আসামীদের অব্যহতি দিয়ে স্বাক্ষীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরওয়ানা
মৌলভীবাজারের আলোচিত গাঁজার আসরে ধর্ষণ!
মৌলভীবাজারের একটি বাসায় ডিনার ও গাঁজা পার্টির আয়োজন করে এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ আলোচিত হয় জেলাজুড়ে। বেশ কয়েকদিন উত্তপ্ত থাকে জেলা শহর। ২০২০ সালের ৩ আগস্ট রাতে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সোনাপুর এলাকায় স্থানীয় সাংবাদিক মাহমুদ এইচ খানের বাসায় এ ঘটনা ঘটে। গাঁজার সেই পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন পাঁচজন। তারা সবাই বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে একজন নারী সুরক্ষা আন্দোলনের নেত্রীও ছিলেন। ঘটনার পরদিন ৪ আগস্ট বিষয়টি নিয়ে নিজের ফেসবুকে পোস্ট দেন মাহমুদ এইচ খান। এরপরই বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
এরপর ৩১ আগস্ট এ ঘটনায় ধর্ষণ মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী যার সাথে এই আসরে গিয়েছিলেন তার বাল্যবন্ধু সজীব তুষারকে প্রধান আসামি করে আইনজীবী রায়হান আনসারী ও নারী সুরক্ষা আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মার্জিয়া প্রভাকে ধর্ষকের সহযোগী উল্লেখ করেন ।
এরপর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরেই মামলার তদন্তের ভার পায় সিআইডি। দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে চলতি বছরের শুরুর দিকে আদালতে চার্জিশট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দ্বীপারাজ ধর।
তদন্তে তিনি উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন পারিবারিক ভাবে ঝামেলায় থাকার কারণে মানসিক ভাবে হতাশ ছিলেন বাদী তাই তিনি মামলার প্রধান আসামী তার বাল্য বন্ধু সজীব তুষারের সাথে মাহমুদ এইচ খানের বাসায় যান ইদ পরবর্তী একটি পার্টিতে মানসিক প্রশান্তির জন্য । সেখানে বাদী, প্রধান স্বাক্ষী ও ৩ আসামী মিলে গাঁজা সেবন করেন।
অতিরক্তি গাঁজা সেবনে বাদী বেসামাল হয়ে পরেন। ঘটনার পরের দিন স্বাক্ষী মাহমুদ এইচ খান দাবী করেন তুষার থাকে ধর্ষণ করেছে সে বাধা দিতে চেয়েছিল কিন্তু রায়হান আনসারী ও প্রভার সহযোগিতা না পাওয়ায় সে ফেরাতে পারেনি। স্বাক্ষী মাহমুদ এইচ খান ও বাদীর কথামত আলামত তিনি সংগ্রহ করেন, বিছানার ছাদরে আসামীর ডিএনও পাওয়া যাবে এমন দাবী ছিল তাদের। পরে এই বিছানার ছাদরসহ আরও আলামত সংগ্রহ করে ডিএনও পরীক্ষা করা হলে সেখানে যে ডিএনও পায়া যায় তা বাদীর সাথে মিললেও অভিযূক্ত তুষারের সাথে মিলেনি। পরে স্বাক্ষী মাহমুদ এইচ খানসহ বাকী দুই আসামীর সাথে মিলিয়ে দেখার জন্য তাদের ডিএনও সংগ্রহ করলে সেখানে মাহমুদ এইচ খানের ডিএনও মিল পাওয়া যায় । তদন্ত প্রতিবেদনে দাবী করা হয়েছে, যেহেতু মাহমুদের ডিএনও পাওয়া গেছে এবং তদন্তকালে সবার বক্তব্য ও বিস্তর তদন্তে তার নাম উঠে এসেছে তাই ঘটনার রাতে সবার অগোছরে মাহমুদ এইচ খান এই ধর্ষণ করেছে।
এর পরপরই চার্জশিটের বিপরিতে আদালতে নারাজি দেন মামলার বাদী। তবে বাদীর নারাজির দাবি বাতিল করে ১৬ নম্ভেম্বর অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন আদালত সেই সাথে ৩ জন আসামীর কারো সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাদেরকে মামলা থেকে অব্যহতি দেন এবং মামলার ১ নং স্বাক্ষী যার বাসায় এই ঘটনাটি ঘটে এবং যার ডিএনও বিছানার চাদরে পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা দায়ী করেন।
