ক্রেডিট চাই না, প্রয়োজন সিলেটের উন্নয়ন– মেয়র আরিফ

ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় সিলেট থেকে শুরু হয়েছে ডিজিটাল করার কাজ। এখানেই গড়ে তোলা হচ্ছে (ইলেক্ট্রনিক সিটি) হাইটেক পার্ক। বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার বরাদ্দ দিয়েছে ২০৫২ কোটি টাকা। ফলশ্রুতিতে নগরের বিদ্যুৎ লাইন যাচ্ছে মাটির নীচে।

এরইমধ্যে সিলেট নগরের হযরত শাহজালাল দরগাহ এলাকার ৩শ’ মিটার বিদ্যুৎ লাইন মাটির নীচে নিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়েছে। কিন্তু এই অর্জনের কৃতিত্ব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো চলছে তর্ক যুদ্ধ।

উন্নয়ন সিসিকের না পিডিবি’র নাকি পুরো কৃতিত্ব সরকারের। কেউ উন্নয়নের পুরো কৃতিত্ব দিচ্ছেন সরকারকে। কেউ বলছেন, আরিফ মেয়র না হলে এই কাজ হতো না। আবার অনেকে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে কৃতজ্ঞতার সিংহভাগ দিচ্ছেন। এই বিতর্ক শেষ না হতেই আলোচনায় আসে বিদ্যুৎ বিভাগের একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি। তাতে বলা হয়, আণ্ডারগ্রাউণ্ড বিদ্যুৎ প্রকল্প সিসিকের নয়, পিডিবি’র।

এই বিতর্কের বিষয়ে জানতে মুখোমুখি হলে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বলেন, আমিতো বলিনি এটা সিসিকের কাজ। এটা সরকারের উন্নয়ন, বিদ্যুৎ বিভাগকে দিয়ে করানো হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কাজ কি আমরা করতে পারবো? তবে বিদ্যুৎ বিভাগ এ কাজ করতে শর্ত দিয়েছিল- ট্রান্সফর্মার সরানো, প্রজেক্টের ডিপিপিতে মাটির নীচে তার নেওয়ার ক্ষেত্রে রাস্তা খুঁড়ার টাকা বরাদ্দ ছিল না। যেটা সিসিককে ক্ষতিপূরণ স্বরূপ দিতে হতো। তখন প্রকল্প বাতিলের সম্ভাবনা ছিল। অর্থাৎ না করার জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন, তারা সবটুকু করেছে। আমি ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা কাটতে বলেছি, নয়তো কাজ হতো না। ঠিকাদারের সঙ্গে থেকে কাজ করিয়েছে।

তিনি বলেন, আর সিলেট ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা। এটাও মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। এখানে বড় ধরণের ভূমিকম্প হলে বিদ্যুৎ ও গ্যাস লাইন, দুইটাকে কিভাবে টেকনিক্যাললি কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এটা এখনই ভাবতে বলেছি। ‘চুর গেলে বুদ্ধি বাড়ে’, এমন যাতে না হয়। আগামি সপ্তাহে টেকনিক্যাল টিম নিয়ে বসবেন তিনি।

আর বিদ্যুৎ আণ্ডারগ্রাউণ্ড হয়েছে, আমাদেরও দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে। যারা ইউটিলিটি সার্ভিস দেন-গ্যাস, ওয়াসা, ডিসসহ তাদের নিয়ে বসতে হবে। তাদের বুঝাতে হবে। তারা হঠাৎ কাজ করতে গিয়ে বিপদে পড়বেন। এজন্য সড়কে রেডলাইন “লাল চিহ্ন” বা এয়ারমার্ক করে দেওয়াহবে। মাটির নীচে লাইন ফেলে রাখলে হবে না। মাটির নীচে বিদ্যুৎ লাইনে কোথাও যদি দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে কিভাবে উত্তরণ সম্ভব, এ বিষয়ে তারা এখনো কিছুই জানাননি। এসব টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে সিসিকের প্রকৌশলীদের বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করতে বলেছি।

