সিএসএফ এর সহযোগিতায় নতুন জীবন ফিরে পেল তরূনী

সিএসএফ এর সহযোগিতায় নতুন জীবন ফিরে পেল তরূনী৭ বছরের প্রেমের সম্পর্ক হঠাৎ পারিবারিক কারণে ভেঙে যায়। তারপর শুরু মেয়েটিকে ব্যাক্তিগত ছবি দিয়ে ব্লেকমেইল করা। বলছিলাম কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার ২৫ বছর বয়সী এক তরুনীর কথা। যিনি টেকনাফ মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন (জিডি নং – ১৫২৪)।

তরুনী অভিযোগ করেন উনার ব্যাক্তিগত ছবি দিয়ে কে বা কারা গ্রাফিক্যাল ইডিট করে পর্নোগ্রাফি ইমেজ তৈরি করে ভাইরাল করে যাচ্ছিলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং হুয়াটসাপে। ভাইরালের এক পর্যায়ে সেই ইডিট করা ছবিগুলো চলে যায় ভুক্তভোগীর বিভিন্ন নিকট আত্মীয়দের কাছে। এক পর্যায়ে মেয়েটি মানসিক এবং সামাজিক চাপের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করার পথ বেছে নেয়। কারণ মেয়েটির ছবি ভাইরাল হওয়ায় মেয়েটি সামাজিকভাবে হ্যায়প্রতিপন্যের শিকার হয়।

মানসিকভাবে ভেঙে পড়া ভুক্তভোগী মেয়েটি হঠাৎ ফেসবুক স্ক্রল করতে গিয়ে বন্ধুদের সহায়তায় জানতে পারে বাংলাদেশ সাইবার অপরাধ তদন্ত ইউনিট “সাইবার সেফটি ফার্স্ট বাংলাদেশ” এর কথা। তারপর ভুক্তভুগির করা সেই টেকনাফ মডেল থানার অভিযোগ পত্র নিয়ে বাংলাদেশ সাইবার অপরাধ তদন্ত ইউনিট (সিএসএফ) এর কাছে জমা দেন।

সাইবার সেইফটি ফার্স্ট বাংলাদেশ টিমের সি.ই.ও এবং সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেটর কে.বি খান বিজয়ের নির্দেশে এবং ভুক্তভোগী তরুনীর অভিযোগপত্র অনুযায়ী শুরু হয় উক্ত অভিযোগের তদন্ত। পাশাপাশি মেয়েটিকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দেওয়া হয় তাদের টিম থেকে। সি.এস.এফ টিমের ২৪ ঘন্টার তদন্তে এবং ডিজিটাল ফরেন্সিক রিপোর্টে বেরিয়ে আসে অভিযোক্ত ব্যাক্তি অর্থাৎ মেয়েটির ব্যাক্তিগত ছবি যে ভাইরাল করেছিলো তার যাবতীয় সকল তথ্য।

তদন্ত রিপোর্টে জানা যায়, অভিযুক্ত ব্যাক্তিই ছিলো ভুক্তভোগীর সাবেক প্রেমিক। ৭ বছরের সম্পর্ক পারিবারিক সমস্যার কারণে ভেঙে যাওয়ায় অভিযুক্ত ব্যক্তি (সাবেক প্রেমিক) বেছে নেয় মেয়েটির ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল করার পথ এবং সে সব শিকার করে সি.এস.এফ টিমের কাছে।

সকল তথ্য প্রমান পাওয়ার পর এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী মেয়েটির কাছে ক্ষমা চাইতে এবং মুচলেকার মাধ্যমে বিষয়টা শেষ করতে ইচ্ছা প্রকাশ করে অভিযুক্ত ব্যাক্তি। বৃহস্পতিবার (০২ জুন) পুরো বিষয়টি সাইবার সেফটি ফার্স্ট বাংলাদেশ টিমের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেটর কে.বি খান বিজয়ের কাছে মুচলেকা এবং ভুক্তভোগীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে উক্ত সাইবার অপরাধটি সমঝোতার মাধ্যমে শেষ হয়।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী তরূনী সংবাদকর্মীদের জানান, সি.এস.এফ টিমের বিজয় স্যার আমাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন। আমি আসলে না বুঝেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এক পর্যায়ে লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেই। স্যার আমাকে মানসিকভাবে সাহস দেন তারপর আমার অভিযোগ আমলে নিয়ে অভিযুক্ত ব্যাক্তিকে খুজে বের করেন। আমি এখন শান্তি অনুভব করছি ছেলেটি আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। আমি বিষয়টা সম্পূর্ণ মুচলেকার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রেখেছি যেনো সে ভবিষ্যতেও এরকম আমার সাথে আর না করে। ধন্যবাদ বিজয় স্যার এবং উনার টিমকে আমি আশা করি সাইবার অপরাধের শিকার সকল ভুক্তভোগীদের পাশে উনারা এভাবেই সবসময় পাশে থাকবেন।

এদিকে সি.এস.এফ টিমের সি.ই.ও এবং সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেটর কে.বি খান বিজয় সাংবাদিকদের বলেন, ভুক্তভোগী সে যেই হোক সাইবার অপরাধের শিকার হলে দ্রুত ভয় না পেয়ে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ নিয়ে আমাদের কাছে নিকটস্থ থানায় অভিযোগপত্র দায়ের করে আমাদের দিন আমরা আমাদের টিম নিয়ে যতদ্রুত সম্ভব অভিযুক্ত ব্যাক্তিকে খুজে বের করবোই। ভুক্তভোগী অবশ্যই আইনগত সাহায্য পাবেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর সংবিধানে স্পষ্ট বলা আছে,
অনুমতি ব্যতীত পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ, ব্যবহার, ইত্যাদির দণ্ডঃ
(১) যদি কোনো ব্যক্তি আইনগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে অপর কোনো ব্যক্তির পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ, বিক্রয়, দখল, সরবরাহ বা ব্যবহার করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

(৩) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৭ (সাত) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

অপরাধী যেই হোক আইনের চোখে ফাকি দেওয়া অসম্ভব তাই নিজে এবং সবাই সতর্কতা অবলম্বন করে ডিজিটাল মাধ্যমে কাজ করবেন

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান
আরও সংবাদ