সিলেটের নিপার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ প্রবাসী নাজমুলের
সিলেটে মেডিকেল ছাত্রী নিপার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন পোল্যান্ড প্রবাসী বন্ধু নাজমুল ইসলাম। বন্ধুত্বের সম্পর্কে জড়িয়ে তার কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই প্রবাসী। দেশে আসার পর তাকে শায়েস্তা করতে হামলাও করা হয়। এসব ঘটনা জানিয়ে তিনি নিপাসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। প্রতারণা, টাকা আত্মসাৎ ও প্রাণে হত্যার হুমকির অভিযোগে করা মামলাটি পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পোল্যান্ডে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া নাজমুলের বন্ধু হচ্ছে সিলেট মেডিকেল কলেজছাত্রী নিপা ।
সিলেট সিটি করপোশেনের ১৮নং ওয়ার্ডের মীরাবাজার, আগপাড়া, মৌসুমী-১০৮ নম্বর বাসিন্দা মৃত আব্দুস শহীদের ছেলে নাজমুল। এজাহারে নাজমুল উল্লেখ করেছেন- সিলেট নগরীর ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই রোড আম্বরখানার রায় হোসাইন আবাসিক এলাকার সহিদা ভিলা ৫৫ নম্বর বাসার বাসিন্দা মৃত নুরুল ইসলামের মেয়ে নাজরিন আক্তার নিপা। তিনি সিলেটের উইমেন্স মেডিকেল কলেজের ছাত্রী। ওই মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের ৭০৩ নং রোমে থেকে লেখাপড়া করছেন। নিপার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ২০১৭ সালে পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয় নাজমুলের। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে নিপার বান্ধবী নগরীর লোহারপাড়া হাওয়ারুন মঞ্জিল ই-৩৯ এর বাসিন্দা মনসুর চৌধুরীর মেয়ে ও উইমেন্স মেডিকেল কলেজের ছাত্রী ফাহমিদা ইয়াসমিন চৌধুরী অয়ন ও নিপার বোন নাসরিন আক্তার নিলা, তার মা আলিয়া বেগম ও মামা সালাউদ্দিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
এক পর্যায়ে নিপার মায়ের কোনো ছেলে সন্তান না থাকায় ধর্মের ছেলে বানায় এবং নিজ ছেলের মতো আচরণ করতে থাকেন। আর নিপার বড় বোন ছোট ভাইয়ের মতো আচরণ করেন। ফলে তাদের মাঝে পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এতে করে নিপার প্রতি আস্থা-বিশ্বাস ও আন্তরিকতার মাত্রা বেড়ে যায় নাজমুলের। আর তাদের দুই পরিবারের সদস্যদের মাঝেও গড়ে উঠে গভীর সম্পর্ক। ফলে নিপা নাজমুলের কাছে তার পারিবারিক অসচ্ছলতা ও আর্থিক দুরবস্থার কথা তুলে ধরেন এবং বলেন- টাকার অভাবে তার ছোট বোনকে মেডিকেলে ভর্তি করতে পারছে না। এজন্য বড় বোনেরও বিয়ে দেয়া যাচ্ছে না। এজাহারে নাজমুল জানান- মানবিক দিক বিবেচনা করে নিপার পরিবারকে সাহায্যের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর থেকে পোল্যান্ড হতে নিপার কাছে টাকা পাঠানো শুরু করেন। ওই প্রবাসীর পাঠানো টাকা দিয়ে নিপা মেডিকেলে পড়াশোনা করতে থাকে ও তার ছোট বোন মেডিকেলে ভর্তি হয়। আর বড় বোনের বিয়েরও খরচ দেন নাজমুল। এসব টাকা ব্যাংক মারফত নিপা, তার বোন, মামা ও মায়ের কাছে প্রেরণ করা হয়।
সব মিলিয়ে তিনি ৫ লাখ টাকা প্রেরণ করেন। পরবর্তী সময়ে নাজমুলের কাছে নিপা জানায়, তার ছোট বোন নাছিমুন নিতাকে ডেন্টাল মেডিকেলে ভর্তি করানোর জন্য ৩ লাখ টাকা বিশেষ প্রয়োজন। তাই ওই প্রবাসী তার বন্ধু সাহেদ আহমদের মাধ্যমে নিপার হাতে নগদ ৩ লাখ টাকা পাঠান। তা ছাড়া নিপার মা আলেয়া বেগম এর কাছে বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা প্রেরণ করেন। আর পোল্যান্ড প্রবাসী নাজমুলের মা ও ভাইদের কাছ থেকেও নিপার পরিবার বিভিন্ন সময় আরো লক্ষাধিক টাকা নেয়। এদিকে- গত ২৬শে জুলাই নাজমুল দেশে আসেন। তিনি নিপার বাসায় দেখা করতে গেলে তার সঙ্গে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করে। এমনকি তাকে অচেনার ভান করে পরিবারের লোকজন। বিষয়টি নাজমুলকে অবাক করে তুলে। এতে নাজমুল বুঝতে পারেন নিপা, নিলা, নিপার মা ও মামা এবং বান্ধবী অয়ন মিলে টাকা আত্মসাতের জন্য তার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। বিষয়টি সমাধানের জন্য নিপার মামাকে বলা হলে, তিনি পাওনা টাকা অতিসত্বর পরিশোধের জন্য বলেন। পরে তিনি তা সমাধান করেননি। নাজমুল জানান- গত ৫ই আগস্ট নিপা-অয়ন ফোন করে নাজমুলকে বলে তারা তার সঙ্গে কথা বলতে চায়।
তাদের কথামতো নাজমুল গাড়ি নিয়ে সেখানে গেলে তারা গাড়িতে উঠে বলে জিন্দাবাজারের সিটি সেন্টারে স্পাইসি রেস্টুরেন্টে যাওয়ার জন্য। তাদের কথামতো তিনি সেখানে গিয়ে গাড়ি পার্কিং করার সময় নিপা ও অয়ন ‘বাঁচাও’ বলে চিৎকার দেয় এবং পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক তাদের রাখা কয়েক ব্যক্তি তাকে ঘিরে ফেলে হত্যার চেষ্টা করে। এ সময় মার্কেটের সিকিউরিটিরা বিষয়টি বুঝতে পেরে তাকে উদ্ধার করেন। আর নিপা-অয়ন ওই সময় পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে মেডিকেল শিক্ষার্থী নিপা ও তার বোন এবং মায়ের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন ধরেনি। তবে নিপার মামা মো. সালাউদ্দিন জানিয়েছেন- তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন। তবে নাজমুল দেশে আসার পর নিপার বিষয়ে আলাপ করার জন্য মীরাবাজারের হোটেল সুপ্রিমে যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে নাজমুল আসেননি বলে জানান তিনি। নাজমুলের পক্ষের আইনজীবী মো. মুহিবুর রহমান জানান, মেডিকেল শিক্ষার্থী ও পরিবারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করলে আদালত মামলাটি গ্রহণ করে। তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।