প্রচলিত ইসালে সাওয়াব মাহফিল নিয়ে কিছু কথা
মা-বাবাসহ সমস্ত মুমিন মুসলমানদের জন্য কিভাবে দোয়া করতে হবে, সেই সমস্ত দোয়া আল্লাহ তায়ালা নিজেই কুরআন শরীফে বর্ণনা করেছেন, যেমন
সূরা বনী ইসরাঈল ২৪ নম্বর আয়াত-
رَّبِّ ارۡحَمۡہُمَا کَمَا رَبَّیٰنِیۡ صَغِیۡرًا.
হে আমার প্রভু! আমার মা-বাবার প্রতি দয়া করো, যেমন তারা আমাকে ছোট থাকতে দয়া দিয়ে লালন পালন করেছেন।
সূরা ইব্রাহীমের ৪১ নম্বর আয়াত-
رَبَّنَا اغۡفِرۡ لِیۡ وَ لِوَالِدَیَّ وَ لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ یَوۡمَ یَقُوۡمُ الۡحِسَابُ.
হে আমাদের প্রভু! যেদিন হিসাব হবে সেদিন আমাকে, আমার মা-বাবাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করো।
সূরা নুহ ২৮ নম্বর আয়াত-
رَبِّ اغۡفِرۡ لِیۡ وَ لِوَالِدَیَّ وَ لِمَنۡ دَخَلَ بَیۡتِیَ مُؤۡمِنًا وَّ لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتِ ؕ وَ لَا تَزِدِ الظّٰلِمِیۡنَ اِلَّا تَبَارًا.
হে আমার প্রভু! আমাকে, আমার মা-বাবাকে, আমার ঘরে ঈমানের সাথে যে প্রবেশ করে তাকে এবং সব ঈমানদার পুরুষ ও নারীকে ক্ষমা করো, আর জালেমদের শুধু ধ্বংসই বাড়িয়ে দাও।
উপরে বর্ণিত আয়াতে কারীমাগুলোর সাধারণ অর্থ করলেই আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন যে, আল্লাহ তায়ালা আমাকে/আপনাকে বলছেন আমি/আপনি নিজে তাদের জন্য দোয়া করব/করবেন। অথচ আমরা নিজে একাজ না করে ইসালে সাওয়াব মাহফিল নাম দিয়ে কোথায় থেকে ফিতনাবাজ বক্তা নিয়ে আসি! যে কখনও আমার মা-বাবাকে চিনা দুরের কথা তাদের নামও শুনে নাই। আর আমি/আপনি নিজেও তাকে চিনিনা বরং কোন এক দালাল ধরে দাওয়াত দেই!
আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করবেন যিনি ইসালে সাওয়াব মাহফিল করাচ্ছেন তিনি কিন্তু একবারও কোন বক্তার দোয়ার মধ্যে শামিল হতে পারেন না! কারণ তিনি তখন অন্য বক্তাদের খেদমতে নিয়োজিত থাকেন। আবার দেখবেন মধ্যে রাতে মাহফিল শেষ হলে উনাকে এই দিনের ফজরের নামাজে মাসজিদে মিলে না! এইসব মিলিয়ে আপনারাই বলুন বর্তমানে ইসালে সাওয়াব মাহফিলের নামে যা হচ্ছে এসব থেকে আমাদের কি ফায়দা হচ্ছে?
হাঁ মানছি কাউকে দিয়ে দোয়া করানো বা কারো কাছে দোয়া চাওয়া জায়েজ আছে। কিন্তু উনারা কারা, এই সমস্ত ভন্ডরা? অবশ্যই না! বরং আল্লাহর মায়ার বান্দা যারা তাদের কাছে দোয়া চাইবেন বা তাদের দিয়ে করাবেন। কিন্তু মনে রাখবেন বিশেষ করে নিজের মা-বাবার জন্য নিজেই ক্ষমা প্রার্থনা করতে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা বার বার আমাদের শিক্ষামুলক নির্দেশ দিয়েছেন। আর এসব দোয়া কবুল হওয়ার প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি, যেহেতু আল্লাহ নিজেই এগুলো করার জন্য আমাদের বলে দিয়েছেন।
আর তাও মনে রাখবেন, আপনি যদি ভালো সন্তান হন তাহলে নিজের মা-বাবার জন্য চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবেন। আর মা-বাবাও এমন সন্তান রেখে যাওয়া উচিত যারা দোয়া করবে আপনার জন্য। কেননা হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-
إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ.(رواه مسلم)
যখন মানুষ মৃত্যুবরণ করে তখন তার সমস্ত আমাল বন্ধ হয়ে যায় তিন প্রকার আমাল ছাড়া। ১. সদাকাহ্ জারিয়াহ। ২. এমন ইলম যার দ্বারা উপকার হয় অথবা ৩. পুণ্যবান সন্তান যে তার জন্যে দোয়া করতে থাকে।(মুসলিম শরীফ)
সুতরাং আসুন আমরা নিজে আমাদের মা-বাবার জন্য চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। আর এইসব টাকা এভাবে খরচ না করে বরং তাদের কবরে নেকি যাবে কিয়ামত পর্যন্ত এরকম জনসেবা মুলক কাজ করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সঠিক জানার, বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন। (আমিন)
কথাগুলো আমার নিজের একান্ত মনের কথা। কারো ভালো লাগবে কারো খারাপ লাগবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু দয়া করে কমেন্টসে বা এমনিতেই কোন গালাগালি করবেন না
লেখক: ইমাম ও খতিব ওল্ডহাম জামে-মসজিদ, যুক্তরাজ্য
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/সাইফ