খেয়ালখুশি মতো চলছে রাজনগরের কমিউনিটি ক্লিনিক!
পল্লীর হতদরিদ্র মানুষের কাছে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য সারা দেশে চালু করা হয় কমিউনিটি ক্লিনিক। এসব ক্লিনিকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, প্রজননস্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, টিকাদান কর্মসূচি, পুষ্টি, স্বাস্থ্যশিক্ষা, পরামর্শসহ বিভিন্ন সেবা প্রদান করার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার বেশিরভাগ কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্বরত কর্মীদের অবহেলার কারণে বাঁধার মুখে পড়ছে সরকারের এই মহতী উদ্যোগ। দীর্ঘদিন ধরে খেয়ালখুশি মতো চলতে থাকায় বেশিরভাগ ক্লিনিকে অনিয়ম হয়ে ওঠেছে নিত্যদিনের কাজ। ফলে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। গত বৃহস্পতিবার ও শনিবার সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে নানা অনিয়মের চিত্র।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানাযায়, রাজনগর উপজেলায় মোট ২৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এসব ক্লিনিকে একজন সিএইচসিপি ছুটির দিন ছাড়া সপ্তাহে ৬ দিন সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করার কথা রয়েছে। এছাড়া সপ্তাহে দুইদিন একজন স্বাস্থ্য সহকারী ও একজন পরিবার কল্যাণ সহকারী সেবা ও পরামর্শ দেয়া এবং অবশিষ্ট দিনে মাঠ পর্যায়ে কাজ করার নিদের্শনা রয়েছে। তবে ২৫টির মধ্যে ৮টিতে এইচএ ও ৬টিতে এফডব্লিউএ নেই। কাগজেপত্রে এসব তথ্য থাকলেও বাস্তবচিত্র ভিন্ন দেখা গেছে।
সরেজমিন ১৩টি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্লিনিকের সিএইচসিপি ঠিক সময়ে ক্লিনিকে আসেন না। ক্লিনিকগুলোর কোনো কোনোটি সপ্তাহে ৩-৪দিন খোলা থাকে। ঠিক সময়ে খোলা না হওয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে ক্লিনিক খোলার সঠিক সময় নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯ টায় সৈয়দ নগর ক্লিনিকে গিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। এসময় স্থানীয় জমির মিয়ার সাথে কথা বললে তিনি জানান, ক্লিনিক সপ্তাহে ২-৩দিন খোলা হয়। কখনো রোগী এসে ফিরে যান। সকাল ৯ টা ৪০ ঘটিকায় সালন সিসি বন্ধ পাওয়া যায়। একই দিন সকাল ১০টা ২০ ঘটিকায় দাশপাড়া সিসি বন্ধ পাওয়া যায়। পাঁচ মিনিট পরে সিএইচসিপি স্বপন কুমার পাল ক্লিনিক খোলেন। তার সাথে কথা বললে তিনি জানান, বাড়ি দূরে থাকায় আসতে দেরি হয়ে যায়। শনিবার সকাল ৯ টা ২৬ ঘটিকায় গেলে আবারো এই সিসি বন্ধ পাওয়া যায়। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ২৮ ঘটিকায় নন্দীউড়া সিসিতে গিয়ে দেখা যায় এমএইচভি বর্ষা অর্জুন বসে আছেন। সিএইচসিপি কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনই এসে যাবেন। এর ৪ মিনিট পর সিএইচসিপি মিতালী পাল ক্লিনিকে আসেন। তার সাথে এব্যাপারে কথা বলতে গেলে তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কথা বলতে পারবেন না বলে জানান। যদিও কোনো কারণে নির্ধারিত সময়ে ক্লিনিকের বাইরে থাকলে আগে থেকে কর্তৃপক্ষকে জানানোর নিয়ম রয়েছে কিন্তু তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তাৎক্ষনিক দেরিতে আসার বিষয়টি সিসি ইনচার্জকে মোবাইল ফোনে অবগত করেন। শনিবার আবারো ওই সিসিতে গেলে দেখা যায় জ্বর-সর্দির সমস্যা নিয়ে নন্দীউড়া গ্রামের শাহ মো. লিয়াকত আলী সেবা নিতে এসেছেন। এসময় তাকে চিকিৎসা ও ঔষধ দেন এমএইচভি বর্ষা অর্জুন। বর্ষা অর্জুন জানান সিএইচসিপি ছুটিতে আছেন। অথচ নিয়ম অনুযায়ী সিএইচসিপি ছুটিতে গেলে স্বাস্থ্য সহকারী বা পরিবার কল্যাণ সহকারী সিসিতে রিলিভার হিসেবে থাকার কথা।
পরে মুশুরিয়া সিসিতে গিয়ে সিএইচসিপি রুমেনা আক্তার ও এইচএ সৌমিত্র দেবকে পাওয়া যায়। এফডব্লিউএ বদলী হয়ে যাওয়ায় ভারপ্রাপ্ত হিসেবে একজন এফডব্লিউএ ভ্যাকসিন দিতে আসেন বলে জানান। বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টা ২৫ ঘটিকায় বড়দল সিসিতে গিয়ে খোলা দেখা গেলেও শনিবার সকাল ১০ টা ২২ ঘটিকায় বন্ধ পাওয়া যায়। বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টা ৪০ ঘটিকায় বালিগাঁও সিসিতে গেলে বন্ধ পাওয়া যায়। স্থানীয় বাসিন্দা রিপন মিয়া বলেন, ক্লিনিক সপ্তাহে ২-৩ দিন বন্ধ থাকে। খোলা হলেও সকাল ১০-১১টায় খোলা হয়। মাঝে মাঝে রোগী এসে অপেক্ষা করে ফিরে যায়। চকিরাঐ সিসি খোলা থাকলেও এই সিসিতে কোনো এফডব্লিউএ ও এইচএ দীর্ঘদিন ধরে নেই বলে সিএইচসিপি অর্ধেন্দু দাস জানান। শুধু ভ্যাকসিন দিতে অন্য সিসি থেকে দুইজন আসেন। ওইদিন দুপুর ১ টা ৪৩ ঘটিকায় পরচক্র সিসিতে গিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। শনিবার কামালপুর সিসিতে সকাল ১০ টা ৪০ ঘটিকায় গিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। এর ৪ মিনিট পর ভারপ্রাপ্ত সিএইচসিপিকে দরজা খুলতে দেখা যায়। এছাড়া সোনাটিকি, কান্দিগাঁও, করিমপুর সিসিতে নির্ধারিত সময়ে সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা সেবা নিতে দেখা গেছে।
এসব ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আফজালুর রহমান বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। ইতোমধ্যে সিএইচসিপিদের সময়ানুবর্তী ও দায়িত্বশীল হতে নির্দেশ দিয়েছি। কমিউনিটি ক্লিনিকে আমরা এখন থেকে নিয়মিত পরিদর্শনে যাবো। শিগগিরই অবস্থার পরিবর্তন দেখতে পাবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনাদের সবার সহযোগিতা কামনা করছি।
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান