ভোটের প্রয়োজনে রাজনগর আসা ছেড়ে দিন!

সব সময় একটাই চিন্তা। কিভাবে রাজনগর বাসীর মাথায় কাঠাল ভেঙে খাওয়া যায়? কেন হবে বারবার এরকম? এতো অবহেলা কিসের জন্য? পরিষ্কার করুন আমাদের কাছে; নতুবা সময়ের প্রয়োজনে রাজনগরে আসা যাওয়া ছেড়েদেন। ভোটের প্রয়োজনে কেউ আসার প্রয়োজন নেই।

জাতীয় নির্বাচন, ইউনিয়ন নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন সবই তো চলে গেলো। কি পেলাম আমরা? নির্বাচনের পর রাস্তায় পরে থাকা কিছু পোস্টার ছাড়া তো আর কিছুই দিলেন না।

আর জনপ্রতিনিধিরা যদি পদের জন্য মরিয়া হয়ে যান। গণমানুষের কথা না বলে দলের কথা বলতে থাকেন, তাইলে এটাও আমাদের দূর্ভাগ্য। একসময় জনপ্রতিনিধিরা হাইকমান্ডে গিয়ে বলতেন নেতা/নেত্রী আমার উপজেলার এটা নেই সেটা নেই। আপনি যদি না দেন আমি আর আমার এলাকায় যাবো না। গেলেও আর আপনার পাশে আসবো না। এমন নেতা এখন আর নেই। এখন হাইকমান্ডে যাওয়া হয় পদের জন্য। এলাকার উন্নয়নের জন্য নয়।

নির্বাচনের আগে সবাই আসলেন উন্নয়নের বুলি ফাটালেন। কই উন্নয়ন তো আর দেখিনা? হাসপাতাল, উপজেলা পরিষদ, রাস্তাঘাট, ব্রীজ সবই তো আগের মতো।
এই উপজেলার মানুষদের কাছে আসা যাওয়া কি শুধু ভোটের জন্য?

একটি মানসম্মত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেই। যেটা আছে সেটার ডাক্তার নেই। ডাক্তার থাকলে নার্স নেই। নার্স থাকলে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম নেই। এখন আবার গর্ব করে বলতে হয় বর্তমান সময়ে পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল ও ভয়ানক রোগ করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা আমাদের রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হবে। আমরা রাজনগর বাসী জাতি হিসেবে এটা নিয়ে গর্বিত। যে হাসপাতালে হাত কেটে গেলে সেলাই দুইটা দিলে ৩ নাম্বারটা ছিড়ে যায় সেখানে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা হবে?

রাজনগরে সড়কের কথা আর কি বলবো? রাজনগর-বালাগঞ্জ সড়ক দেখলে মনে হয় প্রতিদিন এই সড়কে ধান চাষ হয়। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কে গাড়ি নিয়ে প্রবেশ যায় না। উত্তরভাগ, ফতেপুর, পাচগাও ইউনিয়নের অনেক সড়ক এখনো উন্নয়নের ছোয়া পায়নি। রাজনগর বাজারসহ অনেক বাজারে বৃষ্টির দিনে হাটা যায় না। পানি জমে থাকে হাটু পর্যন্ত।  কয়েক বছর আগে গ্যাস দিবেন বলেছিলেন। রাস্তা খোদাই করে লাইন টানলেন এখন পর্যন্ত গ্যাসের খুজ নেই।

বর্ষায় তারাপাশার মনুপাড়ের মানুষদের দেখলে চোখের পানি নদীতে পড়ে। কাওয়াদিঘী হাওরের দিকে তাকালে বুক ফাটে। তবুও উন্নয়ন কোন ছোয়া নেই।

রাজনগরের উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখায় অনেক জনকে দেখলাম জাতীয় পুরুষ্কার পেয়েছেন। এসব উন্নয়ন যায় কই? শুনেছি দেশের নাম করা অর্থনীতিবিদ নাকি আমাদের সন্তান। কই রাজনগর তো সেই আগের মতো। দিন শেষে তো আমাদের কাছে খাম্বা ছাড়া আর কিছুই থাকেনা। ক’দিন পরপর মহিলা কলেজে সংবর্ধনা আর সরকারি কলেজে (ডিগ্রী কলেজ) সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াতো কিছুই চোখে পড়েনা।

আরও শুনলাম বর্তমান সরকার মিডিয়ার জন্য অনেক কিছু বরাদ্দ রেখেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে
এখনো রাজনগরের একটি স্থায়ী প্রেসক্লাব ভবন নেই। ভাড়াটিয়া একটি বিল্ডিংয়ে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ অংশ “প্রেসক্লাব” তার গতিতে চলছে। স্বার্থের বেড়াজালে সবাই নিজেদের প্রচারের জন্য এই প্রেসক্লাবে আসে।তবুও এই উপজেলার সাংবাদিকরা সরকারের সব উন্নয়ন, অনুন্নয়নের গল্প লিখে আসছে। তুলে ধরছে পাহাড়, সমতল ও হাওরের রাজ্য রাজনগরের গল্প। উপজেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি, রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক সব কিছু লিপিবদ্ধ হচ্ছে পত্রিকার পাতায়।

দেশের গুরুত্বপূর্ণ সকল কর্মসূচি এবং সকল নির্বাচনে রাজনগরের মানুষের অবদান কি ভুলতে পারবেন?

শহর বাচাতে গিয়ে বন্যার সময়েও রাজনগরে মনু নদের বাধে কি করেছিলেন? সেটা উপজেলাবাসী ভুলেনি। উন্নয়ন করবেন বলে কেউ রুখে দাড়ায় নি।

সময় এসেছে সোচ্চার হওয়ার। আজ পর্যন্ত মনুনদ খনন হয়নি। হাওর পাড়ের মানুষের জীবনমান বদলে নি, চা শ্রমিকদের গল্প কেউ কানে নেয় নি, রাজনগর পৌরসভা হবে বলেছিলেন সেই গল্প হারিয়ে গেছে। কলেজ পয়েন্ট এসে গ্যাস নিভে গেছে। রাস্তার বেহাল দশা, বালাগঞ্জ কুশিয়ারা নদীর উপর সেতু সময়ের দাবী। সবকিছু মিলিয়ে অন্যসকল উপজেলার মতো রাজনগরকে সমৃদ্ধশালী উপজেলা তৈরী করে দিতে হবে। নতুবা সময়ের প্রয়োজনে রাজনগর বাসী এক কাতারে বাধ্য থাকবে।

প্রবাসি লেখক ও সাংবাদিক

এশিয়াবিডি/মুবিন/সাইফ

আরও সংবাদ