জমি দখলের ঘটনায় হামলা-মারপিট ও অগ্নিসংযোগ!

হামলায় আহতরা। ছবি:: এশিয়াবিডি

ঠাকুরগাঁওয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জমি অবৈধভাবে দখলের নামে হামলা ও মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। জমি দখলের বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে বসত বাড়ীতে নিজেরাই অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটিয়ে তা বিরোধী পক্ষের লোকের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকদের।

এ ঘটনায় ৩ জন গুরুতর আহত হয়ে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। পরবর্তীতে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয় বলে জানা গেছে। আহতরা হলেন- দুলাল (২৭), ফরিদ (৫৫) ও হালিমা (৩৫)। এদের মধ্যে হালিমার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ভুল্লী বাজার এলাকায় এঘটনা ঘটে।

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ভূল্লী বাজারে তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছিলো বাহার উদ্দীন, লাভলী বেগম ও ইউনুছ আলী। পরবর্তীতে বছর খানেক আগে তারা কবলা দলিলমূলে জমির মূল মালিক সফিউল আলম এর নিকট হতে ওই তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ১৬ শতক জমি ক্রয় করে ব্যবসা করে আসছিলেন। সম্প্রতি ইয়াকুব আলী গং সেই জমি নিজের দাবি করে বিভিন্ন প্রকার হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিলেন জমি ক্রয়কারিদের। এমনকি যখন-তখন গিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গিয়ে তালা মেরে দিতেন। এ অবস্থা চলাকালিন গত ১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের নিয়ে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।

শুধু তাই নয়, এ ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে নিজেদের ঘর-বাড়ীতে আগুন জ্বালিয়ে সাজানো নাটক তৈরী করেন বলে দাবি করেন হামলার শিকার বাহার উদ্দিনসহ অন্য দুইজন দোকান মালিক। ইয়াকুব বাহিনীর হামলা প্রতিরোধ করতে গিয়ে গুরুতর আহত হন দুলাল, ফরিদ ও হালিমাসহ আরও বেশ কজন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরবর্তীতে আহতদের মধ্যে হালিমার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রংপুরে রেফার্ড করে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক লাভলী বেগম বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ আমরা সেখানে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলাম। পরবর্তীতে বছর খানেক আগে জমির মূল মালিক সফিউল আলম এর নিকট হতে আমিসহ বাহার উদ্দিন ও ইউনুছ আলী ১৬ শতক জমি ক্রয় করি। কিন্তু সেই জমি অবৈধভাবে নিজের দাবি করে আসছিলো ইয়াকুবসহ তার লোকেরা এবং মাঝে-মধ্যেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা মেরে দিতো। এর প্রতিবাদ জানালে তারা আরও হিংস্র হয়ে উঠত এবং খারাপ আচরণ করতো। গত ১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ইয়াকুব আলীর নেতৃত্বে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও মারপিট করে। এতে আমাদের তিনজনসহ বেশ ক’জন আহত হয়। এছাড়াও হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নিজেরাই নিজেদের ঘরবাড়ীতে আগুন লাগিয়ে আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। আমি এ নৃশংস হামলার ন্যায় বিচার চেয়ে সদর থানায় আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি।

স্থানীয় বাসিন্দা হাসানুজ্জামান হৃদয় জানান, ঘটনার দিন অতর্কিতভাবে ইয়াকুব আলীর লোকেরা বাহার উদ্দিন, ইউনুছ আলী ও লাভলী বেগমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। এসময় তারা নিজেরাই তাদের ঘরবাড়ীতে আগুন লাগিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরী করে এবং বাহার উদ্দিনের লোকদের মারপিট করতে থাকে।

এ বিষয়ে বালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নূরে আলম মুক্তি জানান, দুই পক্ষের বিরোধ নিস্পত্তির জন্য সালিশ বৈঠক করা হয়েছিলো। সালিশে বাহার উদ্দিনসহ অন্য দুইজন সালিশ মানলেও ইয়াকুব আলী এ সালিশ মানেননি। ঘটনাটি ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি ঘটনাটি প্রশাসনিকভাবে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ করছি।

ঠাকুরগাঁও সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) একেএম আতিকুর রহমান বলেন, গত ১ ডিসেম্বর রাতে ৯৯৯ নম্বরের কলকে কেন্দ্র আমরা ভূল্লীতে গিয়ে দেখি একটি দোকান ঘরকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। পরে তাদের নিবৃত করে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এশিয়াবিডি/আরিফ/এমকে

আরও সংবাদ