হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য মাছ ধরা

গ্রামীণ জনপদে মাছ ধরার চিরচেনা এমন দৃশ্য এখন আর আগের মত দেখা যায় না। ভরাট হয়ে যাচ্ছে  হাওর বাওর খাল-বিল ডোবা জলাশয়। যেখানে সেখানে অবাধে মাছের বিচরণ নেই। ক্ষেত খামারে রাসায়নিক সার কীটনাশক ব্যবহারের ফলে দিন দিন দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে।
গতকাল শনিবার রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের হরিপাশা গ্রামে বাংলার প্রাচীন চিরায়ত ঐতিহ্য মাছ ধরার উৎসব দেখা যায়। মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ভেতরে শ্রাবণের বৃষ্টিতে ঢল নেমেছে বাড়ির পাশের ডোবা খাল-বিলে। পানির স্রোতধারায় হরিপাশা গ্রামের সুরুজ মিয়ার বাড়ির পাশে ছোট ডোবায় দেশীয় প্রজাতির মলাঢেলা পুটি মাছ জমেছিল। মাছের উপস্থিতি টের পেয়ে স্থানীয় উৎসুক মানুষেরা বিকেলে আনন্দ উৎসব করে মাছ ধরতে নামে।
সুরুজ মিয়া জানান, এখন তো আর আগের মত মাছ নেই। খাল-বিল দিন দিন ভরাট হয়ে আসছে। মানুষ অধিক লাভের আশায় ক্ষেত খামারে অপরিকল্পিত ভাবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে আসছে-এতে দেশীয় প্রজাতির মাছের বংশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমার বাড়ির পাশের এ ডোবায় শ্রাবণের বৃষ্টিতে ঢল নামায় কিছু মাছ এসে জমেছে। তাই,উৎসুক লোকজন আনন্দের সাথে মাছ ধরতে এসেছে। কাউকে বাধা দেওয়া যাচ্ছে না।
এলাকার করিম মিয়া বলেন, গ্রামীণ এ ঐতিহ্য এখন আর চোখে পড়ে না। আগের দিনে আমরা বর্ষা মৌসুমে ওই স্থান হতে রুই, কাতলা, বোয়ালসহ কত জাতের মাছ আহরণ করেছি। সেই দৃশ্যপট হারিয়ে গেছে। কারণ এক সময় এদিকে মনু নদীর বড় বাক প্রবাহিত ছিল। বর্ষাকালে ঢল নামলে স্রোত প্রবাহিত হত। তখন উজান থেকে স্রোত ধারায় বড় ছোট কত জাতের মাছ এখানে এসে জমা হত।
হরিপাশা গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী মহন মিয়া জানান, এভাবে উৎসব মুখর পরিবেশে মাছ ধরে স্থানীয় লোকেরা হৈ-চৈ করে ব্যাপক আনন্দ পায়। তবে, জলবায়ু আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে পানির গতিধারা পরিবর্তন হয়ে যাওয়াতে মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
রাজনগর উপজেলার মৎস কর্মকর্তা ফণিভূষণ দেব জানান, মাছের অবাধ বিচরণ নেই। মহল বিশেষ খাল-বিল গুলো ইজারা নিয়ে মাছ আটক করে। শুকনা মৌসুমে ব্যাপক হারে মাছ ধরায় মাছের প্রজনন লোপ পেয়েছে। এই কারণে গ্রামীণ জনপদের ডোবা নালায় আর আগের মত মাছের উৎপাদন নেই। তাই গ্রাম বাংলার মাছ ধরার ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এশিয়াবিডি/শেখ/আ

আরও সংবাদ