মেয়ের বাড়িতে ইফতারি পাঠানো, সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চাই

মেয়ের বাড়িতে ইফতারি পাঠানো, সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চাই
প্রতি বছর রমজান মাস এলেই বৃহত্তর সিলেট বিভাগ জুড়ে একটি সামাজিক প্রথা মাথা নেড়ে ওঠে। এই অঞ্চলের ধনী থেকে গরীব, সচেতন থেকে অসচেতন, প্রায় সব মহলেই প্রথাটির প্রচলন পরিলক্ষিত হয়। প্রথাটি হলো মেয়ের বাড়িতে ইফতারি পাঠানো! যুগ যুগ ধরে চলে আসা সিলেটি এই সামাজিক প্রথার ধর্মীয় কোনো স্বীকৃতি নেই। অথচ এই অঞ্চলে রমজান এলেই বাবা-মাকে মেয়ের বাড়িতে ইফতারি পাঠানোর জন্য ভাবতে হয়। নতুন বিয়ে হলে তো কমপক্ষে প্রায় ৩ বার ইফতারি পাঠাতে হয়। মাসের প্রথমদিকে, মাঝে আর শেষের দিকে একবার।

অনেকের আর্থিক দুরবস্থা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র মেয়ের শ্বশুর বাড়ির লোকজন, আত্মীয় স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর নানা ধরণের অপমানসূচক কথাবার্তা মেয়েকে যাতে শুনতে না হয়, সেজন্য হাজারো দুঃখ-কষ্ট, ত্যাগ স্বীকার করে, প্রয়োজনে ধার কিংবা সুদে ঋণ নিয়ে মেয়ের বাড়িতে ইফতারি পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন। এরকম ঘটনা পুরো সিলেট জুড়ে অহরহ ঘটছে। অর্থাৎ এই প্রথার মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই অঞ্চলের নিম্নবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। অনেকে আবার চিন্তায়, হা হুতাশে অসুস্থও হয়ে পড়েন। এদিকে শুধু ইফতারি পাঠালেই চলবে না, অনেক ঘটা করে, সবাইকে জানিয়ে, ধুমধাম করে পুরো এলাকায় যাতে বিলিয়ে দেওয়া যায় এমন বৃহৎ পরিসরে পাঠাতে হয়। অন্যথায় শ্বশুর বাড়ির লোকজনের নানাধরনের কথাবার্তা শুনতে হয় ঘরের বউকে।

এই অসুস্থ সামাজিক প্রথা কেবল সিলেট বিভাগেই বিদ্যমান। দেশের অন্য কোনো বিভাগে এর প্রচলন নেই। এমনকি অন্যান্য বিভাগের মানুষ সিলেটের এই প্রথা দেখে রীতিমত অবাক হন।
ইসলাম ধর্মে অন্যকে ইফতার করানো অত্যন্ত সোয়াবের একটি কাজ। তবে জোর করে কারো কাছ থেকে ইফতারি আদায় করায় সোয়াব নয় বরং গুণাহ হয়। যা জুলুমের সমপর্যায়। এ বিষয়ে অনেক ইসলামী স্কলারগণ এটি যে একটি গুণাহর কাজ তা স্পষ্ট জানিয়েছেন। যা গুগল, ইউটিউবে সার্চ করলে পাওয়া যায়।

সিলেটে চলমান এই অসুস্থ সংস্কৃতি বন্ধে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা। তরুণ প্রজন্ম সচেতন হলেই অদূর ভবিষ্যতে এই অসুস্থ সংস্কৃতি চর্চা থেকে এই সমাজকে রক্ষা করা সম্ভব। তবে আশার বিষয় হলো, সাম্প্রতিক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই অঞ্চলের অনেক তরুণ, যুবক ও সচেতন ব্যক্তিবর্গ এই অসুস্থ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। আশা করা যায় খুব শীঘ্রই সিলেটের মানুষ এ প্রথা থেকে মুক্তি পাবে। আমি সিলেটের সকল সচেতন নাগরিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আপনারা আপনাদের অবস্থান থেকে এই প্রথার বিরুদ্ধে অবস্থান নিন, নিজে সচেতন হোন, অন্যকে সচেতন করুন, ভবিষ্যত প্রজন্মকে সুন্দর একটি সমাজ ব্যবস্থা উপহার দিন।

আরও সংবাদ