মৌলভীবাজারের নারী জনপ্রতিনিধিরা
সৈয়দ মহসীন আলীর মৃত্যুর পর মৌলভীবাজার সদর রাজনগর আসনের উপনির্বাচনে দলের প্রতীক পেয়ে নির্বাচিত হন সৈয়দা সায়রা মহসীন। পরের নির্বাচনে আর দলের টিকেট পান নি তিনি। মহিলা এমপি,জেলা পরিষদ,কিংবা দলে পদ কিছুই পান নি তিনি। তবু মহসীন আলীর খুব আসল দলীয় অনুসারীরা তাঁর সাথেই আছেন। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসন ছাড়া তিনি সিলেট বিভাগের প্রথম নারী সাংসদ।
এম এ মুমিত আশুক আর সৈয়দ মহসীন আলী দুজনেই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা, কাছের বন্ধু। রাজনীতিতেও আশুক আওয়ামীলীগে আজীবন সুখে,দুঃখে মহসীন আলীর অনুসারী ছিলেন।
জুড়ীর অবিসংবাদিত নেতা, অভিভাবক হয়ে উঠা এম এ মুমিত আশুক ক্যান্সারে মারা গেলে স্ত্রী গুলশান আরা মিলি সামনে আসেন। উপনির্বাচনে মিলি দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। দল দেয়নি বলে মানুষের চাপে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে ২০১৫ সালের ২৯ শে মার্চের নির্বাচনে বিজয়ী হন। তিনি সিলেট বিভাগের ৩৫ উপজেলার মধ্যে প্রথম কোন নারী উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
সৈয়দ মহসীন আলী তখন মন্ত্রী ছিলেন। লোকটার পলিটিক্যাল কারেকটার ছিল। সুখে দুঃখে যারা একমাত্র শুধু তাঁর সাথে থাকত, সৈয়দ মহসীন আলী তাদের জন্য জান দিয়ে করত। গুলশান আরা মিলিও কোন পদ পদবিতে না থাকলেও সামাজিকভাবে এলাকার মানুষের পাশে আছেন।
রাহেনা বেগম হাসনা। বড়লেখা উপজেলার টানা তিন বারের ভাইস চেয়ারম্যান। এ জেলায় টানা তিন বার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান তিনি ছাড়া অন্য কোন নারী নির্বাচিত হতে পারেন নি। পরিচ্ছন্ন ইমেজের এ নারী গত ১৫ বছর ধরে জেলার ভোটের রাজনীতিতে জিতে আসা বিএনপির একমাত্র নারী নেত্রী।
পুরুষদের তুলনায় আমাদের নির্বাচিত নারী জনপ্রতিনিধিদের বদনাম,দুর্নাম,বিতর্ক নেই বললেই চলে।
মৌলভীবাজার শহরের প্রথম মুসলিম মহিলা যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাষ্টার্স ডিগ্রীধারী, সৈয়দা হাসনা বেগম। ষাটের দশকে আমাদের মৌলভীবাজারের সক্রিয় রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক কর্মী ছিলেন এই নারী। ছাত্র রাজনীতি করে,রাজনৈতিক কর্মী হয়ে গড়ে উঠা নারী প্রথমবারের মতো আশির দশকে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য হন।
স্বাধীনতার আগে ষাটের দশক থেকে ২০২০ সাল অবধি যে চারজন নারী সংসদ এবং সংসদের বাইরে মৌলভীবাজারের নারী সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তারাঁ হলেন সৈয়দা হাসনা বেগম,বেগম খালেদা রব্বানী, মরহুম হোসনে আরা ওয়াহিদ ও বেগম নুরজাহান সুয়ারা। এরমধ্যে বেগম খালেদা রব্বানী তিনবার,সৈয়দা হাসনা বেগম ও মরহুম হোসনে আরা ওয়াহিদ একবার করে সংরক্ষিত আসনের এমপি ছিলেন। নুরজাহান সুয়ারা কখনো এমপিত্বের দৌড়ে না গেলেও গত গত ষাট বছর ধরে জেলার আর্থসামাজিক অগ্রযাত্রায় পুরুষের পাশাপাশি বিদিত এক উদাহরন।
আট মার্চ বিশ্ব নারী দিবস। মৌলভীবাজারের,বাংলাদেশের, বিশ্বের সকল নারীর প্রতি শ্রদ্ধা।
লেখকঃ মুনজের আহমদ চৌধুরী, লন্ডনে কর্মরত সাংবাদিক
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান