দেশ হলো রহমত ও অনুগ্রহপ্রাপ্তিতে যেন খুশী প্রকাশ করা হয়। অতএব, আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থেই আমরা খুশি প্রকাশ করব তথা ঈদে মীলাদুন্নবী (সা.) পালন করবো।
আল্লাহর শুকরিয়া আদায় ও অত্যধিক নেয়ামতপ্রাপ্তির জন্য
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পেরেছি যে, মুহাম্মদ (সা.) হলেন আমাদের জন্য রহমত ও নিয়ামত। আর রহমত ও নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা একান্ত আবশ্যক। তাই এ লক্ষ্যে আমরা শুকরিয়া স্বরূপ ‘ঈদে মীলাদুন্নবী (সা.)’ পালন করব এবং আরো নিয়ামতের প্রত্যাশী হবো। কেননা, আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, “যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর তবে আমি তোমাদেরকে আরো অধিক দান করব।” (সূরা ইবরাহীম, আয়াত ০৭)
মহানবী (সা.)-এর অনুসরণের জন্য :
মহানবী (সা.) নিজে অতীতের বড় বড় ধর্মীয় ঘটনাবলির সাথে সম্পর্ক রাখতেন। ঐ সকল ঘটনার দিন তারিখ যখন আসতো তখন এগুলোকে বিশেষভাবে স্মরণ করত: সম্মান প্রদর্শন করতেন। হাদীস শরীফে আছে, নবীজী (সা.) যখন মদীনা শরীফ হিজরত করলেন তখন ইয়াহুদীদের দেখলেন যে, তারা আশুরার দিন রোযা রাখছে। নবীজী তাদের এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তারা বললো আল্লাহ পাক ঐ দিন তাদের নবী হযরত মুসা (আ.)-কে মুক্তি দিয়েছেন ও তাদের শত্রুদের ডুবিয়ে মেরেছেন। তাই তারা আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া স্বরূপ এ দিন রোযা রাখেন। নবীজি (সা.) বললেন, আমরা তোমাদের চেয়েও মুসার বেশি ঘনিষ্ট। এরপর নবীজী ঐ দিন নিজে রোযা রাখলেন এবং সাহাবীদেরকেও রোযা রাখতে নির্দেশ দিলেন।
মহানবী (সা.)-এর উপরোক্ত আমলের অনুসরণেও আমরা ঈদে মীলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন করতে পারি। কেননা আমাদের কাছে মহানবী (সা.)-ই হলেন সর্বোত্তম নিয়ামত। তাঁর জন্মই আমাদের নিকট সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা।
লেখক,আরবী প্রভাষক বাদেদেওরাইল ফুলতলি কামিল মাদরাসা সিলেট।