আশারা বাঁধে দল

আজ ঠায় চার দিন নার্সিং হোমে একপ্রকার লাশ দিয়েই পড়ে রয়েছেন ব্যানার্জ্জী দম্পতি। বাইক অ্যাক্সিডেন্টে গুরুতর আহত হয়ে রমেন আর শুভার একমাত্র পুত্র কৌশিক কলকাতার এক বেসরকারী হাসপাতালের আই সি ইউ তে ভর্তি। স্বামী স্ত্রী দুজনেই এক বড় প্রাইভেট কোম্পানির বড় চাকুরে। নয় নয় করে এই কদিনে বেশ কয়েক লক্ষ টাকার বিল হাসপাতাল ধরিয়ে দিয়েছে। তা যাক! ছেলে সুস্থ হলেই হলো! প্রতিদিন আশায় থাকেন বাবা মা দুজনেই- এই বুঝি ডাক্তারবাবু বলবেন যে আপনাদের ছেলে আউট অফ ডেঞ্জার! আর চিন্তা বা ভয়ের কিছুই নেই। কিন্তু তা না করে গম্ভীর ভাবে ডাক্তারবাবুদের আশ্বাস- দেখছি, আমরা দেখছি! আর নয়তো- আপনাদের ছেলের অবস্থা ক্রিটিক্যাল বাট স্টেবল। কিন্তু মা বাবার মন কি তাতে মানে!

-ডাক্তারবাবু আজ কেমন দেখলেন আমার ছেলেকে ? দৌড়ে যায় রমেন ব্যানার্জ্জী ডাক্তারের কাছে!

ডাক্তারের চোখে-মুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট। অবশেষে কৌশিকের মৃতু সংবাদটা প্রকাশিত হলো।

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করার আগে যখন শুভা শেষবারের মতো ছেলের ‍মুখ দেখতে গেলেন তখন চোখটা এমন ঝাপসা হয়ে উঠলো যে- তাঁর আর কিছুই দেখা হলো না। তবে হঠাৎ যেন দেখতে পেলেন- কৌশিকের বুক একটু স্ফীত হলো! যেন একটা শ্বাস নিল ছেলেটা। পরক্ষণে শুভা সব শোক ভুলে গেলেন। এগিয়ে গেলেন ছেলের নিথর দেহের দিকে। না; এখন তো সেরকম কিছু মনে হচ্ছে না। তবু আবারও হাহাকার করে উঠলেন শুভা। রমেন তাকে জড়িয়ে ধরে কিছুটা সরিয়ে নিয়ে এলেন। শুভা স্বামীর গা’য়ে হেলান দিয়ে আবার তাকালেন কৌশিকের দিকে। হ্যাঁ! আরেকবার ছেলেটার বুকটা যেন একটু ফোলে উঠলো। শুভা চিৎকার করে উঠলেন- আমার ছেলে বেঁচে আছে। কিন্তু কেউ শুনল না তার কথা।

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর শোকের ছায়া তীব্র আকার ধারণ করলো ব্যানার্জ্জী পরিবারে। নির্ঘুম কেটে গেল রাতের পর রাত।

চতুর্থ রাতে ক্লান্ত, অবসন্ন রমেন আর শুভা ঘুমের কাছে পরাস্ত হলো। গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল দু’জন।

রাত দ্বী-প্রহরে শুভার চিৎকারে রমেনের ঘুম ভেঙ্গে গেল। রমেন নিজেকে কিছুটা শান্ত রেখে এক মমতাময়ী মা’কে সান্ত্বনা দিতে লাগলেন। কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেয়ে শুভা জানালেন- তিনি স্বপ্ন দেখেছে; কৌশিক অন্ধকার এক প্রকোষ্ঠ হতে তাকে ডাকছে। বলছে- মা, আমি মরিনি! কেন তোমরা আমাকে এই অন্ধকার ঘরে রেখে গেলে!

স্বপ্নটার কথা শুনে রমেন অবাক হয়ে গেলেন। তিনিও তো একই স্বপ্ন দেখেছেন। তার মনে পড়লো- অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় কৌশিকের বুকটা স্ফীত হতে সে তো দেখেছিল। তবে কি ছেলেটা তখন শ্বাস নিচ্ছিল!!!

লেখকঃ কবি, প্রাবন্ধিক
কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার থেকে।

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান
আরও সংবাদ