অণু গল্পঃ ‘অদ্ভুত সমীকরণ’


অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছিলো কাজলের। তবুও নতুন মা হওয়ার কামনায় দাঁতে দাঁত টিপে সহ্য করে যাচ্ছিল প্রসব বেদনা। চেতনার শেষ পর্যায়ে পৌছানো পর্যন্তও কাজল টের পাচ্ছিল পেটের বাচ্চাটার নড়াচড়া। কিন্তু জ্ঞান ফেরার পর অবাক করা কান্ডের মুখোমুখি হয় কাজল। নার্স তাকে জানায় কাজল মৃত বাচ্চা প্রসব করেছে । বাচ্চাটা নাকি পেটে তিন দিন আগেই মারা গেছে। কি করে হয়? কাজলের স্পষ্ট মনে আছে তার জ্ঞান হারিয়ে ফেলার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত বাচ্চার নড়াচড়ার অনুভূতি। সেই কথা স্বামী সুমনকে জানায় কাজল।

কাজলের হাহাকার আর সুমনের অবহেলিত দৌড় ঝাঁপ ব্যর্থ করে দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টা মৃত বাচ্চাতেই যবনিকা টানে। কিন্তু কাজল বারবার সুমনকে বিষয়টি নিয়ে আইনের আশ্রয়ে যেতে বলে। সুমন উদাস এক দৃষ্টি দিয়ে কাজলকে দেখে এবং এখনই যাচ্ছে বলে সান্ত্বনা দেয়। তারপর কাজলকে হাসপাতালের বেডে শুইয়ে রেখে বেরিয়ে এসে হাটা ধরে পূর্বমুখী হাইওয়ে ধরে।

দরিদ্রতার নাগপাশে বন্দি সুমন অপরাধ আর সাফল্য দুই ধরণের দু’টি অনুভূতি নিয়ে বারো মাইল উত্তর-পূর্বের শহরে এক ক্লিনিকে এসে পৌঁছায়। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে একটা চেক দেয় সে। কিছুক্ষণ পরই অচেতন এক বৃদ্ধাকে নেয়া হয় অপারেশ থিয়েটারে। অনেক সময় পরে যখন অপারেশন থিয়েটারের দরজা খুলে হাতাশা মাখা চেহারা নিয়ে ডাক্তার বেরিয়ে আসেন- সুমন কান্নায় ভেঙে পড়ে। ঘোষণা করা হয়- সুমনের মমতাময়ী মা আর বেঁচে নেই।

পাওয়া আর না পাওয়ার অদ্ভুত সমীকরণে সুমন নিজেকে হারিয়ে ফেলে। ঠিক তখন সে অনুভব করে বুকের বামপাশে তীব্র এক ব্যথা। অতঃপর তার পৃথিবী তার কাছেই অচেনা হয়ে যায়।

লেখকঃ কবি,প্রাবন্ধিক
কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার থেকে।

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান
আরও সংবাদ