প্রশিক্ষণার্থীদের উপবৃত্তির টাকা পেতে হয়রানি


বেকার যুবক যুবতীদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতেই বর্তমান সরকার সারা দেশে কাারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গড়ে তুলেছে। প্রতি বছরই ওই সকল কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের পিছনে ব্যয় করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। যাতে করে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেরাই নিজেদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে এবং প্রবাসে দক্ষতার সহিত কাজ করে বেশি টাকা উপার্জন করতে পারে। সেই লক্ষ্যেই ২০১৮ সালের ২২ এপ্রিল মৌলভীবাজার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়। ৩ বছরের মাথায়ই ওই কেন্দ্রটি অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠান প্রধান থেকে শুরু করে প্রশিক্ষক ও কর্মচারীরা অনিয়মের সাথে জড়িত বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী দালাল চক্র। এখানে টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয়না এমন রেওয়াজ চালু হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই কেন্দ্রে স্বল্প মেয়াদী (নিয়মিত) ৬টি ট্রেডে ৬ মাস প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মাসিক ১ হাজার হারে উপবৃত্তি প্রদান করার কথা থাকলেও দুই তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ শেষে টাকা দেয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে একাধিক দিন আকুতি করার পরেও নানা অজুহাত দেখিয়ে শিক্ষার্থীরা টাকা না দিয়ে বিদায় করে দেন সংশ্লিষ্ট ট্রেডের প্রশিক্ষকরা।
ওই কেন্দ্রের গার্মেন্টস ট্রেডের প্রশিক্ষণার্থী নাহিদুল ইসলাম বলেন, ক্লাস করে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও আমাকে উপবৃত্তির টাকা দেয়া হয়নি। অনেক চেষ্টা তদবির করে আমার সাথের একজন ৭’শ ২০ টাকা এবং আরেকজন ১৫’শ টাকা পেয়েছে। বাকী টাকা তারা আত্মসাৎ করেছেন। ইলেকট্রিক্যাল ট্রেডের জয় দাস ও সাইফুল্লাহ হাসান, সিভিল কনট্রাকশন ট্রেডের তালহা সহ অনেক শিক্ষার্থী  বলেন, প্রশিক্ষণ শেষে উপবৃত্তির টাকা তাদের দেয়া হয়নি। জাপনিজ ভাষার প্রশিক্ষণার্থী মইনউদ্দিন আহমেদ বলেন, বই কিনার কথা বলে প্রশিক্ষক জাহেদ চৌধুরী প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ভর্তির সময়ই ১ হাজার টাকা নেন। এভাবে তিনি অনেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে ড্রাইভিংয়ের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেয়ান বাবুল নামের এক প্রশিক্ষক। বাবুল এখানে চাকুরি করার সুবাধে তার ছেলে হৃদয় গড়ে তুলেছে দালালী চক্র। কোনো ধরণের প্রশিক্ষণ ছাড়াই বিদেশ যাত্রী পুরুষদের কাছ থেকে ২ হাজার ও মহিলাদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে হৃদয় সনদ বিক্রি করছে। ড্রাইভিংয়ের অফিসে বসেই সে ওই সকল কাজ করে। সরকারি কার্যালয়কে অনেকটা তার ব্যক্তিগত অফিসে পরিণত করেছে। দালাল হৃদয় প্রশিক্ষকের ছেলে থাকায় কেউ ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারে না।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক ড্রাইভিংয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, সময় মতো ক্লাস শুরু হয়নি কিন্তু সময়ের আগে ছুটি হয়ে যায়। অধিকাংশ সময় গাড়ি নষ্ট থাকে। মেরামত করার কথা বললে, কর্তৃপক্ষ বলে বাজেট নেই।
এবিষয়ে মৌলভীবাজার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ শেখ মোহাম্মদ নাহিদ নিয়াজ বলেন, আমার এখানে বাহিরের লোক ঢোকা মোটামুটি নিষেধ। তার পরেও কেউ ঢোকে থাকলে আমার জানা নেই। করোনার আগে কম্পিউটার ট্রেড ব্যতীত সকল ট্রেডের শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি’র টাকা দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠান প্রধানের বক্তব্য নেয়ার পরপরই সংবাদ না করার জন্য ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতা দিয়ে প্রতিবেদকের ব্যক্তিগত মোবাইলে কল দেয়ান। প্রতিবেদককে অনৈতিক নানা অপারও দেন নেতারা।

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/শেখ
আরও সংবাদ