সহিংসতার সারসংক্ষেপ বড়ই অগণতান্ত্রিক

ভারতের নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন ২০১৯ নিয়ে বাংলাদেশ সহ বহিবিশ্ব বেশ উত্তাল। অদ্য বিতর্কিত এই নাগরিকত্ব সংশো’ধনী আইনের (সি’এ’এ) বিরোধী ও সমর্থকদে’র মধ্যে সং’ঘর্ষ শুরু হয়। তার পর থেকেই টানা কয়েকদিন ধরে সহিংসতায় উত্তাল হয়ে উঠেছে উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন স্থান। বিক্ষোভ-সংঘাতে এখন পর্যন্ত অনেক প্রানহানী হয়েছে। কেন এমন উত্তাল পরিস্থির জন্ম নিল তার সারসংক্ষেপ বড়ই অগনতান্ত্রিক।

কাহানী -ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বরে ভারতের সংসদে পাস হওয়া একটি আইন। এ বিলের উদ্দেশ্য ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন। এই বিলের মাধ্যমে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে আগত নিপীড়িত সংখ্যালঘু হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী অবৈধ অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরকিত্ব পাওয়ার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু এই বিলে মুসলিমদের জন্য এ-ধরনের কোনো সুযোগের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ভারতীয় আইনের আধারে প্রথমবারের মত ধর্মীয় পরিচয়কে নাগরিকত্ব লাভের শর্ত হিসাবে যুক্ত করা হয়েছে।
পাঠক, ভারত বিশ্বের বৃহত্তম একটি গণতান্ত্রিক দেশ। নরেন্দ্র মোদি সরকার ও তার সংশ্লিষ্টদের এমন আচরণ অগণতান্ত্রিক। তারা এমন একটি পদক্ষেপ নিয়েছে যা ভারতসহ বহি;বিশ্বে উদ্ভেগ উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে। বিতর্কিত এই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিল পাশের মাধ্যমে এখানে মানুষের অধিকারকে খর্ব করা হয়েছে।এখানে বৈষম্য ও র্মান্ধতার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো হয়েছে । অসম্মান করা হয়েছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও বিধিনিষেদের প্রতি। লঙ্ঘিত হয়েছে ভারতীয় সংবিধান, আঘাত আনা হয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে সর্বপোরি মানব ধর্মেও।

পাঠক, লন্ডলে আমি যে হাসপাতালে কাজ করি সেখানে আমার এক হিন্দু কলিগ ছিল, নাম ****দেব রামায়ণ। আমরা এক সাথে অনেক দিন কাজ করেছি। তার কাছ থেকে ভারতবর্ষের অনেক ইতিহাস জেনেছি, যা হয়ত নিজে পড়ে জানার চেষ্টা করতাম না। তার কথা বার্তায় একটু আধ্যাত্মিকতা ছিল। রামায়নের বক্তব্যে জাতি ধর্ম ও বর্ণকে ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করলেও নিজ ধর্ম হিন্দুজম নিয়ে সে কোন আপোষ করতে ছিল নারাজ। মানবধর্ম নিয়ে সে অনেক দামি দামি কথা বললেও লক্ষ্য করেছি সে কিছুটা undemocratic, নিজের স্বার্থ সংশ্লিষ্টতায় একটু স্পর্শ হলেই নীতি থেকে সরে পড়ে অনেকটা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মত।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লন্ডনে এসে বৃটিশ পাইর্লেমেন্টে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তা আমি সম্পুন্যটাই শুনেছি। তিনির আধ্যাত্মিক বক্তব্যে বৃটিশ পার্লামেন্ট নিস্তব্দ হয়ে গিয়েছিল। আমি গর্ববোধ করেছিলাম এশিয়ার একজন প্রধানমন্ত্রী এসে বৃটিশ পার্লামেন্টে বিশ্বশান্তির বাণী শুনিয়ে যাচ্ছেন-সবার উপরে মানব সত্য। কিন্তু তিনি যে কতটা স্ববিরোধী তা সারা বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছেন ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বরে ভারতের সংসদে তার সরকারের নেতৃত্বে পাস হওয়া আইনে। এ বিলের উদ্দেশ্য ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন। এই বিলের মাধ্যমে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে আগত নিপীড়িত সংখ্যালঘু হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী অবৈধ অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরকিত্ব পাওয়ার সুযোগ হয়েছে। এই বিলে মুসলিমদের ধর্মের লোকদের জন্য এ জাতীয় কোনো সুযোগের ব্যবস্থা রাখা হয়নি which is discrimination, ভারতীয় আইনের আধারে প্রথমবারের মত ধর্মীয় পরিচয়কে নাগরিকত্ব লাভের শর্ত হিসাবে যুক্ত করা হয়েছে।
পাঠক, একটু পিছনে ফিরে যেতে চাই। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের ইতিহাস সূচিত হয়। ব্রিটিশ কমনওয়েলথের অন্তর্গত একটি স্বাধীন অধিরাজ্য রূপে ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট ভারত আত্মপ্রকাশ করেছিল। ১৯৫০ সালে প্রজাতন্ত্র ঘোষিত হওয়ার পূর্বাবধি ষষ্ঠ জর্জ (অ্যালবার্ট ফ্রেডেরিক আর্থার জর্জ) ছিলেন এই দেশের রাজা। একই সঙ্গে ভারত বিভাগের ফলে ব্রিটিশ ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাংশ নিয়ে পৃথক পাকিস্তান অধিরাজ্য স্থাপিত হয়। দেশভাগের ফলে ভারত ও পাকিস্তানের প্রায় ১ কোটি মানুষকে দেশান্তরী হতে হয় এবং প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটে। প্রথমে লর্ড লুই মাউন্টব্যাটেন ও পরে চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী ভারতের গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন। জওহরলাল নেহেরু হন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল হন ভারতের প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারত একটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয় এবং একটি নতুন সংবিধান প্রবর্তিত হয়। এই সংবিধান অনুযায়ী ভারতে একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার পর থেকে ভারতের ব্যাপক অগ্রগতি ঘটে এবং অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়। ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ। বর্তমানে ভারতে যে সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত রয়েছে তাকে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা মনে করা হয়।

আলোচিত এই বিল পাশের পর ভারতজুড়ে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। এই বিল পাসের ফলে আসাম এবং উত্তর পূর্ব রাজ্যগুলোতে অমুসলিমরা নাগরিকত্ব পাওয়ার কারণে বাঙালি অধ্যুষিত হয়ে পরবে এবং স্থানীয় সংস্কৃতি হারিয়ে যাবে- এই আশঙ্কায় আসাম এবং অন্যান্য উত্তর পূর্ব রাজ্যে বিক্ষোভ শুরু হয়। এই বিলের মাধ্যমে মুসলিমদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে।যা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। তাই মোদি সরকারের উচিত দেশের প্রচলিত সংবিধানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার বিধান মুসলিম অভিবাসী এবং রাজনৈতিক উদ্বাস্তুদের জন্যও রাখা।

প্রধানমন্ত্রী মোদির রাজনৈতিক জীবনে এনিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো সাম্প্রদায়িক সহিংসতা’র ঘটনা ঘটল। এর আগে ২০০২ সালে মোদি যখন গুজ রাটের মুখ্য মন্ত্রী ছিলেন সে সময় তিন দিন ধরে দাঙ্গা পরিস্থিতিতে এক হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। নিহতদের অধিকাংশই ছিল মুসলিম। কিন্তু আদালত থেকে নিয়োগকৃত একটি প্যানেল সহিংসতায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ থেকে মোদিকে নিস্তার দিয়েছিল।

গত সপ্তাহে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরোধী ও সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। তারপর থেকেই টানা কয়েকদিন ধরে সহিংসতা’য় উত্তাল হয়ে উঠে’ছে উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন স্থান। বিক্ষোভ-সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৩৪ জনে’র মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও দুই শতা’ধিক মানুষ। দিল্লিতে কমপক্ষে তিনটি মসজিদে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, বহু বাড়ি-ঘর এবং দোকান-পাটে হামলা ও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে।
সহিংস’তা বন্ধের চেষ্টা না করে উন্মত্ত জনতার সঙ্গে যোগ দিয়ে জয় শ্রী রাম বলে স্লোগান দিচ্ছিল পুলিশ। একই সঙ্গে এলো’পাতাড়ি গুলি চালিয়েছে তারা।পুলিশের বিরুদ্ধে সহিংসতার সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিবৃতি দিয়ে বলেন, প্রয়োজনে রাজ্যের ক্ষমতা হ্রাস করে এই ক্যাব বাস্তবায়ন করা হবে।

পাঠক, দিল্লিজুড়ে লাগাতার জ্বলতে থাকা হিংসা’র আগুন রাষ্ট্রীয় মদতপুষ্ট। দিল্লি পুলিশ বিনা কারণে ভারতীয়দের সম্মানহানী করছে পরোক্ষে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকাই এখানে কাজ করছে। অমিত শাহ’র নেতৃত্বে পুলিশ ভারতীয়দের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। মসজিদে ঢুকে নামাজরত অবস্থায় ইমামকে গুলি, পোড়ানো হলো স্কুল-মাদ্রা’সা , দিল্লির মুস্তাফা’বাদের ব্রিজপুরি এলা’কায় মসজিদ থেকে শুরু করে মাদ্রাসা, স্কুল ও বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে। এ কেমন গনতন্ত্র? এ কেমন ধর্মনিরপেক্ষতা?

পাঠক? আশ্চর্যের বিষয় গত কয়েকদিন ধরে এই দাঙ্গা পরিস্থিতি চললেও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অবশেষে তিনি এ বিষয়ে বিবৃতি’তে দিয়ে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। লোকজনকে শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব’বোধ বজায় রাখার আহ্বান জানান। Unfortunately নরেন্দ্র মোদি সরকার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন।

ভারত সফরে থাকাকালীন দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি দেশে ফিরে যেতেই গোটা ঘটনায় ভারত সরকারের ভূমিকা নিয়ে সরব হলো আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক মার্কিন কমিশন ইউএসসিআইআরএফ। তাদের অভিযোগ, বেছে বেছে মুসলিমদের উপর হামলা চালানো হচ্ছে। অথচ সব দেখেশুনেও নীরব আছে মোদীর সরকার। তারা বলেছে, নৃশংস ও লাগামছাড়া সহিংসতা রুখে সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ তারা।

পাঠক ,ধর্ম মানুষকে শাণিত করে, মার্জিত করে। যে কোন ধর্ম শিক্ষাই মানুষ বিনয়ী করে , মানুষ পরমতসহিষ্ণু হয়, সু-শৃঙ্খল হয়। পরিবার সমাজ ও দেশের প্রতি মানুষের দায়বদ্ধতা তৈরি হয়। ইসলাম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ কোন ধর্মের শিক্ষায়ই নৈতিকতার বিরুদ্ধে নয়। ভারতের মোদি সরকার ও সংশ্লিষ্টদের ধর্মান্ধ বৈষম্য ও বিভাজন নীতি সারা বিশ্বকে উদ্ভেগ উৎকণ্ঠায় আবর্তিত করেছে। ভারতে সরকার পদে অধিষ্ঠিত বর্তমান রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তাদের পুর্বোক্ত নির্বাচনী ইসতেহারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, প্রতিবেশী দেশগুলোর নিপীড়িত হিন্দু সংখ্যালঘুদের তারা নাগরিকত্ব দেবে। সংশোধিত বিল অনুযায়ী, এসব ধর্মের লোকজনকে অবশ্যই ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ এর আগে ভারতে প্রবেশ করতে হবে এবং সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে “ধর্মীয় নিপীড়নের” শিকার অথবা ধর্মীয় নিপীড়নের ভীতি প্রদর্শন করলে তবেই ভারতের নাগরিকত্ব অর্জন করতে পারবেন। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য ১২ মাস টানা ভারতে থাকার নিয়মের সঙ্গে বিগত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর ভারতবাস জরুরি ছিল। নতুন সংশোধনীতে দ্বিতীয় অংশে পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে। উপরিউক্ত দেশগুলি থেকে আনা নির্দিষ্ট ৬টি ধর্মাবলম্বীদের জন্য ১১ বছর সময়কালটিকে নামিয়ে আনা হয়েছে ৫ বছরে।সংশোধনী এই বিল পাসের পরপরই সমালোচনা শুরু হয়।

ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিককে নিরাপত্তা দেয়াই দায়িত্বশীল সরকারের অন্যতম প্রধান কর্তব্য। তাই মুসলিমদের এবং যাঁরা হামলার শিকার হয়েছেন তাদের সকলের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ভারত সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

পাঠক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত সাহা পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলেছেন ধর্মের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ ভাগ হয়েছে। ধর্মের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ ভাগ হয় নাই। অমিত সাহা আপনি ভারতবর্ষের সংবিধান পড়েন নাই ,পড়েন সংবিধানে কি বলা হয়েছে ? সংবিধানে বলা হয়েছে সেক্যুলার (secular) –ভারতবর্ষের সকল মানুষ ধর্মনিরপেক্ষ।
আপনি সত্যিই ধর্মান্ধ, আপনি মানবধর্মে বিশ্বাসী না। ভারত বর্ষের স্বাধীনতা সবাইকে সমান অধিকার এনে দিয়েছে। আপনার কপালে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে লিখা নেই আপনি racist, আপনার আচরণই তা বিশ্ব বাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে। বিশ্বের এত বড় বৃহত্তম একটি গণতান্ত্রিক দেশে এত অগণতান্ত্রিক ধর্মান্ধ কাজ কেমন করে হচ্ছে তা ভাবার বিষয়।

আমরা বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে বছরের পর বছর বসবাস করছি৷ বাংলাদেশ ভারতের চাইতে অনেক বেশি অসাম্প্রদায়িক৷ এখানে হিন্দুরা শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মীয় উৎসব পালন করতে পারে যা ভারতের মুসলিমরা তা করতে পারে না৷ বাংলাদেশে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে সম্প্রীতি ছিল এবং আছে, ভারত বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নিতে পারে৷

পাঠক, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে সমাজ এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তর ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে ৷ দেশের প্রতিটি মানুষকে যার যার অবস্থান থেকে সকল ধর্মের সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করলে অসাম্প্রদায়িক কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব৷ ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দেয়া এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার ধর্মনিরপেক্ষতার পথে প্রধান বাধা৷ ধর্মনিরপেক্ষতার প্রধান শর্ত হলো, রাষ্ট্রনীতি এবং রাষ্ট্রাচারে কোনো ধর্মকে না রাখা ৷

ধর্মকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে রাখা এবং এই ব্যক্তিগত পর্যায়ে ধর্ম পালনে সব ধর্মের অনুসারীদের সমান অধিকার নিশ্চিত করা৷ আর এটা করতে হলে সাম্প্রদায়িকতা দূর করতে হবে ৷ ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় রাষ্ট্র পরিরচালনার ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হয়েছে। সংবিধানে ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র Secular State হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। কোনো বিশেষ ধর্মকে ভারতের রাষ্ট্রীয়ধর্ম State Religion হিসেবে স্বীকার করা হয়নি। সংবিধান অনুযায়ী জাতি, ধর্ম ও ভাষার পার্থক্যের জন্য রাষ্ট্র কোনো বৈষম্যমূলক আচরণ করবে না। প্রত্যেক নাগরিকই স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম আচরণ করতে পারবে।

পাঠক, অগোচালো আলোচনার ইতিবৃত্তি ঘটাতে হবে। সমস্যা সম্ভাবনা ও এর উত্তরন নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই গুরুত্বপুন্য অভিমত ব্যক্ত করেন। আজ আমার এক ফেইসবুক ফ্রেন্ড মোতাহার হোসেন তিনির টাইম লাইনে দিল্লী সমস্যা নিয়ে স্টেটাস দিয়ে নিজের অভিমত তুলে ধরেছেন, লিখেছেন – “যেকোন দেশের উগ্রবাদী রাজনীতিবীদরা মানবজাতির উদ্ধেগের কারন তাই সেটা আর আভ্যন্তরীণ থাকে না, আন্তর্জাতিক হয়ে যায়। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের দিল্লী সমস্যা incredibly আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সকলের দৃস্টি এড়াতে পারেনি।

আমাদের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা লিখেছেন- “হিন্দু আর মুসলিম মোরা দুই সহোদর ভাই। এক বৃন্তে দু’টি কুসুম এক ভারতে ঠাঁই”।
লিখেছেন- হিন্দু-মুসলিম দুটি ভাই ভারতের দুই আঁখি তারা এক বাগানে দুটি তরু দেবদারু আর কদম চারা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রি নরেন্দ মোদি, আপনি বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী। আপনি ও আপনার সরকারের নেতৃত্বে ভারতবর্ষে discrimination হঊক তা ভারতবর্ষ তথা বহি:বিশ্ব আসা করে না।

লেখক: নজরুল ইসলাম, ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট।

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/সাইফ

আরও সংবাদ