শিশুদের স্কুলমুখী করতে অভিনব উদ্যোগ
শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করতে অভিনব পদ্ধতি অনুসরণ করছে হাওড়ার উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের চকবৃন্দাবনপুর জুনিয়র বেসিক স্কুল। স্কুল এরিয়ায় খাঁচা তৈরি করে তাতে রাখা হয়েছে বাজরিগার পাখি। রাখা হয়েছে অ্যাকুরিয়ামও। যেখানে নানা রঙের মাছ ভেসে বেড়াচ্ছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, এর ফলে সুফলও মিলছে।
শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন স্কুলে ঢুকেই দেখতে যায় পাখির ছানাগুলো কত বড় হল। মাছগুলোকে খেতে দেওয়ার দায়িত্ব নিতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় তাদের মধ্যে। এছাড়া স্কুলের খোলা যায়গায় লাগানো হয়েছে নানা রকম সবজী।
১৯৪৬ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু। বেশ কয়েকটি গ্রামের শিশুরা এখানে লেখাপড়া করতে আসতো। কিন্তু কয়েক বছর আগে ক্রমশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার বাড়তে থাকে। শিক্ষার্থী ঝরে পড়া ঠেকাতে এবং তাদেরকে স্কুলমুখী করতে অভিনব এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে শুরু করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক শশী শেখর রানা বলেন, পাখি, মাছ বা যে কোনো পোষা প্রাণী শিশুদের কাছে আকর্ষণীয়। তাই ধীরে ধীরে আমরা খাঁচা তৈরি করে পাখি পুষতে শুরু করি। অ্যাকুরিয়ামে রাখা হয় মাছ। শুধু তাই নয়, ওদের খাওয়ানো বা দেখভালের দায়িত্বও দিতে শুরু করি খুদে শিক্ষার্থীদের। তাতেই কাজ হয়।
স্কুলের আরেক শিক্ষক জানান, মাছ আর পাখির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা গণনা শেখানো হয়। চেনানো হয় রঙ।
শিশুদের পড়ানোর জন্য স্কুলে বসানো হয়েছে প্রজেক্টর। এর পাশাপাশি মিড ডে মিলের রান্নার সব তরকারি চাষ করানো হয় স্কুলের জমিতে। শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে চাষবাস শেখানো হয়। শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে চলে গাছে নিয়মিত পানি দেওয়া, তরকারি জমি থেকে তোলার কাজ।
পুষলেই হয় না, তার যে যত্নের প্রয়োজন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে সেই শিক্ষা পাচ্ছে শিশুরা। পোষ্যদের যত্ন, তাদের খাওয়ানো, অসুস্থ হলে পরিচর্যার মাধ্যমে ধীরে ধীরে দায়িত্বের শিক্ষাও পাচ্ছে তারা।
শিক্ষকরা জানান, লম্বা ছুটির সময়ও মাছ-পাখির খোঁজ নিয়ে যায় তারা। পালা করে দিয়ে যায় খাবারও। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘এই পৃথিবীতে মানুষের মতোই পাখি, মাছ, পশুদেরও সমান ভূমিকা রয়েছে, সেটা আমরা শেখাই শিক্ষার্থীদের। কোনো প্রাণীর ওপর অত্যাচার হতে দেখলে, ওরা প্রতিবাদও করে।’
অভিভাবক লিপিকা মণ্ডল বলেন, স্কুল কামাই করতে চায় না ছেলে-মেলেরা। ছুটির দিনেও স্কুলে যাওয়ার জন্য বায়না করে। আর বাড়ি ফিরে মাছ-পাখির কত গল্প।
সমর সর্দার নামের এক অভিভাবক বলেন, মেয়ে স্কুলে চাষবাস শিখে গিয়ে বাড়িতে টবে ধনেপাতা চাষ করেছে। আর সেই পাতা তরকারিতে দেওয়ায় কী যে খুশি।
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/সাইফ