আসামদিদের আইনজীবি আবুল হাসান জানান, দীর্ঘদিন মামলার কার্যক্রম চলার পর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইমনালের বিচারক ১৬ নভেম্বর বাদীর নারাজি দাখিলের প্রেক্ষিতে নারাজি শুনানি শেষে বাদীর নারাজি দরখাস্থ নামঞ্জুর করেন এবং মামলার তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে এই মামলার এজারভুক্ত ৩ জন আসামীকে অব্যহতি প্রধান করেন এবং স্বাক্ষী মাহমুদ এইচ খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র আসায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়া করেছেন।
মাহমুদ এইচ খান জানান, ঘটনার পর তারা সামাজিক মাধ্যমে তাদের দায় স্বীকার করেছিল। তারপরও কিভাবে আমাকে অভিযুক্ত করা যায়? আমার বিছানায় আমার ডিএনও পাওয়া খুব স্বাভাবিক কারণ আমি এখানে বসবাস করছি একটানা ২ বছর। আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলাম এবং তাদের মুখোশ উন্মোচন করেছিলাম। তাই তারা আমার বিরুদ্ধে প্লান করে ফাসানো হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রতি প্রভাব বিস্তার করা হয়েছে। আমার উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে এবং আমি যাব।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দ্বীপরাজ ধর জানানা, আদালত সব বুঝে তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেছেন। আমি শতভাগ আন্তরিকতা ও শততার সাথে এই মামলা দীর্ঘদিন সময় তদন্ত করেছি। এই মামলার তদন্তে কি এসেছে তার বড় একটি গতিপথ নির্ণয় করেছে ডিএনও রিপোর্ট। কোন প্রভাব বা কোন কিছুই এখানে ছিলনা। থাকলে আদালত বাদীর নারাজি গ্রহণ করতেন।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে এই ঘটনার মামলার মামলার এজাহার ও ঘটনার বিরন দিয়ে তখন সাংবাদিক মাহমুদ এইচ খানের একটি ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করা হয়, সোনাপুর এলাকায় সাংবাদিক মাহমুদের বাসায় ৩ আগস্ট ডিনার পার্টির আয়োজন করেন নারী সুরক্ষা আন্দোলনের নেত্রী মার্জিয়া প্রভা। পার্টিতে উপস্থিত হন বাসদ নেতা রায়হান আনসারী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সজীব তুষার ও ভুক্তভোগী নারী। পার্টি শেষে সেখানে গাঁজার আসর বসানো হয়। এ সময় গাঁজা সেবন করেন তারা। তখন ভুক্তভোগী নারীকে বেশি করে গাঁজা সেবন করান তুষার। বেশি পরিমাণ গাঁজা সেবন করানো নিয়ে সাংবাদিক মাহমুদ প্রতিবাদ করেন। তখন তাকে থামিয়ে দিয়ে ওই নারীকে গাঁজা সেবনে প্ররোচিত করেন মার্জিয়া ও আনসারী। একপর্যায়ে ওই নারী ঘুমানোর কথা জানালে তুষার তাকে নিয়ে একটি রুমে চলে যান। টের পেয়ে বিষয়টি মার্জিয়া ও আনসারীকে জানান মাহমুদ। সেই সঙ্গে তাদের মধ্যে সম্পর্কের ধরন জানতে চান মাহমুদ। তাদের কোর্ট ম্যারেজ হয়েছে বলে মাহমুদকে জানান মার্জিয়া ও আনসারী। এরপরও মাহমুদের সন্দেহ হয়। তিনি দরজা খুলে ওই নারীকে উদ্ধারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে আনসারী ও মার্জিয়াকে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলেন মাহমুদ। পরদিন সকালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে জানান ওই নারী। পরে ৩১ আগস্ট দুপুরে এ ঘটনায় ধর্ষণ মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী সে মামলায় ৩ জনকে আসামী করা হয়।