তাঁর মতে, সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ না করলে নগরকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। বিদ্যুৎ বিভাগ, ট্রাফিক বিভাগ, যারা বিনা দ্বিধায় জায়গা ছেড়েছেন নগরের উন্নয়নে, সবার সহযোগীতায় কাজ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।

‘আণ্ডারগ্রাউন্ড বিদ্যুৎ প্রকল্প সিসিকের নয়, পিডিবি’ গত মঙ্গলবার বিদ্যুৎ বিভাগের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, যার কাজ সেই করবে। বিদ্যুৎ বিভাগের কাজ আমরা কি করে করবো। তারা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ভাল করেছে। বিদ্যুতের কাজ কি আমরা করতে পারবো? উল্টো প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন মেয়র।

তিনি বলেন, তারা কাজ করছে। সিসিক তদারকি করছে। তারা স্ট্রিট লাইটের কানেকশন রাখেননি। ভাগ্য ভাল দরগাহের ৩শ’ মিটারের মধ্যে এটি ধরা হয়েছে। নয়তো,পুরো শহর স্ট্রিট লাইটহীন করা হলে জনগণ প্রশ্ন আমাকেই করতো। এটা নিয়ে সিসিকের প্রকৌশলীদের পরিকল্পনা করতে বলেছি, লাইনের পুল রাস্তার মধ্যখানে আইল্যাণ্ডে না সাইটে বসবে?

আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সরকার বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা দেন। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়াতে টাকা ফিরে যায়। তাই শতভাগ কাজ করানোর জন্য চ্যালেঞ্জ নিয়ে একযোগে কাজ শুরু করেছি। যে কারণে নগরের বাসিন্দাদের কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

এ যাবত কতটুকু কাজ হয়েছে প্রশ্নত্তরে মেয়র বলেন, আম্বরখানা থেকে সার্কিট হাউস পর্যন্ত আণ্ডারগ্রাউণ্ড ‍বিদ্যুৎ লাইন বসে গেছে। এখন পরিক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ রয়েছে। মার্কেট ও বাড়িঘরে ইন্টারন্যাল সার্ভিস লাইন চলে গেছে। সার্কিট হাউজ পর্যন্ত আণ্ডার গ্রাউণ্ড ক্যাবল লাইন আগামি মাসে পুরোপুরি সম্পন্নের পর চৌহাট্টা থেকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত নেওয়া হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে পুরো শহরকে আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল লাইনের আওতায় আনতে চাই। এ যাবত হযরত শাহজালাল (র.) দরগাহ এলাকায় প্রায় ৩শ’ মিটার কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে।

মেয়র হিসেবে প্রত্যাশা প্রাথমিকভাবে সফল হলে ৭ কিলোমিটার নয়, পুরো ২৫ কিলোমিটার হবে। তাহলে পুরো নগরীতে এভাবে পাতাল বিদ্যুতের লাইন করতে চাই।

মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, প্রথম মেয়াদে ডিজিটাল নগরীগরড়ে ২৫ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন মাটির নীচে নেওয়ার প্রস্তাব দেই। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের একান্ত চেষ্টায় প্রকল্পটির কন্ট্রাক সাইন হয়। প্রকল্পটি প্রাথমিকভাবে পাস হওয়ার পর আমি সরকারের হেফাজতে (কারাগারে) ছিলাম। যে কারণে এটি বাতিল হয়ে যায়। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর সাবেক অর্থমন্ত্রীকে ধরে এটির অনুমোদন করাই। এরপর বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রীর বিশেষ সহযোগীতায় এই কাজ এসেছে। এই কৃতিত্বের জন্য সরকার প্রধানসহ তাঁদের ধন্যবাদ জানাই।

আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আমি ক্রেডিট নিতে চাই না। অর্জন যারই হোক, আমার চাওয়া নগরের উন্নয়ন। যারাই নগরের উন্নয়নে কাজ করবেন, ভূমিকা রাখবেন, তাদেরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। এই কাজে জড়িতদের জন্য নগরবাসীর পক্ষ থেকে দোয়া থাকবে।

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/সাইফ

আরও সংবাদ